সংকেত কাকে বলে?
সংকেত হলো এমন একটি প্রতীক, ইঙ্গিত বা চিহ্ন, যার মাধ্যমে কোনো বার্তা, ভাব বা অর্থ প্রকাশ করা হয়। এটি সাধারণত এমন পরিস্থিতিতে ব্যবহৃত হয়, যেখানে সরাসরি কথা বলা বা শব্দ ব্যবহার না করে অর্থ বোঝানো দরকার হয়। সংকেত শব্দ, অঙ্গভঙ্গি, রঙ, ছবি, শব্দতরঙ্গ, আলোর ঝলক, বা যেকোনো দৃশ্য-শ্রাব্য উপাদানের মাধ্যমে প্রকাশ করা যেতে পারে। মানুষের যোগাযোগব্যবস্থায় সংকেত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, কারণ এটি দ্রুত ও কার্যকরভাবে অর্থ পৌঁছে দিতে সাহায্য করে।
সংকেত মূলত দুই প্রকারের হতে পারে—প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম। প্রাকৃতিক সংকেত হলো সেইসব ইঙ্গিত যা স্বাভাবিকভাবে কোনো ঘটনার পূর্বাভাস দেয়, যেমন কালো মেঘ বৃষ্টি আসার সংকেত দেয় বা শিশুর কান্না তার অসন্তোষের ইঙ্গিত। কৃত্রিম সংকেত হলো মানুষের দ্বারা তৈরি এমন ইঙ্গিত যা নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়, যেমন ট্রাফিক লাইট, পতাকা, অঙ্গভঙ্গি, কোড ইত্যাদি। উদাহরণস্বরূপ, লাল বাতি থামার সংকেত দেয়, সবুজ বাতি চলার অনুমতি দেয়। আবার, সৈনিকের সালাম দেওয়া সম্মানের সংকেত, কিংবা শিক্ষক যখন হাত উঁচু করেন, তখন তা নীরব থাকার সংকেত হতে পারে।
ভাষাতত্ত্বে সংকেত একটি বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। ভাষাবিজ্ঞানী ফের্দিনান্দ দ্য সসুর (Ferdinand de Saussure) সংকেতকে দুটি অংশে ভাগ করেছেন—সংকেতক (signifier) ও সংকেতিত (signified)। সংকেতক হলো শব্দ বা প্রতীকের ধ্বনিগত বা দৃশ্যমান রূপ, আর সংকেতিত হলো সেই প্রতীকের মানে বা ধারণা। উদাহরণস্বরূপ, “গাছ” শব্দটি হলো সংকেতক, আর “গাছ” বলতে আমরা যা বুঝি—একটি সবুজ পত্রবিশিষ্ট জীবন্ত উদ্ভিদ—তা হলো সংকেতিত। এই দুইয়ের মিলনেই একটি পূর্ণাঙ্গ সংকেত গঠিত হয়।
সবশেষে বলা যায়, সংকেত হলো ভাবপ্রকাশের এক কার্যকর উপায়, যা ভাষা, সমাজ, সংস্কৃতি ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে অপরিহার্য ভূমিকা রাখে। মানুষ বা প্রাণী উভয়েই সংকেতের মাধ্যমে তাদের আবেগ, প্রয়োজন বা উদ্দেশ্য প্রকাশ করতে সক্ষম হয়, যা যোগাযোগকে সহজ, দ্রুত ও অর্থবহ করে তোলে।