যৌগিক বাক্য কাকে বলে?
যৌগিক বাক্য এমন এক ধরনের বাক্য যেখানে দুটি বা তার বেশি সরল বাক্য সমুচ্চয়ী অব্যয় বা যোজক অব্যয় দ্বারা যুক্ত হয়ে একটি সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করে। এতে প্রতিটি বাক্যাংশ আলাদা হলেও তারা মিলিত হয়ে একই প্রসঙ্গের একটি বৃহত্তর ধারণা তুলে ধরে। লেখার গঠন ও ভাবপ্রকাশকে স্পষ্ট ও সাবলীল করতে যৌগিক বাক্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নিচে ধারাবাহিকভাবে প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো দেওয়া হলো।
-
যৌগিক বাক্য গঠনে অন্তত দুইটি স্বাধীন বাক্যাংশ থাকে, যেগুলো একাই সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করতে সক্ষম।
-
এগুলোকে যুক্ত করার জন্য “এবং, কিন্তু, কিংবা, অথবা, তাই, তবে” ইত্যাদি সমুচ্চয়ী অব্যয় ব্যবহার করা হয়, যা বাক্যাংশগুলোর মধ্যে অর্থগত সম্পর্ক তৈরি করে।
-
যৌগিক বাক্যের প্রতিটি অংশের ন্যূনতম একটি করে কর্তা ও বিধেয় থাকে, তাই প্রতিটি অংশ স্বাধীনভাবে সরল বাক্য হিসেবেও দাঁড়াতে পারে।
-
যৌগিক বাক্যের উদ্দেশ্য হলো একাধিক ভাব বা ঘটনা একই বাক্যের মধ্যে সাবলীলভাবে উপস্থাপন করা, যা লেখাকে আরো সমৃদ্ধ ও প্রাঞ্জল করে।
-
এই ধরনের বাক্যে সাধারণত সমান্তরাল গঠন থাকে, অর্থাৎ বাক্যাংশগুলোর রূপ ও ভাব পরস্পরের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।
-
যৌগিক বাক্যে থাকা প্রতিটি অংশে সময়, কারণ, ফল বা তুলনা—এ ধরনের সম্পর্কও থাকতে পারে, তবে এগুলো যুক্ত করা হয় সমুচ্চয়ী অব্যয়ের মাধ্যমে।
-
যেমন উদাহরণ:
“রাত হলো এবং বৃষ্টি নামল।”
এই উদাহরণে “রাত হলো” ও “বৃষ্টি নামল”—দুটি স্বাধীন বাক্যাংশ, কিন্তু ‘এবং’ সমুচ্চয়ী অব্যয় তাদের মিলিয়ে যৌগিক বাক্য গঠন করেছে। -
যৌগিক বাক্য প্রবন্ধ, রচনা, প্রতিবেদন বা যেকোনো আনুষ্ঠানিক লেখায় ভাবের প্রবাহ বজায় রাখতে সাহায্য করে, কারণ এতে সম্পর্কিত ঘটনাগুলো সংযুক্তভাবে প্রকাশ পায়।
-
অন্যদিকে জটিল বাক্যের মতো এতে অব্যয়পদ যুক্ত অনুচ্চ বাক্যাংশ থাকে না, বরং প্রতিটি অংশই পূর্ণাঙ্গভাবে দাঁড়াতে পারে—এটাই যৌগিক বাক্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য।
-
বাংলা ব্যাকরণে যৌগিক বাক্য শেখার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বাক্য গঠনের বৈচিত্র্য, শব্দচয়ন এবং ভাবপ্রকাশের কৌশল আরও ভালোভাবে আয়ত্ত করতে পারে।
-
যৌগিক বাক্য ব্যবহারের সময় অতিরিক্ত দীর্ঘতা এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ খুব বেশি বাক্যাংশ যোগ করলে মূল ভাব দুর্বল হতে পারে।
-
লেখায় যৌগিক বাক্যের সঠিক প্রয়োগ পাঠকের জন্য সহজবোধ্যতা বাড়ায় এবং তথ্যকে সংগতিপূর্ণভাবে উপস্থাপন করতে সহায়তা করে।
এই সমস্ত দিক থেকে বোঝা যায়, যৌগিক বাক্য মূলত দুই বা ততোধিক স্বাধীন ভাবকে একত্রে যুক্ত করে একটি সুসংহত বাক্য হিসেবে প্রকাশ করে, যা বাংলা ভাষায় ভাবপ্রকাশকে আরো গতিশীল ও সম্পূর্ণ করে তোলে।