রাফেজ কি?
রাফেজ এমন এক প্রাকৃতিক উপাদান যা আমাদের দেহে হজম হয় না, কিন্তু হজম প্রক্রিয়াকে সক্রিয় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি মূলত ফল, শাকসবজি, ডাল, শস্যদানা ও বিভিন্ন উদ্ভিজ্জ খাদ্যে পাওয়া যায়। রাফেজকে সাধারণভাবে আঁশজাতীয় পদার্থ বা ডায়েটারি ফাইবার বলা হয়, যা পাচনতন্ত্র পরিষ্কার রাখে এবং শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
• সংজ্ঞা: রাফেজ হলো ফল, সবজি, শস্যদানা ও ডালজাতীয় খাদ্যে থাকা সেলুলোজ নির্মিত এমন এক ধরনের আঁশ যা মানবদেহে হজম হয় না। অর্থাৎ এটি দেহে শক্তি সরবরাহ করে না, তবে পাচনতন্ত্রকে সচল রাখে।
• রাসায়নিক গঠন: রাফেজ মূলত সেলুলোজ, হেমিসেলুলোজ, পেকটিন ও লিগনিন দ্বারা গঠিত। এগুলো উদ্ভিদের কোষপ্রাচীরে থাকে এবং জল শোষণ করার ক্ষমতা রাখে।
• রাফেজের উৎস:
-
ফল যেমন আপেল, পেয়ারা, কলা, কমলা ইত্যাদিতে রাফেজ প্রচুর থাকে।
-
শাকসবজির মধ্যে মিষ্টি কুমড়া, পালংশাক, বাঁধাকপি, গাজর ইত্যাদি ভালো উৎস।
-
শস্যদানা ও ডালজাতীয় খাদ্য যেমন গম, চালের ভূষি, মসুর ডাল, ছোলা ইত্যাদিতেও রাফেজ পাওয়া যায়।
• রাফেজের কার্যকারিতা:
-
এটি আন্ত্রিক গতি বৃদ্ধি করে, ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সাহায্য করে।
-
দেহের অপদ্রব্য ও টক্সিন বের করে দেয়, ফলে অন্ত্র পরিষ্কার থাকে।
-
রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
-
রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখে, ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
-
এটি ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, কারণ আঁশযুক্ত খাবার দীর্ঘসময় পেট ভরিয়ে রাখে।
• রাফেজের অভাবে কী হয়:
-
কোষ্ঠকাঠিন্য, হজমে সমস্যা ও পেট ফাঁপার মতো সমস্যা দেখা দেয়।
-
দীর্ঘমেয়াদে কোলেস্টেরল ও রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।
-
কিছু ক্ষেত্রে ওজন বৃদ্ধি ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও বাড়ে।
• প্রয়োজনীয়তা: প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত রাফেজ থাকা অত্যন্ত জরুরি। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য দিনে গড়ে ২৫–৩০ গ্রাম রাফেজ প্রয়োজন।
• রাফেজের দুই প্রকার:
-
দ্রবণীয় রাফেজ (Soluble Fiber): পানি শোষণ করে জেল তৈরি করে, যা রক্তে কোলেস্টেরল ও গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে রাখে। যেমন ওটস, আপেল, সাইট্রাস ফল।
-
অদ্রবণীয় রাফেজ (Insoluble Fiber): এটি পানিতে দ্রবীভূত হয় না, তবে মলের পরিমাণ বাড়ায় ও দ্রুত বের হতে সাহায্য করে। যেমন গমের ভূষি, সবজির খোসা।
রাফেজ যদিও শক্তি দেয় না, তবু এটি সুস্থ হজম ও সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। নিয়মিত আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ দেহের পরিপাকতন্ত্রকে সঠিকভাবে কার্যকর রাখে, নানা রোগ থেকে রক্ষা করে এবং শরীরকে প্রাকৃতিকভাবে ভারসাম্যপূর্ণ রাখে। তাই এইভাবে বলা যায়, রাফেজ হলো খাদ্যের অপাচ্য অংশ তবে সেটা হলেও এটি সুস্থ জীবনের জন্য অপরিহার্য উপাদান।