সময়ের মূল্য রচনা

Avatar
calender 18-10-2025

সময়ের মূল্য

ভূমিকা

সময় মানবজীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। এটি এমন একটি জিনিস, যা একবার হারিয়ে গেলে কখনো ফিরে আসে না। মানুষ অর্থ, সম্মান কিংবা সামগ্রী হারিয়ে পুনরায় অর্জন করতে পারে, কিন্তু হারানো সময় পুনরুদ্ধার করা যায় না। তাই সময়ের সঠিক ব্যবহারই সফল জীবনের মূল চাবিকাঠি।

সময়ের তাৎপর্য

সময় মানুষের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করে। পৃথিবীর সবকিছু সময়ের নিয়মে আবদ্ধ। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত, দিন ও রাতের পরিবর্তন, ঋতুর আগমন ও প্রস্থান—সবই সময়ের গতিধারায় ঘটে। জীবনের প্রতিটি কাজ সময়ের ওপর নির্ভরশীল। যে ব্যক্তি সময়ের মূল্য বোঝে, সে জীবনে উন্নতি করে; আর যে অবহেলা করে, সে পিছিয়ে পড়ে।

সময়ের অপচয়ের ফল

সময় অপচয় মানে জীবনের অপচয়। অলসতা, গাফিলতি ও সময়জ্ঞানহীনতা মানুষের অগ্রগতিকে থামিয়ে দেয়। ইতিহাসে অনেক প্রতিভাবান ব্যক্তি কেবল সময়ের সঠিক ব্যবহার না জানার কারণে ব্যর্থ হয়েছেন। একজন ছাত্র যদি পড়াশোনার নির্দিষ্ট সময় নষ্ট করে, তবে পরীক্ষায় ভালো ফল আশা করা যায় না। একইভাবে কর্মজীবনে সময় নষ্ট করলে সাফল্য অধরাই থেকে যায়।

সময় ও সফলতা

বিশ্বের সকল সফল মানুষ সময়কে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। বিজ্ঞানী নিউটন, আইনস্টাইন, রবি ঠাকুর বা কাজী নজরুল—তাঁরা সকলেই সময়ের যথাযথ ব্যবহার করে নিজেদের মহৎ করে তুলেছেন। তাঁরা জানতেন, প্রতিটি মুহূর্তই সম্ভাবনার দরজা খুলে দেয়। তাই যারা সময়ের যথাযথ ব্যবহার জানে, তারাই জীবনে লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম হয়।

ছাত্রজীবনে সময়ের গুরুত্ব

ছাত্রজীবন ভবিষ্যৎ গড়ার সময়। এই সময়ের সঠিক ব্যবহার ভবিষ্যতের সাফল্য নির্ধারণ করে। নিয়মিত অধ্যয়ন, শৃঙ্খলা মেনে চলা এবং সময়মতো কাজ সম্পন্ন করাই একজন ভালো ছাত্রের গুণ। অবহেলা, অলসতা বা অপ্রয়োজনীয় কাজে সময় নষ্ট করলে তার পরিণতি অত্যন্ত ক্ষতিকর হয়।

সময় ব্যবস্থাপনা

সময় ব্যবস্থাপনা মানে নির্দিষ্ট কাজকে সঠিক সময়ে সম্পন্ন করার পরিকল্পনা করা। একটি সূচি তৈরি করে সে অনুযায়ী কাজ করলে সময়ের অপচয় রোধ হয়। যেমন—প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় ঘুম, অধ্যয়ন, বিশ্রাম ও বিনোদনের জন্য ভাগ করা উচিত। এতে কাজের গতি ও মনোযোগ বাড়ে এবং জীবনে ভারসাম্য আসে।

সময়ের সঠিক ব্যবহার

সময়কে কাজে লাগানোর জন্য পরিকল্পনা অপরিহার্য।
১. কাজের অগ্রাধিকার নির্ধারণ: গুরুত্বপূর্ণ কাজ আগে শেষ করা উচিত।
২. অলসতা পরিহার: সময় নষ্ট করার প্রবণতা দূর করতে হবে।
৩. নিয়মিততা বজায় রাখা: প্রতিদিনের কাজ সময়মতো শেষ করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
৪. বিনোদনের সীমাবদ্ধতা: অতিরিক্ত সময় মোবাইল, টিভি বা সামাজিক মাধ্যমে নষ্ট করা উচিত নয়।
৫. নির্ধারিত লক্ষ্য স্থির করা: সময়ের সঠিক ব্যবহার তখনই সম্ভব, যখন জীবনে লক্ষ্য পরিষ্কার থাকে।

ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ

সব ধর্মেই সময়ের গুরুত্বের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। ইসলামে বলা হয়েছে, “মানুষ ক্ষতির মধ্যে, যদি না সে সময়কে কাজে লাগিয়ে সৎ কাজ করে।” পবিত্র কুরআনের সূরা আল-আসরে সময়ের শপথ করে আল্লাহ সময়ের গুরুত্ব বোঝিয়েছেন। একইভাবে গীতা ও বাইবেলেও সময়কে মূল্যবান হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।

সময়ের সদ্ব্যবহার ও সমাজ

যে সমাজের মানুষ সময়ের মূল্য বোঝে, সে সমাজ অগ্রসর হয়। যেমন জাপান, জার্মানি বা কোরিয়া—তারা সময়নিষ্ঠ হওয়ার কারণে অল্প সময়েই উন্নত দেশ হয়েছে। বিপরীতে, যে সমাজে সময়ের অপচয় হয়, সেখানে বিশৃঙ্খলা, দারিদ্র্য ও পশ্চাৎপদতা বৃদ্ধি পায়।

উপসংহার

সময় জীবনের মূলধন। সময়কে সঠিকভাবে ব্যবহার করা মানেই জীবনের সাফল্য নিশ্চিত করা। প্রতিটি মুহূর্তের সঠিক ব্যবহার আমাদের জ্ঞান, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি করে। তাই সময়কে মূল্য দাও, সময় তোমাকে মূল্যবান করে তুলবে। সময় নষ্ট না করে একে কাজে লাগানোই বুদ্ধিমানের কাজ।

© LXMCQ, Inc. - All Rights Reserved

Developed by WiztecBD