পোলারিটি কাকে বলে?
 
                        পোলারিটি হলো এমন একটি রাসায়নিক ধর্ম যা কোনো যৌগ বা অণুর মধ্যে ধনাত্মক (positive) ও ঋণাত্মক (negative) প্রান্তের উপস্থিতি নির্দেশ করে। অর্থাৎ, যখন দুটি পরমাণুর মধ্যে ইলেকট্রনের অসম ভাগাভাগির ফলে এক প্রান্তে আংশিক ধনাত্মক চার্জ (δ+) এবং অপর প্রান্তে আংশিক ঋণাত্মক চার্জ (δ–) তৈরি হয়, তখন সেই অণুটি পোলার বা মেরুকৃত (polar) বলে।
এই বৈশিষ্ট্যের ফলে অণুর বিভিন্ন ভৌত ও রাসায়নিক ধর্ম যেমন দ্রাব্যতা, গলনাঙ্ক, স্ফুটনাঙ্ক ও বিক্রিয়াশীলতা প্রভাবিত হয়। পোলারিটি মূলত ইলেকট্রোনেগেটিভিটির পার্থক্য এবং অণুর জ্যামিতি (molecular geometry) দ্বারা নির্ধারিত হয়।
এখন বিস্তারিতভাবে দেখা যাক—
 পোলারিটির উৎপত্তি:
যখন দুটি ভিন্ন ইলেকট্রোনেগেটিভিটির পরমাণু যুক্ত হয়, ইলেকট্রনগুলি বেশি ইলেকট্রোনেগেটিভ পরমাণুর দিকে টানে। ফলে এক প্রান্তে আংশিক ঋণাত্মক (δ–) এবং অপর প্রান্তে আংশিক ধনাত্মক (δ+) চার্জ তৈরি হয়। এই অসম চার্জ বণ্টনই পোলারিটি তৈরি করে।
উদাহরণস্বরূপ:
HCl অণুতে Cl এর ইলেকট্রোনেগেটিভিটি বেশি হওয়ায় ইলেকট্রন Cl এর দিকে টানে এবং অণুটি পোলার হয়।
 ইলেকট্রোনেগেটিভিটির পার্থক্য ও পোলারিটি:
দুটি পরমাণুর ইলেকট্রোনেগেটিভিটির পার্থক্য যত বেশি, অণুর পোলারিটি তত বেশি।
উদাহরণস্বরূপ নিচের টেবিলটি দেখো—
| যৌগ | ইলেকট্রোনেগেটিভিটি পার্থক্য | ফলাফল | 
|---|---|---|
| H–Cl | 0.9 | পোলার | 
| H–F | 1.9 | অত্যন্ত পোলার | 
| H–H | 0 | নন-পোলার | 
 অণুর জ্যামিতির ভূমিকা:
কোনো অণুতে পোলার বন্ধন থাকলেও, যদি তার আকার (geometry) সমমিত হয়, তবে সম্পূর্ণ অণুটি নন-পোলার হতে পারে।
উদাহরণ:
CO₂ অণুতে দুটি পোলার বন্ধন থাকলেও অণুটি সরলরেখীয় (linear) হওয়ায় একে অপরকে বাতিল করে দেয়, ফলে পুরো অণুটি নন-পোলার।
পোলার ও নন-পোলার অণুর পার্থক্য:
| বৈশিষ্ট্য | পোলার অণু | নন-পোলার অণু | 
|---|---|---|
| চার্জ বণ্টন | অসম | সমান | 
| উদাহরণ | HCl, H₂O, NH₃ | O₂, N₂, CO₂ | 
| দ্রাব্যতা | পানি জাতীয় দ্রাবকে দ্রবীভূত | বেনজিন জাতীয় দ্রাবকে দ্রবীভূত | 
পোলারিটির প্রভাব:
- 
দ্রাব্যতা: পোলার পদার্থ পোলার দ্রাবকে দ্রবীভূত হয় (“like dissolves like” নীতি অনুযায়ী)। 
- 
স্ফুটনাঙ্ক ও গলনাঙ্ক: পোলার অণুর স্ফুটনাঙ্ক ও গলনাঙ্ক সাধারণত বেশি, কারণ তাদের মধ্যে শক্তিশালী আন্তঃঅণু আকর্ষণ (dipole-dipole attraction) থাকে। 
- 
রাসায়নিক বিক্রিয়াশীলতা: পোলার অণু ইলেকট্রিক চার্জযুক্ত পদার্থের সঙ্গে সহজে বিক্রিয়া করে। 
 উদাহরণ হিসেবে পানি (H₂O):
পানি একটি অত্যন্ত পোলার অণু। অক্সিজেনের ইলেকট্রোনেগেটিভিটি বেশি হওয়ায় ইলেকট্রন তার দিকে বেশি টানে। এর ফলে O প্রান্তে আংশিক ঋণাত্মক (δ–) এবং H প্রান্তে আংশিক ধনাত্মক (δ+) চার্জ তৈরি হয়। এই বৈশিষ্ট্যের কারণেই পানি ভালো দ্রাবক।
সবশেষে বলা যায়, পোলারিটি কোনো অণুর ইলেকট্রন বণ্টনের অসমতার পরিমাপক। এটি নির্ধারণ করে অণুর রাসায়নিক আচরণ, দ্রাব্যতা এবং অন্যান্য ভৌত ধর্ম। তাই রসায়নের ক্ষেত্রে এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক ধারণা।