স্থানীয় সময় কাকে বলে?

Avatar
calender 17-11-2025

স্থানীয় সময় এমন একটি ধারণা, যা পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে সূর্যের অবস্থানের ভিন্নতার কারণে আলাদা আলাদা সময় নির্ধারণে সাহায্য করে। সূর্য যখন নির্দিষ্ট কোনো স্থানের ঠিক মাঝখানে থাকে, তখন সেই অবস্থানকে ভিত্তি করে যে সময় গণনা করা হয়, সেটাই মূলত স্থানীয় সময়। এটি সম্পূর্ণভাবে সূর্যের গতিপথ, দিগন্তে তার অবস্থান এবং মধ্যাহ্নরেখার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। নিচে প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো তালিকা আকারে সাজানো হলো, যাতে বিষয়টি আরও পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়।

স্থানীয় সময় হলো সূর্যের অবস্থানের ওপর নির্ভরশীল সময়। পৃথিবীর প্রতিটি স্থানের দীর্ঘত্ব (longitude) আলাদা হওয়ায় সূর্যের অবস্থানও আলাদা দেখা যায়, তাই প্রতিটি স্থানের স্থানীয় সময়ও ভিন্ন হয়।
সূর্য যখন কোনো স্থানের মধ্যাহ্নরেখার ঠিক উপরে অবস্থান করে, সেই সময়টিকে স্থানীয় মধ্যাহ্ন বা solar noon বলা হয়। এই মুহূর্তে সূর্য আকাশে সর্বোচ্চ উচ্চতায় থাকে এবং তার ভিত্তিতেই স্থানীয় সময় নির্ধারিত হয়।
পৃথিবী ২৪ ঘন্টায় ৩৬০ ডিগ্রি ঘূর্ণন সম্পন্ন করে, অর্থাৎ প্রতি ঘণ্টায় ১৫ ডিগ্রি ঘোরে। তাই প্রতিটি ১৫ ডিগ্রি দীর্ঘত্বের ব্যবধানে সময়ের পার্থক্য হয় এক ঘণ্টা।
একটি স্থানের দীর্ঘত্ব পূর্ব দিকে হলে সময় হবে বেশি, আর পশ্চিম দিকে হলে সময় হবে কম। কারণ পৃথিবীর ঘূর্ণন পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে, ফলে পূর্বের অঞ্চলগুলো সূর্যোদয় আগে দেখে।
স্থানীয় সময় গণনার ক্ষেত্রে মূল সূত্র হলো: প্রতি ডিগ্রি দীর্ঘত্বে সময়ের পার্থক্য ৪ মিনিট। কারণ ১৫ ডিগ্রি = ১ ঘণ্টা, তাই ১ ডিগ্রি = ৪ মিনিট।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ঢাকা শহরের দীর্ঘত্ব প্রায় ৯০° পূর্বে। এর মানে হলো, গ্রিনউইচের তুলনায় ঢাকায় সময় এগিয়ে, কারণ সূর্য এখানে আগে অবস্থান করে।
দেশভেদে বা অঞ্চভেদে মান সময় (standard time) নির্ধারণ করা হয় স্থানীয় সময়ের ভিত্তিতে। মান সময় হলো একটি নির্দিষ্ট দীর্ঘত্বকে কেন্দ্র করে নির্ধারিত স্থানীয় সময়, যাতে দেশের অভ্যন্তরে সময়ের একতা বজায় থাকে।
যেসব দেশে পূর্ব–পশ্চিমে বিস্তৃতি বেশি, সেখানে বিভিন্ন স্থানীয় সময়ের সমস্যা দূর করতে একাধিক সময় অঞ্চল (time zone) ব্যবহার করা হয়। যেমন যুক্তরাষ্ট্রে ছয়টি সময় অঞ্চল আছে।
স্থানীয় সময় ব্যবহার মানুষকে সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত, দৈনন্দিন কাজ, কৃষিকাজ, নৌপরিবহন ইত্যাদি স্বাভাবিকভাবে বুঝতে ও পরিচালনা করতে সাহায্য করে। কারণ এটি প্রকৃতির সঙ্গে সময়ের সম্পর্ককে সবচেয়ে বাস্তবভাবে তুলে ধরে।
মানুষের প্রাচীন সময় নির্ধারণ সম্পূর্ণরূপে স্থানীয় সময়ের ওপর ভিত্তি করে ছিল। সূর্যঘড়ি, ছায়া দেখে সময় নির্ণয় করা, গাছ বা মাটির আর্দ্রতা পর্যবেক্ষণ—সবই স্থানীয় সূর্য-সময় নির্ভর পদ্ধতি ছিল।
স্থানীয় সময়ের সঙ্গে মান সময়ের পার্থক্যই নির্ধারণ করে কোনো স্থানের 'সময় এগিয়ে' বা 'সময় পিছিয়ে' থাকার ধারণা। এটি বিমান চলাচল, সমুদ্রযাত্রা, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, যোগাযোগ এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
স্থানীয় সময়ের গুরুত্ব আধুনিক যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে আরও বেড়েছে। জিপিএস, স্যাটেলাইট তথ্য, আবহাওয়া পূর্বাভাসেও স্থানীয় সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

© LXMCQ, Inc. - All Rights Reserved

Developed by WiztecBD