'কুলটা'-এর অর্থ কী?
 
                        ‘কুলটা’ শব্দটির অর্থ হলো চরিত্রহীন বা নীতিভ্রষ্ট নারী, বিশেষত এমন নারী যিনি সামাজিক ও নৈতিক মানদণ্ড অমান্য করে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িত হন বা অসচ্চরিত্র বলে গণ্য হন। শব্দটি সাধারণত অবমাননাকর বা নিন্দাসূচক অর্থে ব্যবহৃত হয় এবং কারও প্রতি সামাজিক অসম্মান প্রদর্শনের জন্য ব্যবহৃত হওয়া উচিত নয়।
এখন বিস্তারিতভাবে দেখা যাক শব্দটির ব্যুৎপত্তি, ব্যবহার ও সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে অর্থের ব্যাখ্যা—
শব্দের উৎপত্তি ও ব্যুৎপত্তি
‘কুলটা’ শব্দটি সংস্কৃত “কুলটী” (कुलटी) শব্দ থেকে উদ্ভূত, যার অর্থ ‘নিজ কুল বা পরিবার থেকে বিচ্যুত নারী’। এখানে “কুল” মানে পরিবার বা বংশ, আর “টী” বা “টা” উপসর্গটি স্ত্রীলিঙ্গ নির্দেশ করে। অতএব, ‘কুলটা’ মানে এমন নারী যিনি পরিবার বা সমাজের নৈতিক সীমা অতিক্রম করেছেন বলে ধরা হয়।
অর্থ ও ব্যবহারিক প্রেক্ষাপট
বাংলা ভাষায় শব্দটি সাধারণত চরিত্রহীন নারী, অশালীন বা অনৈতিক আচরণকারী নারী বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। তবে আধুনিক সমাজে এটি অত্যন্ত অবমাননাকর ও লিঙ্গবৈষম্যমূলক বলে বিবেচিত।
পুরুষদের ক্ষেত্রে অনুরূপ শব্দ না থাকলেও নারীদের ক্ষেত্রে এই শব্দটি প্রথাগতভাবে ব্যবহার হয়ে এসেছে, যা পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার প্রতিফলন।
সাহিত্য ও সমাজে শব্দটির ব্যবহার
বাংলা সাহিত্যে বিশেষ করে পুরনো উপন্যাস ও নাটকে ‘কুলটা’ শব্দটি নৈতিকতা বা ধর্মীয় বিধিনিষেধ লঙ্ঘনকারী নারীর প্রতি ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন—
- 
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাঁর কিছু রচনায় সমাজের নৈতিকতা রক্ষার নাম করে নারীর প্রতি এই শব্দ প্রয়োগের সমালোচনা করেছেন। 
- 
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর গল্পে দেখিয়েছেন, সমাজ কিভাবে এক নারীর চরিত্র নিয়ে কটূ মন্তব্য করে, যদিও অনেক সময় সে অন্যায়ভাবে দোষারোপিত হয়। 
আধুনিক দৃষ্টিকোণ
বর্তমান সময়ে ‘কুলটা’ শব্দটি অপমানজনক ও ঘৃণাত্মক ভাষা হিসেবে গণ্য হয়।
আধুনিক সমাজে ব্যক্তিস্বাধীনতা ও নারীর মর্যাদাকে সম্মান করার প্রেক্ষিতে এই শব্দের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করা হয়। ভাষাবিদ ও সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, শব্দটির পরিবর্তে নিরপেক্ষ বা সম্মানজনক ভাষা ব্যবহার করা উচিত, যেমন—“চরিত্র বিষয়ে বিতর্কিত ব্যক্তি” বা “নৈতিকতার প্রশ্নে আলোচিত নারী” ইত্যাদি।
তুলনামূলক শব্দ ও সাংস্কৃতিক প্রভাব
| বিষয় | ‘কুলটা’ শব্দের অর্থ | আধুনিক বিকল্প বা নিরপেক্ষ শব্দ | 
|---|---|---|
| নৈতিক বিচ্যুতি বোঝাতে | চরিত্রহীন নারী | অনৈতিক আচরণকারী ব্যক্তি | 
| সামাজিক নিন্দা প্রকাশে | নিন্দনীয় নারী | সমাজবিরোধী আচরণকারী ব্যক্তি | 
| সাহিত্যিক ব্যবহার | প্রাচীন যুগে প্রচলিত | আধুনিক রচনায় সচরাচর পরিহারযোগ্য | 
সর্বোপরি, ‘কুলটা’ শব্দটি ভাষাগতভাবে প্রাচীন ও সামাজিকভাবে সংবেদনশীল। এটি একসময় নারীর চরিত্র বিচার করতে ব্যবহৃত হলেও আধুনিক সমাজে এই শব্দের ব্যবহার নৈতিক ও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে অনুচিত। সম্মানজনক সমাজ গঠনের জন্য ভাষা ব্যবহারে সংযম ও সচেতনতা বজায় রাখা জরুরি।