রাদারফোর্ড ও বোর পরমাণু মডেলের পার্থক্য ব্যাখ্যা করো।
পরমাণু নিয়ে বিজ্ঞানের ইতিহাসে অনেক মডেল প্রস্তাব করা হয়েছে। তার মধ্যে রাদারফোর্ড মডেল ও বোর মডেল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই দুটি মডেলের মধ্যে মূল পার্থক্য বোঝা গেলে আমরা পরমাণুর গঠন ও বৈশিষ্ট্য ভালোভাবে বুঝতে পারি।
১. রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেল
-
প্রস্তাবক: আর্নেস্ট রাদারফোর্ড (১৯১১)
-
মূল ধারণা: পরমাণুর কেন্দ্রভাগে একটি ঘন, ধনাত্মক চার্জযুক্ত নিউক্লিয়াস থাকে।
-
ইলেকট্রনের অবস্থান: ইলেকট্রন নিউক্লিয়াসের চারপাশে বিন্যাসহীনভাবে ভ্রমণ করে।
-
সীমাবদ্ধতা: রাদারফোর্ড মডেল ব্যাখ্যা করতে পারেনি কেন ইলেকট্রন নিয়মিত কক্ষপথে থাকে এবং বিকিরণ করতে পারে না।
-
মূল উদাহরণ: “সোনার ফয়েল পরীক্ষা” দ্বারা রাদারফোর্ড প্রমাণ করেছিলেন নিউক্লিয়াসের উপস্থিতি।
২. বোরের পরমাণু মডেল
-
প্রস্তাবক: নিলস বোর (১৯১৩)
-
মূল ধারণা: ইলেকট্রন নিউক্লিয়াসের চারপাশে নিয়মিত কক্ষপথে (orbit) অবস্থান করে, যা “স্থায়ী কক্ষপথ” নামে পরিচিত।
-
এনার্জি লেভেল: প্রতিটি কক্ষপথের সাথে একটি নির্দিষ্ট শক্তি স্তর (energy level) যুক্ত থাকে।
-
ফoton নির্গমন: ইলেকট্রন এক কক্ষপথ থেকে অন্য কক্ষপথে চলে গেলে ফোটন নিঃসরণ বা শোষণ করে।
-
সীমাবদ্ধতা: শুধু হাইড্রোজেন পরমাণুর জন্য সঠিকভাবে কাজ করে, ভারী পরমাণুর জন্য পুরোপুরি প্রযোজ্য নয়।
মূল পার্থক্য
| বৈশিষ্ট্য | রাদারফোর্ড মডেল | বোর মডেল |
|---|---|---|
| ইলেকট্রনের অবস্থান | বিন্যাসহীন | নির্দিষ্ট কক্ষপথে |
| শক্তি স্তর | উল্লেখ নেই | নির্দিষ্ট শক্তি স্তর থাকে |
| বিকিরণ সমস্যা | ব্যাখ্যা করতে পারে না | ব্যাখ্যা করা সম্ভব, ফোটন নির্গমনের মাধ্যমে |
| প্রযোজ্যতা | সব পরমাণুতে | মূলত হাইড্রোজেনে কার্যকর |
উপসংহার:
রাদারফোর্ড মডেল পরমাণুর কেন্দ্রভাগ নির্ধারণ করেছিল, কিন্তু ইলেকট্রনের কক্ষপথ ও স্থায়িত্ব ব্যাখ্যা করতে পারছিল না। বোর মডেল এই সীমাবদ্ধতা দূর করে ইলেকট্রনের স্থায়ী কক্ষপথ ও শক্তি স্তরের ধারণা যোগ করেছে। তাই, বোর মডেলকে রাদারফোর্ড মডেলের উন্নত সংস্করণ বলা যায়।