অবচয় কাকে বলে?
কোনো স্থায়ী সম্পদ (যেমন– মেশিন, আসবাবপত্র, ভবন, যানবাহন ইত্যাদি) ব্যবহার, পুরনো হয়ে যাওয়া, সময়ের প্রভাব বা প্রযুক্তিগত উন্নতির কারণে যখন ধীরে ধীরে তার মূল্য কমে যায়, সেই মূল্যহ্রাসকেই অবচয় বলা হয়। হিসাববিজ্ঞানে অবচয় হলো স্থায়ী সম্পদের ক্রয়মূল্যকে তার ব্যবহারযোগ্য মেয়াদের বিভিন্ন বছরে নিয়মিতভাবে ভাগ করে খরচ হিসেবে দেখানোর প্রক্রিয়া।
নিচে অবচয় সম্পর্কে প্রয়োজনীয় দিকগুলো তালিকাভুক্তভাবে তুলে ধরা হলো—
-
অবচয়ের সংজ্ঞা:
কোনো স্থায়ী সম্পদের ব্যবহার, অপ্রচলন, ক্ষয়প্রাপ্তি ও সময়ের প্রভাবে ধীরে ধীরে যে মূল্যহ্রাস ঘটে, তাকে অবচয় বলে। হিসাববিজ্ঞানে এই মূল্যহ্রাসকে নির্দিষ্ট নিয়মে হিসাবের খাতায় খরচ হিসেবে লিপিবদ্ধ করা হয়। -
কোন সম্পদের ওপর অবচয় ধরা হয়:
-
মেশিনারি
-
অফিসের আসবাবপত্র
-
কম্পিউটার, প্রিন্টার
-
ভবন, যানবাহন, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি
এসব সম্পদ দীর্ঘদিন ব্যবহার করা হয় এবং সময়ের সাথে সাথে এদের মূল্য কমে, তাই এদের ওপর অবচয় হিসাব করা হয়।
-
-
অবচয় কেন ধরা হয় (উদ্দেশ্য):
-
সঠিক লাভ নির্ণয়ের জন্য: সম্পদের খরচকে একবারে না দেখিয়ে ব্যবহার মেয়াদ অনুযায়ী ভাগ করলে প্রতি বছরের প্রকৃত লাভ-ক্ষতি বোঝা যায়।
-
সম্পদের প্রকৃত মূল্য দেখানোর জন্য: ব্যালান্স শিটে সম্পদের বইমূল্য (Book Value) বাস্তবতার কাছাকাছি আনতে।
-
ভবিষ্যতে সম্পদ বদলানোর জন্য প্রস্তুতি: পুরনো সম্পদ বদলে নতুন সম্পদ কেনার তহবিল গঠনে ধারণা পাওয়া যায়।
-
-
অবচয়ের কারণ:
-
ব্যবহারজনিত ক্ষয় (Wear and Tear): নিয়মিত ব্যবহারের ফলে যন্ত্রপাতি, যানবাহন ইত্যাদি ধীরে ধীরে নষ্ট বা দুর্বল হয়।
-
সময়জনিত প্রভাব (Passage of Time): ভবন, আসবাব ইত্যাদি সময়ের সাথে পুরনো হয়ে যায়, মান কমে।
-
প্রযুক্তিগত অপ্রচলন (Obsolescence): নতুন প্রযুক্তি আসার ফলে পুরনো যন্ত্র/ডিভাইস অকার্যকর বা কম দরকারি হয়ে পড়ে।
-
প্রাকৃতিক কারণ: মরিচা ধরা, পচন, আবহাওয়ার প্রভাব ইত্যাদি।
-
-
অবচয় হিসাবের কিছু প্রচলিত পদ্ধতি (সংক্ষেপে):
-
স্ট্রেট লাইন পদ্ধতি (Straight Line Method):
প্রতি বছর সমান অংকের অবচয় ধরা হয়। -
হ্রাসমান অবশিষ্ট পদ্ধতি (Diminishing Balance Method):
প্রতি বছর সম্পদের বইমূল্যের উপর নির্দিষ্ট হারে অবচয় ধরা হয়, ফলে শুরুতে বেশি, পরে কম অবচয় হয়।
-
-
সহজ উদাহরণ:
ধরো, একটি মেশিন ১,০০,০০০ টাকা দিয়ে কেনা হলো, আর ধারণা করা হলো ১০ বছর ব্যবহার করা যাবে, শেষে এর অবশিষ্ট মূল্য থাকবে ১০,০০০ টাকা।-
মোট অবচয়যোগ্য পরিমাণ = ১,০০,০০০ – ১০,০০০ = ৯০,০০০ টাকা
-
যদি স্ট্রেট লাইন পদ্ধতি ধরি, তবে
প্রতি বছরের অবচয় = ৯০,০০০ ÷ ১০ = ৯,০০০ টাকা
অর্থাৎ, হিসাবের খাতায় প্রতি বছর ৯,০০০ টাকা করে অবচয় খরচ ধরা হবে।
-
-
অবচয় না ধরলে সমস্যা কী:
-
লাভ বেশি দেখায় (কারণ সম্পদের খরচ ঠিকমতো ভাগ হয় না)।
-
ব্যালান্স শিটে সম্পদের মূল্য বাস্তবের চেয়ে বেশি থেকে যায়।
-
ব্যবসার আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে ভুল ধারণা তৈরি হয়।
-
সব মিলিয়ে, অবচয় হলো স্থায়ী সম্পদের ধীরে ধীরে কমে যাওয়া মূল্যের হিসাববিজ্ঞানের স্বীকৃতি, যা সঠিক লাভ-ক্ষতি নির্ণয় ও সম্পদের প্রকৃত মূল্য প্রদর্শনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।