উদ্দীপক বলতে কী বোঝায়? 

Avatar
calender 16-10-2025

উদ্দীপক বলতে কী বোঝায়

কর্মক্ষেত্রে বা কোনো প্রতিষ্ঠানে কর্মচারীর মধ্যে কর্ম করার আগ্রহ, উদ্যম, উৎসাহ, মনোবল বা প্রেষণা সৃষ্টি করে এমন সুযোগ-সুবিধা, পরিবেশ বা পদ্ধতিকেই উদ্দীপক (Incentive) বলা হয়। অর্থাৎ, এমন সব উপায় বা ব্যবস্থা যার মাধ্যমে কর্মীকে তার দায়িত্ব আরও আন্তরিকভাবে ও দক্ষতার সঙ্গে সম্পাদন করতে অনুপ্রাণিত করা হয়, সেটিই উদ্দীপক। অন্যভাবে বলা যায়, কর্মীর মাঝে কর্ম করার আগ্রহ, উদ্দীপনা বা প্রেষণা সৃষ্টি করে এমন সুযোগ-সুবিধা বা উপায়ই হলো উদ্দীপক। এই সংজ্ঞা থেকে বোঝা যায়, উদ্দীপক হলো একধরনের প্রেরণার হাতিয়ার (motivational tool) যা কর্মচারীর মধ্যে কর্মোদ্যম, সন্তুষ্টি ও নিষ্ঠা বৃদ্ধি করে এবং প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করে।

উদ্দীপকের উদ্দেশ্য

উদ্দীপকের মূল লক্ষ্য হলো কর্মীদের মনোবল বৃদ্ধি করে তাদের কাজের প্রতি আগ্রহী করা। এর ফলে কর্মীরা নিজেদের দায়িত্ব আরও দক্ষতার সঙ্গে পালন করে, উৎপাদনশীলতা বাড়ায় এবং প্রতিষ্ঠানের সাফল্যে ভূমিকা রাখে। মূল উদ্দেশ্যগুলো হলো কর্মীর কাজের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি করা, কর্মীকে অধিক শ্রম দিতে উৎসাহিত করা, কাজের মান ও দক্ষতা বৃদ্ধি করা, কর্মীকে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক বজায় রাখতে উৎসাহ দেওয়া এবং কর্মীর মধ্যে আনুগত্য ও দায়িত্ববোধ তৈরি করা।

উদ্দীপকের ধরন

উদ্দীপক সাধারণত দুই প্রকার।
১. আর্থিক উদ্দীপক (Financial Incentive): যে সকল সুবিধা কর্মী সরাসরি অর্থের মাধ্যমে পায়, তাকে আর্থিক উদ্দীপক বলে। যেমন বেতন বৃদ্ধি, বোনাস ও কমিশন, অতিরিক্ত সময়ের কাজের পারিশ্রমিক (Overtime Pay), ভাতা (House Rent, Medical, Conveyance ইত্যাদি), লাভের অংশ প্রদান (Profit Sharing), পেনশন, বীমা ও অবসরকালীন সুবিধা। এই সব সুবিধা কর্মীর জীবনে আর্থিক নিরাপত্তা এনে দেয়, ফলে সে আরও মনোযোগী ও পরিশ্রমী হয়ে ওঠে।


২. অনার্থিক উদ্দীপক (Non-financial Incentive): যে সকল উপায় কর্মীকে সরাসরি অর্থ না দিয়ে মানসিকভাবে উৎসাহিত করে, তাকে অনার্থিক উদ্দীপক বলে। যেমন প্রশংসা বা স্বীকৃতি (Recognition), পদোন্নতি (Promotion), দায়িত্ব বৃদ্ধি ও স্বাধীনতা, কাজের উপযুক্ত পরিবেশ, কর্মক্ষেত্রে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক, প্রশিক্ষণ ও উন্নয়নের সুযোগ, চাকরির স্থায়িত্ব ও নিরাপত্তা। এগুলো কর্মীর আত্মসম্মান, মর্যাদা ও মানসিক তৃপ্তি বাড়ায়, যা তাকে আরও নিষ্ঠাবান করে তোলে।

