পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি বলতে কী বোঝ?

Avatar
calender 23-10-2025

পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি হলো এমন একটি গবেষণামূলক উপায়, যেখানে কোনো ঘটনার প্রকৃতি, আচরণ বা ক্রিয়া সরাসরি দেখা ও বিশ্লেষণ করে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এটি সামাজিক বিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান, শিক্ষাবিজ্ঞান ও বিভিন্ন গবেষণা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির মাধ্যমে গবেষক নিজেই ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে বা নির্দিষ্ট মাধ্যমে ঘটনাকে পর্যবেক্ষণ করে তথ্য সংগ্রহ করেন, যা গবেষণার নির্ভুলতা বাড়ায়। নিচে পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করা হলোঃ

অর্থ ও ধারণা: পর্যবেক্ষণ শব্দটি এসেছে ইংরেজি Observation শব্দ থেকে, যার অর্থ হলো দেখা বা নজর রাখা। গবেষণায় এটি এমন এক প্রক্রিয়া, যেখানে কোনো ঘটনার বাস্তব রূপ চোখে দেখা বা সরাসরি উপস্থিত থেকে বোঝার চেষ্টা করা হয়।

মূল উদ্দেশ্য: এর মূল উদ্দেশ্য হলো গবেষণার জন্য প্রমাণভিত্তিক তথ্য সংগ্রহ করা। গবেষক নিজের ইন্দ্রিয় বা প্রযুক্তিগত যন্ত্রের সাহায্যে ঘটনা, ব্যক্তি বা পরিবেশের আচরণ পর্যবেক্ষণ করেন, যাতে তথ্য বাস্তব ও নির্ভরযোগ্য হয়।

প্রক্রিয়া বা ধাপ:
পর্যবেক্ষণ পদ্ধতিতে সাধারণত নিম্নোক্ত ধাপগুলো অনুসরণ করা হয়—

  • গবেষণার লক্ষ্য ও বিষয় নির্ধারণ

  • পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্র ও অংশগ্রহণকারীদের নির্বাচন

  • পর্যবেক্ষণের ধরন (গোপন বা প্রকাশ্য) নির্ধারণ

  • তথ্য নথিভুক্তকরণ ও বিশ্লেষণ

  • পর্যবেক্ষণ থেকে প্রাপ্ত ফলাফল ব্যাখ্যা করা

প্রকারভেদ:
পর্যবেক্ষণ পদ্ধতিকে বিভিন্নভাবে ভাগ করা যায়—

  • সরাসরি ও পরোক্ষ পর্যবেক্ষণ: গবেষক নিজে উপস্থিত থেকে সরাসরি পর্যবেক্ষণ করেন, আর পরোক্ষ পর্যবেক্ষণে যন্ত্র বা রেকর্ডিং ব্যবহার করা হয়।

  • অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষণ: অংশগ্রহণমূলক পর্যবেক্ষণে গবেষক ঘটনায় নিজে জড়িত থাকেন, আর নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষণে তিনি বাইরে থেকে দেখেন।

  • গোপন ও উন্মুক্ত পর্যবেক্ষণ: কখনও গবেষক নিজের পরিচয় প্রকাশ না করে গোপনে পর্যবেক্ষণ করেন, আবার কখনও অংশগ্রহণকারীরা জানে যে তাদের পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

গুরুত্ব:
এই পদ্ধতি গবেষণাকে বাস্তব তথ্যের সঙ্গে সংযুক্ত রাখে। এটি প্রশ্নোত্তর বা সাক্ষাৎকারের তুলনায় অনেক ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য, কারণ এতে অংশগ্রহণকারীর মিথ্যা তথ্য দেওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। এছাড়া এটি মানুষের স্বাভাবিক আচরণ, সামাজিক সম্পর্ক, ও পরিবেশগত প্রভাব সম্পর্কে গভীর ধারণা দেয়।

সুবিধা:

  • বাস্তব ও নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায়।

  • আচরণগত পরিবর্তন সরাসরি দেখা যায়।

  • গবেষণার প্রাথমিক ধারণা বা তত্ত্ব গঠনে সহায়ক।

  • পর্যবেক্ষক নিজেই তথ্য যাচাই করতে পারেন।

অসুবিধা:

  • পর্যবেক্ষণে পক্ষপাতের ঝুঁকি থাকে।

  • সময় ও ব্যয়ের প্রয়োজন হয় বেশি।

  • কিছু ক্ষেত্রে পর্যবেক্ষক উপস্থিত থাকলে অংশগ্রহণকারীর আচরণ পরিবর্তিত হতে পারে।

  • সব ধরনের গবেষণায় এটি প্রযোজ্য নয়।

পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি গবেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম, যা বাস্তব জীবনের তথ্য সংগ্রহে অমূল্য ভূমিকা পালন করে। এই পদ্ধতির মাধ্যমে গবেষক সরাসরি বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করেন, ফলে গবেষণার ফলাফল হয় অধিক নির্ভরযোগ্য ও প্রাসঙ্গিক। তাই সমাজবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান কিংবা শিক্ষাবিজ্ঞানে গবেষণার ক্ষেত্রে পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি অপরিহার্য।

© LXMCQ, Inc. - All Rights Reserved

Developed by WiztecBD