বাংলাদেশের সংবিধানের বৈশিষ্ট্য কয়টি?

Avatar
calender 19-11-2025

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে দেশের জন্য একটি সংবিধান প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়। এই উদ্দেশ্যে ৩৪ সদস্যবিশিষ্ট সংবিধান প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয়, যার সভাপতি ছিলেন ড. কামাল হোসেন

কমিটি অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে সংবিধানের খসড়া তৈরি করে, যা ১৯৭২ সালের ১৯শে অক্টোবর গণপরিষদে উত্থাপিত হয়। দীর্ঘ আলোচনা ও সংশোধনের পর ৪ঠা নভেম্বর ১৯৭২ সালে সংবিধান গৃহীত হয় এবং ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭২ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান কার্যকর হয়।

বাংলাদেশের সংবিধান একটি লিখিত ও প্রামাণিক দলিল, যা দেশের আইন ও রাষ্ট্র পরিচালনার মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। সংবিধান প্রণয়নের সময় একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য রাখা হয়েছে, যা নিচে তালিকাভুক্ত করা হলো:

সংবিধানের মূল বৈশিষ্ট্যঃ

  1. লিখিত দলিল: সংবিধান একটি লিখিত দলিল, যার ১৫৩টি অনুচ্ছেদ রয়েছে। এটি ১১টি ভাগে বিভক্ত এবং এতে ৭টি তফসিল ও একটি প্রস্তাবনা অন্তর্ভুক্ত।

  2. দুষ্পরিবর্তনীয়: সংবিধানের কোনো ধারা পরিবর্তন বা সংশোধনের জন্য জাতীয় সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের অনুমোদন প্রয়োজন।

  3. রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি: রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে সংবিধানে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা নির্ধারণ করা হয়েছে।

  4. মৌলিক অধিকার: সংবিধান নাগরিকদের জীবনধারণ, চলাফেরা, বাকস্বাধীনতা, চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা, ধর্মচর্চা এবং সম্পত্তি অধিকার নিশ্চিত করে।

  5. সর্বজনীন ভোটাধিকার: সংবিধান অনুযায়ী, সকল নাগরিক ১৮ বা তদূর্ধ্ব বয়সে ভোটাধিকার অর্জন করে, জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ বা পেশার নির্বিশেষে।

  6. প্রজাতান্ত্রিক ব্যবস্থা: বাংলাদেশ একটি প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র, যেখানে সকল ক্ষমতার উৎস জনগণ এবং জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা রাষ্ট্র পরিচালনা করে।

  7. সংসদীয় সরকারব্যবস্থা: সংবিধান অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভা সরকারের কার্যক্রম পরিচালনা করে এবং আইনসভার কাছে দায়বদ্ধ থাকে।

  8. এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র: বাংলাদেশ একক কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা পরিচালিত হয়। কোনো অঙ্গরাজ্য বা প্রাদেশিক সরকার নেই।

  9. আইনসভা: সংবিধান অনুযায়ী, বাংলাদেশের এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভা 'জাতীয় সংসদ', যার ৩৫০ জন সদস্য থাকে এবং মেয়াদ ৫ বছর।

  10. সর্বোচ্চ আইন: সংবিধান হলো রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন, যার সঙ্গে কোনো আইনের সংঘাত ঘটলে সংবিধানই প্রাধান্য পাবে।

  11. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা: সংবিধান স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থার বিধান দেয়।

সংক্ষেপে, বাংলাদেশের সংবিধান লিখিত, দুষ্পরিবর্তনীয়, প্রজাতান্ত্রিক ও নাগরিকদের অধিকার রক্ষাকারী। এটি দেশের আইন ও শাসনের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করে এবং জনগণকে সুরক্ষা, স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে।

© LXMCQ, Inc. - All Rights Reserved