যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত কয়টি?
যাকাত ইসলামে একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরজ উপাসনা যা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের প্রতিফলন হিসেবে সম্পদের একটি নির্দিষ্ট অংশ দরিদ্রদের প্রদান করা হয়। তবে যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য কিছু নির্দিষ্ট শর্ত রয়েছে। যাকাত ফরজ হওয়ার শর্তগুলো মোট সাতটি। এই শর্তগুলো পালন করতে হবে, তবেই যাকাত ফরজ হবে। নিচে এই শর্তগুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে:
-
মুসলমান হওয়া
যাকাত ফরজ হওয়ার প্রথম শর্ত হলো মুসলমান হওয়া। ইসলাম গ্রহণ করার পরই যাকাত দিতে হবে। অমুসলিমদের উপর যাকাত ফরজ নয়, তাই ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর প্রথমবার যাকাত দেওয়া শুরু করা হয়। -
নিসাবের মালিক হওয়া
নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য একজন মুসলমানের হাতে নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ (নিসাব) থাকতে হবে। নিসাবের পরিমাণ হলো সোনা, রুপা বা অন্যান্য সম্পদের যেগুলোর নির্ধারিত মূল্য আল্লাহর আইন অনুযায়ী সঠিক হতে হবে। -
নিসাব পরিমাণ সম্পদ প্রয়োজনের অতিরিক্ত হওয়া
যাকাত দেওয়ার জন্য যে সম্পদটি প্রয়োজন, তা জীবনযাপনের মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত হতে হবে। জীবিকার জন্য ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি, বাসস্থান বা প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের উপর যাকাত ফরজ নয়। -
ঋণগ্রস্ত না হওয়া
যদি ব্যক্তি ঋণগ্রস্ত থাকে এবং তার কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে, তবে তার উপর যাকাত ফরজ হবে না। ঋণের পরিমাণ জীবনযাত্রার জন্য প্রয়োজনীয় হলে, যাকাত প্রদান করা হবে না। তবে ঋণ পরিশোধের পর নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে তার উপর যাকাত ফরজ হবে। -
মাল এক বছরকাল স্থায়ী থাকা
যাকাত ফরজ হতে হলে, নিসাব পরিমাণ সম্পদকে এক বছর স্থায়ী হতে হবে। যদি সম্পদ এক বছর পূর্ণ না হয়, তবে তার উপর যাকাত ফরজ হবে না। হাদিসে বলা হয়েছে, “যে সম্পদ এক বছর পূর্ণ না হয়, তাতে যাকাত নেই।” -
জ্ঞানসম্পন্ন হওয়া
যাকাত ফরজ হওয়ার একটি শর্ত হলো, ব্যক্তি যদি জ্ঞানী হয়। পাগল বা জ্ঞানহীন ব্যক্তির উপর যাকাত ফরজ নয়। যে ব্যক্তি নিজের সম্পদ সম্পর্কে সচেতন এবং দানের গুরুত্ব বুঝতে পারে, শুধুমাত্র তার উপর যাকাত ফরজ। -
বালেগ হওয়া
যাকাত ফরজ হওয়ার শেষ শর্ত হলো বালেগ হওয়া। শিশু বা নাবালক যারা প্রাপ্তবয়স্ক হয়নি, তাদের উপর যাকাত ফরজ নয়, যদিও তাদের কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলেও। তবে যখন তারা বালেগ হবে, তখন তাদের উপর যাকাত ফরজ হবে।
এছাড়াও, যাকাতের জন্য নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি সাধারণত সোনা বা রুপার নির্দিষ্ট পরিমাণ, যেমন সোনা সাড়ে সাত তোলা বা রূপা সাড়ে বায়ান্ন তোলা। এই পরিমাণ সম্পদ এক বছর ধরে স্থায়ী থাকলে, তার উপর যাকাত ফরজ হবে।
স্ত্রীলোকের সোনা, রুপা: যদি একজন নারীর সোনা বা রুপার অলংকার নিসাব পরিমাণ হয়, তবে তাকে যাকাত দিতে হবে, কারণ এটি মৌলিক প্রয়োজনীয়তা নয়। তবে ব্যবসায়িক সম্পদ হলে, যাকাত দিতে হবে, তবে সেক্ষেত্রে এক বছর পূর্ণ হওয়া এবং নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকা জরুরি।
উৎপন্ন শস্যের যাকাত: ধান, গম, যব, খেজুর ইত্যাদি ফসল থেকে যদি বৃষ্টির পানিতে উৎপন্ন হয়, তবে এর দশভাগের একভাগ যাকাত দিতে হয়। আর যদি সেচ ব্যবস্থায় উৎপন্ন হয়, তবে বিশভাগের একভাগ যাকাত দিতে হয়। এভাবে, যাকাত ফরজ হওয়ার শর্তগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পালন করতে হয়, তবেই এটি একটি পূর্ণাঙ্গ ফরজ উপাসনা হবে।