প্রবীণ কারা? 

Avatar
calender 29-10-2025

প্রবীণরা সমাজের অভিজ্ঞ, জ্ঞানী এবং শ্রদ্ধার যোগ্য একটি শ্রেণি। তারা জীবনের দীর্ঘ সময় পার করে সমাজ, পরিবার ও রাষ্ট্রকে তাদের শ্রম, জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা দিয়ে সমৃদ্ধ করেছেন। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ ধীরে ধীরে কর্মক্ষমতা হারায়, কিন্তু জীবনের অভিজ্ঞতা ও প্রজ্ঞা তখনও থেকে যায়। জাতিসংঘের সংজ্ঞা অনুসারে, বাংলাদেশে যেসব মানুষের বয়স ৬০ বছর বা তার বেশি, তাদেরকে প্রবীণ নাগরিক বলা হয়। এ বয়সের পর মানুষ সাধারণত অবসরের পথে যায় এবং পরিবার ও সমাজের কাছ থেকে বিশেষ যত্ন ও মর্যাদা পাওয়ার অধিকার রাখে।

এখন নিচে প্রবীণদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো তালিকা আকারে উপস্থাপন করা হলো—

• সংজ্ঞা ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট:
জাতিসংঘ (United Nations) প্রবীণ বা বয়স্ক নাগরিক বলতে সেইসব মানুষকে বোঝায়, যাদের বয়স ৬০ বছর বা তদূর্ধ্ব। এই মানদণ্ডটি বিশ্বজুড়ে বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা, অধিকার ও কল্যাণমূলক কার্যক্রম নির্ধারণে ব্যবহৃত হয়।

• বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে:
বাংলাদেশ সরকারও জাতিসংঘের ঘোষণাকে অনুসরণ করে ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সীদের প্রবীণ নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। সরকারি চাকরিতে অবসরের বয়সও সাধারণত এই সীমার কাছাকাছি, তাই সামাজিক ও প্রশাসনিকভাবে এ বয়সকে প্রবীণতা সূচক ধরা হয়।

• প্রবীণদের অবদান:
প্রবীণরা জীবনের দীর্ঘ সময় ধরে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নয়নে ভূমিকা রাখেন। তারা অভিজ্ঞতার ভান্ডার, যারা তরুণ প্রজন্মকে দিকনির্দেশনা দিতে পারেন। অনেক প্রবীণ ব্যক্তি তাদের পেশাগত ও সামাজিক জীবনে বিশাল অবদান রেখে যান।

• প্রবীণদের সমস্যা:
প্রবীণ বয়সে সাধারণত নানা শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক সমস্যা দেখা দেয়। যেমন—

  • স্বাস্থ্য সমস্যা (হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, চলাফেরার অসুবিধা ইত্যাদি)

  • একাকিত্ব ও মানসিক অবসাদ

  • আর্থিক অনিশ্চয়তা

  • পরিবারে উপেক্ষা বা অবহেলা
    এই সমস্যাগুলো মোকাবিলায় পরিবার ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

• প্রবীণদের অধিকার ও আইন:
বাংলাদেশে প্রবীণদের সুরক্ষা ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে ২০১৩ সালে “প্রবীণ ব্যক্তির কল্যাণ আইন” (The Parents Maintenance Act, 2013) প্রণয়ন করা হয়। এই আইনে প্রবীণদের ভরণ-পোষণ, সামাজিক সুরক্ষা ও মর্যাদা রক্ষার বিধান রয়েছে। এছাড়া সরকার বিভিন্ন ভাতা কর্মসূচি, যেমন প্রবীণ ভাতা, চালু করেছে, যা ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সী দরিদ্র নাগরিকদের প্রদান করা হয়।

• প্রবীণদের জন্য আন্তর্জাতিক দিবস:
প্রতি বছর ১ অক্টোবর সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস (International Day of Older Persons) পালন করা হয়। দিবসটির উদ্দেশ্য হলো প্রবীণদের অধিকার, কল্যাণ এবং সমাজে তাদের ভূমিকার প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধি করা।

• সমাজে প্রবীণদের ভূমিকা:
প্রবীণরা তরুণ প্রজন্মকে শিক্ষা, জীবনবোধ, নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধ শেখাতে পারেন। তারা পারিবারিক ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি রক্ষার গুরুত্বপূর্ণ বাহক। পরিবারে প্রবীণ সদস্যের উপস্থিতি ভালোবাসা ও স্থিতিশীলতার প্রতীক।

• রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ ও সামাজিক দায়িত্ব:
বাংলাদেশ সরকার প্রবীণদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, বৃদ্ধাশ্রম, ও সেবা কেন্দ্র স্থাপন করেছে। একই সঙ্গে সমাজের প্রত্যেক সদস্যের দায়িত্ব হলো প্রবীণদের প্রতি শ্রদ্ধা, যত্ন ও সহানুভূতি প্রদর্শন করা।

• উপসংহার:
প্রবীণরা একটি জাতির অভিজ্ঞতা ও প্রজ্ঞার ভান্ডার। তাদের প্রতি ভালোবাসা, সম্মান ও সহানুভূতি প্রদর্শন করা মানবিক দায়িত্ব এবং সামাজিক ঐক্যের প্রতীক। জাতিসংঘ ঘোষণানুসারে, বাংলাদেশে ৬০ বছর বা তদূর্ধ্ব ব্যক্তিরা প্রবীণ হিসেবে স্বীকৃত, এবং সমাজের উন্নয়নে তাদের অভিজ্ঞতাকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করাই আমাদের কর্তব্য।

© LXMCQ, Inc. - All Rights Reserved

Developed by WiztecBD