পোলার যৌগ কাকে বলে?
পোলার যৌগ এমন এক ধরনের রাসায়নিক যৌগ, যেখানে অণুর মধ্যে ইলেকট্রন সমবণ্টিত না হওয়ার ফলে দুই প্রান্তে ভিন্ন ভিন্ন আধান তৈরি হয়। এই আধানের পার্থক্য অণুকে একটি নির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা ও বৈশিষ্ট্য দেয়, যা তাকে নন–পোলার যৌগ থেকে আলাদা করে। নিচে সহজভাবে পোলার যৌগের বৈশিষ্ট্য, গঠন ও আচরণ তালিকা আকারে তুলে ধরা হলো।
-
ইলেকট্রন অসম বণ্টন থাকা
পোলার যৌগে দুটি পরমাণুর ইলেকট্রন আকর্ষণ ক্ষমতা সমান থাকে না। যে পরমাণুর ইলেকট্রন টানার ক্ষমতা (Electronegativity) বেশি, সে ইলেকট্রনকে বেশি নিজের দিকে টেনে নেয়। ফলে একটি প্রান্ত আংশিক ঋণাত্মক এবং অপর প্রান্ত আংশিক ধনাত্মক চার্জযুক্ত হয়। -
ডাইপোল মোমেন্ট সৃষ্টি হয়
এই আধানের পার্থক্যের কারণে অণুতে একধরনের ডাইপোল মোমেন্ট বা দ্বিমেরু সৃষ্টি হয়। ডাইপোল মোমেন্ট যত বেশি, অণুটি তত বেশি পোলার হিসেবে বিবেচিত হয়। -
অণুর আকার বা জ্যামিতি ভূমিকা রাখে
অনেক সময় দুই বা ততোধিক বন্ধন পোলার হলেও অণুর গঠন যদি সমমিত (Symmetrical) হয়, তবে পূর্ণ অণুটি পোলার নাও হতে পারে। কিন্তু অণুর জ্যামিতি অসমমিত হলে আধানগুলোর সমবিতরণ নষ্ট হয় এবং অণু পোলার হয়। -
উচ্চ ইলেকট্রোনেগেটিভিটির পার্থক্য থাকা
বন্ধনে যুক্ত পরমাণুদের ইলেকট্রোনেগেটিভিটির পার্থক্য যত বেশি, অণুটি তত বেশি পোলার। উদাহরণস্বরূপ, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের মধ্যে পার্থক্য বেশি হওয়ায় পানি একটি অত্যন্ত পোলার অণু। -
জলে সহজে দ্রবীভূত হয়
“Similar dissolves similar” নীতির ভিত্তিতে পোলার যৌগ জলের মতো পোলার দ্রাবকে সহজে দ্রবীভূত হয়। এ কারণে লবণ, চিনি ইত্যাদি জলে দ্রবীভূত হয়। -
স্ফুটনাঙ্ক ও গলনাঙ্ক তুলনামূলক বেশি
পোলার অণুগুলোর মধ্যে আকর্ষণ শক্তি (Dipole–dipole force) বেশি থাকে। তাই পোলার যৌগের স্ফুটনাঙ্ক ও গলনাঙ্ক নন–পোলার যৌগের তুলনায় সাধারণত বেশি। -
তড়িৎচুম্বকীয় বৈশিষ্ট্যে পরিবর্তন আনে
অণুতে চার্জের অসম বণ্টন থাকার কারণে পোলার যৌগ বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রে আলাদা আচরণ করে। অনেক সময় তারা বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রে পুনর্বিন্যস্ত হয়ে যায়। -
উদাহরণ হিসেবে উল্লেখযোগ্য যৌগ
পানি (H₂O), অ্যামোনিয়া (NH₃), হাইড্রোজেন ফ্লুরাইড (HF), ইথানল (C₂H₅OH) ইত্যাদি পোলার যৌগের সাধারণ উদাহরণ। -
হাইড্রোজেন বন্ধন গঠনের সম্ভাবনা বেশি
পোলার যৌগে কিছু ক্ষেত্রে হাইড্রোজেন বন্ধন তৈরি হয়, যা তাদের রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যকে আরও শক্তিশালী করে। পানি এবং অ্যালকোহল এর একটি ভালো উদাহরণ। -
রাসায়নিক বিক্রিয়ায় সক্রিয়তা তুলনামূলক বেশি
পোলার যৌগে আধানের পার্থক্যের কারণে বিক্রিয়াশীলতা (Reactivity) বাড়ে। অনেক বিক্রিয়া বিশেষভাবে পোলার দ্রাবক বা পোলার যৌগের উপস্থিতিতে দ্রুত ঘটে।
এসব বৈশিষ্ট্য থেকে স্পষ্ট যে, যেসব অণুতে ইলেকট্রনের অসম বণ্টনের ফলে দুটি প্রান্তে ভিন্ন আধান সৃষ্টি হয়, সেগুলোকেই পোলার যৌগ বলা হয়। এই যৌগগুলোর গঠন, বৈশিষ্ট্য ও আচরণ রাসায়নিক বিজ্ঞানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।