মৌলিক অধিকার বলতে কী বোঝায়?

Avatar
calender 17-11-2025

মৌলিক অধিকার যে কোনো রাষ্ট্রের নাগরিক জীবনের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। এগুলো না থাকলে মানুষ তার ব্যক্তিত্ব, চিন্তা, বিশ্বাস ও জীবনযাপনের স্বাধীনতা পুরোপুরি বিকাশ করতে পারে না। তাই সংবিধান নাগরিকের নিরাপত্তা, স্বাধীনতা ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে কিছু অধিকারকে বিশেষ মর্যাদা দিয়ে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এগুলো শুধু নৈতিক দাবি নয়—রাষ্ট্রকে বাধ্যতামূলকভাবে মানতে হয় এবং লঙ্ঘিত হলে নাগরিক আদালতের শরণাপন্ন হতে পারেন। নিচে মৌলিক অধিকার সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় তথ্য পয়েন্ট আকারে তুলে ধরা হলো।

  • মৌলিক অধিকার হলো রাষ্ট্রপ্রদত্ত বিশেষ অধিকার, যা একজন নাগরিকের ব্যক্তিত্ব, চিন্তা, নৈতিকতা ও মানসিক বিকাশের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

  • এগুলো সাধারণ অধিকার থেকে ভিন্ন, কারণ মৌলিক অধিকার সংবিধান দ্বারা নিশ্চিত এবং আদালত মাধ্যমে বলবৎযোগ্য

  • বাংলাদেশের সংবিধানে ২৭ থেকে ৪৪ নম্বর অনুচ্ছেদ পর্যন্ত মোট ১৮টি মৌলিক অধিকার উল্লেখ আছে, যা নাগরিকের অধিকারসুরক্ষার ভিত্তি।

  • আইনের দৃষ্টিতে সকলের সমতা (অনুচ্ছেদ 27)—কোনো নাগরিক জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ বা জন্মসূত্রে বৈষম্যের শিকার হবেন না।

  • চাকরিতে সমঅধিকার (অনুচ্ছেদ 29)—যোগ্যতার ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় চাকরির সমান সুযোগ পেতে সবাই অধিকারী।

  • ব্যক্তিস্বাধীনতা ও জীবনধারণের অধিকার (অনুচ্ছেদ 32)—কোনো ব্যক্তিকে আইন ছাড়া জীবন ও স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।

  • গ্রেপ্তার ও আটক বিষয়ে সুরক্ষা (অনুচ্ছেদ 33)—অবৈধ গ্রেপ্তার বা আটক থেকে নাগরিককে সুরক্ষা প্রদান করা হয়েছে।

  • চিন্তা, বিবেক ও বাক্-স্বাধীনতা (অনুচ্ছেদ 39)—মত প্রকাশ ও চিন্তা প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে, যা গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি।

  • ধর্মীয় স্বাধীনতা (অনুচ্ছেদ 41)—প্রত্যেক নাগরিক স্বাধীনভাবে ধর্ম পালন, প্রচার ও সম্প্রদায়ের আচার পালনের অধিকার রাখে।

  • চলাফেরার স্বাধীনতা (অনুচ্ছেদ 36)—দেশের যেকোনো স্থানে চলাফেরা ও বসবাসের অধিকার দেওয়া হয়েছে।

  • সমিতি ও সংঘ গঠনের অধিকার (অনুচ্ছেদ 38)—নাগরিকরা শান্তিপূর্ণভাবে সমিতি বা সংগঠন গঠন করতে পারেন।

  • সম্পত্তি অর্জন, মালিকানা ও ভোগের অধিকার (অনুচ্ছেদ 42)—রাষ্ট্র আইন অনুযায়ী নাগরিকের সম্পত্তির অধিকারকে সুরক্ষা দেয়।

  • ন্যায্য বিচারের অধিকার—নাগরিক ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য স্বাধীন আদালতে মামলা করতে পারবেন।

  • মৌলিক অধিকার শুধু নাগরিকের স্বাধীনতাই নয়, রাষ্ট্রের ক্ষমতা প্রয়োগকেও নিয়ন্ত্রিত করে। ফলে রাষ্ট্র নাগরিকদের ওপর ইচ্ছামত চাপ প্রয়োগ করতে পারে না।

  • এসব অধিকার লঙ্ঘিত হলে নাগরিক হাইকোর্টে রিট আবেদন করতে পারেন, যা মৌলিক অধিকারকে বাস্তবে কার্যকর করার অন্যতম মাধ্যম।

  • মৌলিক অধিকার কার্যকর থাকা মানে একটি রাষ্ট্রে গণতন্ত্র, জবাবদিহি ও মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠিত থাকা।

  • রাষ্ট্র চাইলে সাধারণ আইনের মাধ্যমে এসব অধিকার কমাতে পারে না; তবে জাতীয় নিরাপত্তা, জনশৃঙ্খলা, নৈতিকতা বা রাষ্ট্রীয় স্বার্থের প্রয়োজনে কিছু যুক্তিসঙ্গত সীমাবদ্ধতা আরোপ করা যায়।

  • মৌলিক অধিকার সকল নাগরিকের জন্য সমান হলেও কিছু অধিকার অ-নাগরিকদের জন্যও প্রযোজ্য, যেমন—ন্যায্য বিচার পাওয়ার অধিকার।

  • আধুনিক বিশ্বে মৌলিক অধিকার মানবাধিকারের ধারাবাহিকতা হিসেবে বিবেচিত হয় এবং রাষ্ট্রের অগ্রগতির একটি গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠি।

এইভাবে বলা যায়—মৌলিক অধিকার হলো সংবিধান প্রদত্ত এমন সুরক্ষা ও স্বাধীনতার গ্যারান্টি, যা মানুষের স্বাভাবিক, নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ জীবন নিশ্চিত করে।

© LXMCQ, Inc. - All Rights Reserved

Developed by WiztecBD