সহমর্মিতা কাকে বলে?

Avatar
calender 17-11-2025

সহমর্মিতা এমন এক মানবিক গুণ, যা মানুষকে মানুষের কাছে নিয়ে আসে এবং সমাজে ভালোবাসা, সম্প্রীতি ও পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তি তৈরি করে। একজন মানুষ যখন অন্যের কষ্ট বুঝতে পারে, সাহায্যের প্রয়োজন অনুভব করে এবং আন্তরিকভাবে পাশে দাঁড়ায়—তখনই সহমর্মিতার প্রকৃত প্রকাশ ঘটে। এটি শুধু ব্যক্তিগত গুণ নয়, একটি গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থারও গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি, যা সবাইকে একসূত্রে বেঁধে রাখে।

নিচে সহমর্মিতা সম্পর্কে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো পয়েন্ট আকারে উপস্থাপন করা হলো—

  • সহমর্মিতা হলো মমত্ববোধের প্রকাশ, যেখানে একজন মানুষের মনে অন্যের প্রতি স্বাভাবিক টান, যত্ন ও আবেগের জন্ম হয়। এতে নিজের স্বার্থের চেয়ে অন্যের কল্যাণকে মূল্য দেওয়ার মানসিকতা গড়ে ওঠে।

  • পরস্পরের সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করার মনোভাবই সহমর্মিতার মূল ভিত্তি। কেউ যখন সমস্যায় পড়ে, তখন তার কষ্টকে নিজের মনে অনুভব করে পাশে দাঁড়ানো—এ মনোভাবই সমাজে পারস্পরিক বন্ধন তৈরি করে।

  • গণতান্ত্রিক সমাজে সহমর্মিতা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ গণতন্ত্রের মূল শক্তি হলো মানুষে মানুষে সমতা, সম্মান ও সহযোগিতা। সহমর্মিতার মাধ্যমে ব্যক্তি ও রাষ্ট্রের মধ্যে আস্থার সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়।

  • সহমর্মিতা বৈষম্য দূর করতে সাহায্য করে। ধনী-গরিব, শক্তিশালী-দুর্বল বা শহর-গ্রামের পার্থক্য দূর করে সবাইকে সমান মর্যাদায় মূল্যায়ন করার মানসিকতা গঠন করে এই গুণ।

  • এটি সামাজিক সম্প্রীতি বজায় রাখার অন্যতম হাতিয়ার। যখন কেউ দুর্বল মানুষের পাশে দাঁড়ায়, অসহায়কে সাহায্য করে বা বিপদে পড়া মানুষের প্রতি সহানুভূতি দেখায়, তখন সমাজে শান্তি ও ভ্রাতৃত্ববোধ আরও শক্তিশালী হয়।

  • সহমর্মিতা মানে শুধু দান বা সাহায্য করা নয়, বরং একজন মানুষের অনুভূতিকে বোঝা, তার প্রয়োজনকে উপলব্ধি করা এবং যথাযথভাবে সাড়া দেওয়া। এটি মানুষের চরিত্রকে উন্নত করে এবং হৃদয়ে মানবিক মূল্যবোধ জাগিয়ে তোলে।

  • ব্যক্তি-মানুষের আচরণে সহমর্মিতা ইতিবাচক পরিবর্তন আনে। যেমন—রাস্তার বিপদগ্রস্ত মানুষকে সাহায্য করা, অসুস্থ প্রতিবেশীকে খোঁজ নেওয়া, সহপাঠীর সমস্যা শুনে সমাধানে পাশে দাঁড়ানো—এসব ছোট ছোট কাজই বড় সামাজিক পরিবর্তনের সূচনা করে।

  • পরিবার, বিদ্যালয় ও সমাজে সহমর্মিতা চর্চার প্রয়োজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ শিশুরা বড়দের আচরণ দেখে শেখে। তাই পরিবার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মানবিক গুণাবলি চর্চাকে উৎসাহিত করলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আরও দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠে।

  • সহমর্মিতা মানসিক শান্তি ও আত্মতৃপ্তি দেয়। অন্যের উপকার করার অনুভূতি মানুষের ভেতরে ইতিবাচকতা তৈরি করে এবং মানসিক সুখ বাড়ায়। ফলে সামাজিক সম্পর্কও আরও দৃঢ় হয়।

  • মানুষের মৌলিক মানবিক গুণ হিসেবেই সহমর্মিতা সম্মিলিত অগ্রগতির পথ খুলে দেয়। কারণ যে সমাজে সবাই একে অপরের পাশে থাকে, সেখানে উন্নয়ন, শান্তি ও নিরাপত্তা—সবই নিশ্চিত হয়।

সংক্ষেপে বলা যায়, সহমর্মিতা হলো মানুষের হৃদয়ে থাকা মমত্ব, ভালোবাসা, অপরের দুঃখ ভাগাভাগি করার মানসিকতা এবং একে অপরকে সহযোগিতা করার নৈতিক দায়িত্ববোধ। এটি ব্যক্তিকে পরিশুদ্ধ করে, সমাজকে সুসংহত করে এবং রাষ্ট্রকে স্থিতিশীল করে তোলে।

© LXMCQ, Inc. - All Rights Reserved

Developed by WiztecBD