পরিসংখ্যান কাকে বলে?

পরিসংখ্যান এমন একটি শাস্ত্র যা তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ, ব্যাখ্যা ও উপস্থাপনের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করে। সহজভাবে বলতে গেলে, পরিসংখ্যান হলো তথ্য বা ডেটা নিয়ে কাজ করার বিজ্ঞান।
এটি সংখ্যাগত তথ্যকে এমনভাবে সাজায় ও বিশ্লেষণ করে, যাতে কোনো ঘটনা, প্রবণতা বা সম্পর্ক সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। আধুনিক যুগে বিজ্ঞান, অর্থনীতি, ব্যবসা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, এমনকি দৈনন্দিন জীবনেও পরিসংখ্যানের ব্যবহার অপরিহার্য।
১. পরিসংখ্যানের সংজ্ঞা:
-
পরিসংখ্যান শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ “Status” থেকে, যার অর্থ “State” বা “অবস্থা”।
-
বিভিন্ন পণ্ডিতের মতে:
-
ক্রক্সটন ও কাওডি বলেছেন, “পরিসংখ্যান হলো এমন একটি বিজ্ঞান যা তথ্য সংগ্রহ, শ্রেণিবিন্যাস, বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যার মাধ্যমে সত্য নির্ধারণ করে।”
-
হোরেস সেক বলেছেন, “পরিসংখ্যান হলো সংখ্যার মাধ্যমে তথ্য প্রকাশের এক বিশেষ কৌশল।”
অতএব, বলা যায় — পরিসংখ্যান হলো এমন একটি পদ্ধতিগত প্রক্রিয়া যা ডেটা সংগ্রহ থেকে শুরু করে তা বিশ্লেষণ ও সিদ্ধান্তে পৌঁছানো পর্যন্ত সম্পূর্ণ তথ্যচক্র সম্পন্ন করে।
-
২. পরিসংখ্যানের প্রধান ধাপ বা কার্যক্রম:
পরিসংখ্যান কার্যত কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন হয় –
-
তথ্য সংগ্রহ (Collection): নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য অনুযায়ী তথ্য সংগ্রহ করা।
-
তথ্য শ্রেণিবিন্যাস (Classification): সংগৃহীত তথ্যকে অর্থবহ বিভাগে ভাগ করা।
-
তথ্য উপস্থাপন (Presentation): টেবিল, চার্ট, গ্রাফ বা চিত্রের মাধ্যমে তথ্য প্রদর্শন।
-
তথ্য বিশ্লেষণ (Analysis): গাণিতিক বা পরিসংখ্যানিক সূত্র ব্যবহার করে তথ্য বিশ্লেষণ করা।
-
ব্যাখ্যা ও সিদ্ধান্ত (Interpretation): বিশ্লেষণের ফলাফল ব্যাখ্যা করে সিদ্ধান্তে পৌঁছানো।
এই ধাপগুলো মিলেই পরিসংখ্যানকে একটি সম্পূর্ণ বিশ্লেষণাত্মক পদ্ধতি হিসেবে গড়ে তোলে।
৩. পরিসংখ্যানের প্রকারভেদ:
পরিসংখ্যানকে সাধারণত দুটি ভাগে ভাগ করা হয় –
-
বর্ণনামূলক পরিসংখ্যান (Descriptive Statistics):
এখানে তথ্যকে বর্ণনা বা উপস্থাপন করা হয়। উদাহরণ: গড় (Mean), মধ্যক (Median), মোড (Mode) ইত্যাদি। -
অনুমানমূলক পরিসংখ্যান (Inferential Statistics):
এখানে সংগৃহীত তথ্য থেকে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। উদাহরণ: সম্ভাব্যতা বিশ্লেষণ, হাইপোথিসিস টেস্ট ইত্যাদি।
৪. পরিসংখ্যানের গুরুত্ব:
পরিসংখ্যানের গুরুত্ব আজ সর্বত্র অনুভূত হয় —
-
বিজ্ঞান ও গবেষণায়: পরীক্ষার ফল বিশ্লেষণ ও তত্ত্ব যাচাইয়ে পরিসংখ্যান অপরিহার্য।
-
ব্যবসা ও অর্থনীতিতে: বিক্রয়, মুনাফা, বাজার প্রবণতা বিশ্লেষণে ব্যবহৃত হয়।
-
সরকারি পরিকল্পনায়: জনগণনা, শিক্ষানীতি, বাজেট প্রণয়নে পরিসংখ্যান অপরিহার্য ভূমিকা রাখে।
-
শিক্ষাক্ষেত্রে: শিক্ষার্থীদের ফলাফল বিশ্লেষণ, পাঠ্যক্রম মূল্যায়ন ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয়।
-
স্বাস্থ্য ও সমাজে: রোগের বিস্তার, মৃত্যুহার, জন্মহার ইত্যাদি নির্ণয়ে পরিসংখ্যান গুরুত্বপূর্ণ।
৫. পরিসংখ্যানের বৈশিষ্ট্য:
-
এটি সংখ্যাগত তথ্যের উপর ভিত্তি করে।
-
সব তথ্যই একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য পূরণের জন্য সংগ্রহ করা হয়।
-
তথ্যকে বৈজ্ঞানিকভাবে বিশ্লেষণ করা হয়।
-
এটি বাস্তব জীবনের সমস্যার সমাধান দিতে সাহায্য করে।
সবশেষে বলা যায়, পরিসংখ্যান হলো জ্ঞানের এমন এক শাখা যা তথ্যের ভাষাকে বিজ্ঞানসম্মতভাবে প্রকাশ করে। এটি শুধু সংখ্যা নয়, বরং সিদ্ধান্ত গ্রহণের এক শক্তিশালী হাতিয়ার। সমাজ, রাষ্ট্র, ব্যবসা ও বিজ্ঞান—সব ক্ষেত্রেই পরিসংখ্যানের ব্যবহার মানুষকে যুক্তিনির্ভর ও কার্যকর সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে। সুতরাং, পরিসংখ্যান আধুনিক বিশ্বের উন্নয়ন ও বিশ্লেষণের অন্যতম প্রধান ভিত্তি।