"ওই" এবং "ঐ"-এর মধ্যে পার্থক্য কী?
“ওই” এবং “ঐ” — এই দুটি শব্দই ইঙ্গিতবাচক সর্বনাম বা নির্দেশক শব্দ, যেগুলো কোনো বস্তু, ব্যক্তি বা বিষয়কে নির্দেশ করতে ব্যবহৃত হয়। তবে এদের মধ্যে পার্থক্য হলো উচ্চারণ, ব্যবহার ও ব্যাকরণিক রীতির দিক থেকে। অর্থে এরা কাছাকাছি হলেও প্রয়োগের ক্ষেত্রে সূক্ষ্ম পার্থক্য রয়েছে।
রূপ ও উচ্চারণের পার্থক্য:
“ঐ” শব্দটি সংস্কৃতজাত ও প্রমিত রূপ, যেখানে দ্বিত্বস্বর “ঐ” ব্যবহৃত হয়েছে। অন্যদিকে “ওই” শব্দটি বাংলা ভাষার চলিত রূপ, যা উচ্চারণে “ঐ”-এর সরল ও কথ্য সংস্করণ।
-
“ঐ” উচ্চারণ হয় কিছুটা খোলা স্বরে— অয়ি।
-
“ওই” উচ্চারণ হয় বন্ধ স্বরে— ও-ই।
ব্যবহারিক পার্থক্য:
“ঐ” শব্দটি প্রমিত, লিখিত ও সাহিত্যিক ভাষায় ব্যবহৃত হয়। এটি মূলত শুদ্ধ ভাষা, সাহিত্য, পাঠ্যপুস্তক বা আনুষ্ঠানিক লেখায় দেখা যায়।
উদাহরণ:
– ঐ মানুষটি আমার শিক্ষক।
– ঐ ফুলটি বাগানের সবচেয়ে সুন্দর।
অন্যদিকে “ওই” শব্দটি কথ্য ও দৈনন্দিন ভাষায় বেশি প্রচলিত। সাধারণ মানুষ কথা বলার সময় “ঐ” না বলে “ওই” ব্যবহার করে।
উদাহরণ:
– ওই ছেলে আমার বন্ধু।
– ওই দোকানটা এখন বন্ধ।
ব্যাকরণিক দিক থেকে:
দুটিই “দূরবাচক নির্দেশক সর্বনাম” অর্থাৎ, যে ব্যক্তি বা বস্তুকে দূরে থেকে নির্দেশ করা হয়, তার জন্য ব্যবহৃত হয়।
যেমন:
– এটি = কাছের বস্তু,
– সেটি = মাঝারি দূরত্বে,
– ওই/ঐটি = দূরে অবস্থিত বস্তু।
শুদ্ধতার দিক থেকে:
বাংলা ব্যাকরণে “ঐ” হলো প্রমিত রূপ, আর “ওই” কথ্য রূপ। অর্থাৎ পরীক্ষায়, সাহিত্যিক লেখায় বা প্রমিত রচনায় “ঐ” ব্যবহার করা উচিত, কিন্তু কথ্য ভাষায় “ওই”-ই বেশি স্বাভাবিক ও গ্রহণযোগ্য।
সংক্ষেপে:
-
ঐ = প্রমিত, সাহিত্যিক, লিখিত ভাষায় ব্যবহৃত।
-
ওই = কথ্য, দৈনন্দিন ভাষায় ব্যবহৃত।
অর্থ একই হলেও, ব্যবহারের ক্ষেত্র ও উচ্চারণের দিক থেকে এদের পার্থক্য স্পষ্ট।
অতএব, “ঐ” শুদ্ধ ও প্রমিত রূপ, আর “ওই” তার কথ্য ও সাধারণ ব্যবহৃত রূপ — দুটোই সঠিক, তবে প্রয়োগের ক্ষেত্র ভিন্ন।