উদ্দীপকের গুরুত্ব

একটি প্রতিষ্ঠানের সাফল্য অনেকাংশে তার কর্মীদের দক্ষতা, আগ্রহ ও মনোবলের ওপর নির্ভর করে। সঠিক উদ্দীপনা না থাকলে কর্মীরা নিরুৎসাহিত হয়, কর্মদক্ষতা কমে যায় এবং উৎপাদন হ্রাস পায়। তাই উদ্দীপক ব্যবস্থার গুরুত্ব অপরিসীম। গুরুত্বের দিকগুলো হলো কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি— উদ্দীপক কর্মীদের কর্মক্ষমতা ও উৎপাদনশীলতা বাড়ায়; মনোবল উন্নয়ন— প্রশংসা ও পুরস্কার কর্মীর আত্মবিশ্বাস ও উৎসাহ বৃদ্ধি করে; সংগঠনের প্রতি আনুগত্য— উপযুক্ত উদ্দীপনা কর্মীদের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আবেগীয় বন্ধন গড়ে তোলে; শৃঙ্খলা ও সময়ানুবর্তিতা— পুরস্কার ও স্বীকৃতি পেতে কর্মীরা নিয়ম মেনে কাজ করে; দলগত মনোভাব সৃষ্টি— দলীয় বোনাস বা প্রশংসা দলীয় ঐক্য জোরদার করে; প্রতিষ্ঠানের সাফল্য— দক্ষ ও উদ্দীপিত কর্মী প্রতিষ্ঠানের উন্নতির মূল চালিকা শক্তি।

উদাহরণ

একটি কোম্পানি যদি বছরে সেরা কর্মীকে পুরস্কৃত করে, তবে এটি একধরনের উদ্দীপক যা অন্যদেরও অনুপ্রাণিত করে। শিক্ষক যদি ভালো ফলাফল করা ছাত্রকে প্রশংসা করে বা পুরস্কার দেয়, সেটিও উদ্দীপক। সরকারি বা বেসরকারি অফিসে বেতন বৃদ্ধি, পদোন্নতি বা সম্মাননা প্রদানও উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে। এই উদাহরণগুলো দেখায়, উদ্দীপক শুধু অর্থ নয়; মানসিক স্বীকৃতিও একে কার্যকর করে তোলে।

উদ্দীপক ও প্রেষণার পার্থক্য

অনেকে উদ্দীপক ও প্রেষণাকে একই মনে করেন, কিন্তু আসলে দুটির মধ্যে সূক্ষ্ম পার্থক্য রয়েছে। প্রেষণা (Motivation) হলো মানসিক অভ্যন্তরীণ শক্তি যা কাউকে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করে, আর উদ্দীপক (Incentive) হলো বাহ্যিক উপাদান যা সেই প্রেষণাকে সক্রিয় করে বা বাড়িয়ে দেয়। অর্থাৎ, উদ্দীপক হলো প্রেষণার বাহ্যিক রূপ।


সবশেষে বলা যায়, উদ্দীপক হলো কর্মী পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার এক অপরিহার্য অংশ। এটি কর্মীর মনে কর্মোদ্যম, উৎসাহ ও আত্মতৃপ্তি জাগিয়ে তোলে। সঠিক উদ্দীপনা ব্যবস্থা থাকলে কর্মী শুধু নিজের স্বার্থেই নয়, প্রতিষ্ঠানের মঙ্গলের জন্যও আন্তরিকভাবে কাজ করে। তাই বলা যায়, কর্মীর মাঝে কর্ম করার আগ্রহ, উদ্দীপনা বা প্রেষণা সৃষ্টি করে এমন সুযোগ-সুবিধা বা উপায়ই হলো প্রকৃত উদ্দীপক।

© LXMCQ, Inc. - All Rights Reserved

Developed by WiztecBD