কর্তব্য কী?
যে কাজ করা একজন মানুষের জন্য নৈতিকভাবে, সামাজিকভাবে বা আইনগতভাবে অবশ্যক ও দায়িত্বস্বরূপ, সেই কাজকেই কর্তব্য বলা হয়। সহজভাবে বলতে গেলে, কর্তব্য হলো—যে কাজটি আমার করা উচিত, যা করলে আমি সঠিক দায়িত্ব পালন করি, আর না করলে আমি অপরাধী, গাফিল বা দায়িত্বহীন হিসেবে ধরা পড়ি। মানুষের পদ, পরিচয়, সম্পর্ক ও অবস্থান অনুযায়ী কর্তব্য ভিন্ন ভিন্ন হয়—যেমন ছাত্রের কর্তব্য, নাগরিকের কর্তব্য, সন্তানের কর্তব্য, শিক্ষকের কর্তব্য ইত্যাদি।
নিচে কর্তব্য সম্পর্কে প্রয়োজনীয় দিকগুলো তালিকাভুক্তভাবে তুলে ধরা হলো—
-
সংজ্ঞা:
যে কাজ করা একজন ব্যক্তির জন্য “অবশ্যক, প্রয়োজনীয় ও ন্যায়সঙ্গত” এবং যা না করলে সে দায়িত্বহীন বলে গণ্য হয়, তাকে কর্তব্য বলে। অর্থাৎ, কর্তব্য হলো মানুষের ওপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্যকর্মের সামগ্রিক রূপ। -
নৈতিক দৃষ্টিতে কর্তব্য:
মানুষের বিবেক ও নৈতিকতা যে কাজকে “সঠিক ও করা উচিত” বলে নির্দেশ করে, তা নৈতিক কর্তব্যের অন্তর্ভুক্ত।-
যেমন: সত্য কথা বলা, প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা, অন্যায় না করা, দুর্নীতি থেকে বিরত থাকা ইত্যাদি।
-
-
সামাজিক দৃষ্টিতে কর্তব্য:
সমাজে শান্তি, শৃঙ্খলা ও সহযোগিতা বজায় রাখতে মানুষকে যে দায়িত্বগুলো পালন করতে হয়, সেগুলো সামাজিক কর্তব্য।-
যেমন: অন্যের অধিকার সম্মান করা, প্রতিবেশীর খোঁজখবর রাখা, সামাজিক আইন-কানুন মানা ইত্যাদি।
-
-
আইনগত কর্তব্য:
রাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী যে কাজগুলো করা বাধ্যতামূলক বা নিষিদ্ধ, তা আইনগত কর্তব্যের অংশ।-
যেমন: কর প্রদান করা, ট্রাফিক আইন মানা, অপরাধ না করা, রাষ্ট্রবিরোধী কাজ থেকে বিরত থাকা ইত্যাদি।
-
-
ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কর্তব্য:
পরিবারের প্রতি, আত্মীয়-স্বজনের প্রতি এবং নিজের প্রতি কিছু বিশেষ দায়িত্ব থাকে, যেগুলো ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কর্তব্য হিসেবে বিবেচিত।-
যেমন: পরিবারের ভরণ-পোষণ করা, বাবা-মায়ের সেবা করা, সন্তানের সুশিক্ষার ব্যবস্থা করা, নিজের স্বাস্থ্য ও চরিত্র সংরক্ষণ করা।
-
-
কর্তব্য পালনের গুরুত্ব:
-
ব্যক্তিজীবনে সম্মান, বিশ্বাসযোগ্যতা ও আত্মতৃপ্তি অর্জিত হয়।
-
পরিবারে শান্তি ও ভালোবাসা দৃঢ় হয়।
-
সমাজে শৃঙ্খলা, ন্যায়বোধ ও সহযোগিতামূলক পরিবেশ গড়ে ওঠে।
-
রাষ্ট্র ও জাতি শক্তিশালী ও উন্নত হতে পারে।
-
-
কর্তব্য ও অধিকারের সম্পর্ক:
কর্তব্য ও অধিকার একে অপরের পরিপূরক।-
কারও কর্তব্য পালন অন্য কারও অধিকার নিশ্চিত করে।
-
যেমন: শিক্ষকের কর্তব্য ঠিকভাবে পড়ানো; তার ফলেই ছাত্রের “শিক্ষা পাওয়ার অধিকার” পূর্ণ হয়।
-
-
উদাহরণ দিয়ে বোঝা:
-
একজন ছাত্রের কর্তব্য হলো নিয়মিত পড়াশোনা করা, শিক্ষককে সম্মান করা, বিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা মানা।
-
একজন নাগরিকের কর্তব্য হলো আইন মানা, কর প্রদান করা, দেশকে ভালোবাসা ও দেশের উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখা।
-
সব মিলিয়ে, কর্তব্য এমন এক ধারণা, যা মানুষকে দায়িত্বশীল, শৃঙ্খলাবদ্ধ ও নৈতিকভাবে সোজা পথে চলতে সাহায্য করে। যে ব্যক্তি নিজের কর্তব্য ঠিকভাবে পালন করে, সে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র—তিন অঙ্গনেই উপকারী ও সম্মানিত হয়ে ওঠে।