রসায়নের জনক বলা হয় কাকে?
 
                        রসায়নের জনক বলা হয় অঁতোয়ান লরঁ দ্য ল্যাভয়সিয়ে (Antoine Laurent Lavoisier)-কে।
তিনি একজন ফরাসি বিজ্ঞানী, যিনি ১৮শ শতকে আধুনিক রসায়নের ভিত্তি স্থাপন করেন। তার গবেষণা ও তত্ত্বই রসায়নকে কুসংস্কার ও অনুমানের যুগ থেকে বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ ও প্রমাণের যুগে নিয়ে আসে। তাই তাকে যথাযথভাবেই “আধুনিক রসায়নের জনক” বলা হয়।
বিশদ বিশ্লেষণ ও তথ্যউপাত্ত:
১. জীবন ও পরিচয়:
অঁতোয়ান লরঁ দ্য ল্যাভয়সিয়ে জন্মগ্রহণ করেন ২৬ আগস্ট ১৭৪৩ সালে ফ্রান্সের প্যারিস শহরে এবং মৃত্যুবরণ করেন ৮ মে ১৭৯৪ সালে। তিনি পেশায় একজন আইনজীবী ছিলেন, কিন্তু পরবর্তীতে বিজ্ঞানের প্রতি গভীর আগ্রহের কারণে রসায়নে মনোনিবেশ করেন।
২. মূল অবদানসমূহ:
- 
ভর সংরক্ষণ সূত্র (Law of Conservation of Mass): তিনি প্রথম প্রমাণ করেন যে কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়ায় পদার্থ সৃষ্টি বা ধ্বংস হয় না; কেবল রূপান্তরিত হয়। অর্থাৎ, বিক্রিয়ার আগে ও পরে মোট ভর একই থাকে। 
- 
অক্সিজেনের ভূমিকা আবিষ্কার: তিনি প্রমাণ করেন যে দহন বা জ্বালানি প্রক্রিয়ায় ‘ফ্লজিস্টন’ নামক কল্পিত পদার্থ নয়, বরং অক্সিজেন গ্যাস মূল ভূমিকা পালন করে। 
- 
রাসায়নিক নামকরণের পদ্ধতি: তিনি নতুন রাসায়নিক যৌগ ও উপাদানের জন্য বৈজ্ঞানিক নামকরণের একটি পদ্ধতি তৈরি করেন, যা আজও রসায়নের মূল ভিত্তি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। 
- 
জলের গঠন নির্ধারণ: ল্যাভয়সিয়ে প্রমাণ করেন যে জল কোনো মৌল নয়, বরং হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের যৌগ। 
৩. রসায়নে প্রভাব:
তার গবেষণার ফলে রসায়ন প্রথমবারের মতো একটি পরিমাপযোগ্য, নির্ভুল ও পরীক্ষাভিত্তিক বিজ্ঞানে পরিণত হয়। তিনি রসায়নকে পদার্থবিজ্ঞানের মতোই নির্ভরযোগ্য শাখায় রূপ দেন।
৪. মৃত্যু ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব:
ফরাসি বিপ্লবের সময় তিনি রাজনৈতিক কারণে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হন, কিন্তু মৃত্যুর পরেও তার অবদান রসায়নের ইতিহাসে অমর হয়ে আছে।
| তথ্য | বিবরণ | 
|---|---|
| পূর্ণ নাম | Antoine Laurent Lavoisier | 
| জন্ম | ২৬ আগস্ট ১৭৪৩, প্যারিস, ফ্রান্স | 
| মৃত্যু | ৮ মে ১৭৯৪ | 
| প্রধান অবদান | ভর সংরক্ষণ সূত্র, অক্সিজেন তত্ত্ব, রাসায়নিক নামকরণ | 
| উপাধি | আধুনিক রসায়নের জনক | 
সংক্ষেপে:
অঁতোয়ান লরঁ দ্য ল্যাভয়সিয়ে রসায়নকে পরীক্ষাভিত্তিক বিজ্ঞান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। তার তত্ত্ব ও আবিষ্কারই আধুনিক রসায়নের ভিত্তি স্থাপন করেছে, যার জন্য তিনি আজও “রসায়নের জনক” নামে বিশ্বজুড়ে পরিচিত।