দুর্জন বিদ্বান হইলেও পরিত্যাজ্য ভাবসম্প্রসারণ

Avatar
calender 17-10-2025

দুর্জন বিদ্বান হইলেও পরিত্যাজ্য

মূলভাব: বিদ্যা মানুষের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অর্জন হলেও, শুধু বিদ্যা অর্জনই যথেষ্ট নয়। যদি সেই বিদ্যা নৈতিকতা ও সচ্চরিত্রের আলোয় উদ্ভাসিত না হয়, তবে সেই বিদ্বান ব্যক্তিকে বর্জন করাই শ্রেয়।

সম্প্রসারিত ভাব: বিদ্যা মানুষের জীবনের অলঙ্কারস্বরূপ, যা মনুষ্যত্বকে উজ্জ্বল করে তোলে। কিন্তু এই বিদ্যা তখনই মূল্যবান, যখন তা চরিত্রের সঙ্গে যুক্ত থাকে। চরিত্রহীন বিদ্বান ব্যক্তি সমাজের জন্য বিপজ্জনক, কারণ তার জ্ঞান নৈতিকতার অভাবে অপব্যবহার হতে পারে। সে সমাজের উন্নতির পরিবর্তে অশান্তি ও অকল্যাণ ডেকে আনে। সুতরাং বিদ্যা যত মহৎই হোক, তা যদি সততা ও সজ্জনতার সঙ্গে না থাকে, তবে তা বিষের মতো ক্ষতিকর হয়ে ওঠে।

যেমন একটি বিষধর সাপের মাথায় মহামূল্য মণি থাকলেও, কেউ সেই মণি পাওয়ার জন্য সাপের সংস্পর্শে যেতে চায় না—কারণ তাতে প্রাণহানির আশঙ্কা থাকে। তেমনি দুর্জন বিদ্বান ব্যক্তির জ্ঞান যত গভীরই হোক, তার সঙ্গ মানুষের নৈতিক জীবনের জন্য ক্ষতিকর। তার প্রভাবে চরিত্র, আদর্শ ও সততা ধীরে ধীরে বিনষ্ট হতে পারে।

মানবজীবনে চরিত্রই হলো প্রকৃত সম্পদ। একজন সচ্চরিত্র মূর্খ ব্যক্তি অসচ্চরিত্র বিদ্বান অপেক্ষা অনেক শ্রেষ্ঠ, কারণ সে অন্তত অন্যের ক্ষতি করে না। চরিত্রহীনের বিদ্যা সমাজে উপকারের বদলে সর্বনাশ ডেকে আনে। জ্ঞান তখনই পূর্ণতা পায়, যখন তা মানবিকতা, সততা ও নৈতিকতার সঙ্গে যুক্ত থাকে।

অতএব বলা যায়, বিদ্যা মানুষকে জ্ঞানী করে, কিন্তু চরিত্রই মানুষকে মহৎ করে তোলে। দুর্জন বিদ্বান ব্যক্তি জ্ঞানের বাহক হলেও সমাজের কল্যাণে অক্ষম। তাই এমন ব্যক্তির সাহচর্য এড়িয়ে চলা বুদ্ধিমানের কাজ, কারণ তার প্রভাব থেকে চরিত্রের অবক্ষয় ও জীবনের পতন ঘটতে পারে।

উপসংহার: বিদ্যা যেমন জীবনের আলো, তেমনি চরিত্র তার দীপ্তি। এই দীপ্তি হারালে বিদ্যা অন্ধকারে মিলিয়ে যায়। তাই সত্যিকার জ্ঞানী সে-ই, যার বিদ্যা মানবকল্যাণে নিবেদিত এবং যার চরিত্র নির্মল। দুর্জন বিদ্বান হইলেও পরিত্যাজ্য, কারণ চরিত্রহীন জ্ঞান সমাজের শত্রু, মানুষের নয়।

© LXMCQ, Inc. - All Rights Reserved

Developed by WiztecBD