EPI বা Expanded Program on Immunization একটি গুরুত্বপূর্ণ জনস্বাস্থ্য কর্মসূচি, যা শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্যের সুরক্ষায় বিশাল ভূমিকা রাখে। এটি মূলত নির্দিষ্ট কিছু টিকার মাধ্যমে এমন রোগগুলোকে প্রতিরোধ করে, যেগুলো আগে শিশু মৃত্যুর প্রধান কারণ ছিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ১৯৭৪ সালে প্রথম এই কর্মসূচি চালু করে এবং বাংলাদেশ ১৯৭৯ সালে এটি গ্রহণ করে। সময়ের সঙ্গে প্রোগ্রামটি আরও বিস্তৃত, শক্তিশালী ও সহজলভ্য হয়েছে। নিচে সহজ ভাষায় এর প্রয়োজনীয় ও মূল তথ্যগুলো তালিকা আকারে দেওয়া হলো।
-
EPI-এর পূর্ণরূপ Expanded Program on Immunization, বাংলায় এক্সপ্যান্ডেড প্রোগ্রাম অন ইমিউনাইজেশন। এর উদ্দেশ্য শিশু ও গর্ভবতী মায়েদের নিয়মিত টিকা প্রদান নিশ্চিত করা।
-
বাংলাদেশে EPI পরিচালনা করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের টিকাদান কর্মসূচি, যা দেশের সব ইউনিয়ন, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন এলাকাকে অন্তর্ভুক্ত করে। এতে কমিউনিটি ক্লিনিক, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
-
প্রোগ্রামের মূল লক্ষ্য হলো প্রতিরোধযোগ্য রোগ থেকে জনগণকে সুরক্ষা দেওয়া। বিশেষ করে হাম, ডিফথেরিয়া, টিটেনাস, পোলিও, নিউমোনিয়া, রুবেলা, রোটা ভাইরাসজনিত ডায়রিয়ার মতো রোগগুলোকে নিয়ন্ত্রণ এবং নির্মূল করা।
-
শিশুর জন্মের পরপরই টিকাদান শুরু হয়, যা নির্দিষ্ট সময়সূচি অনুসারে ধাপে ধাপে দেওয়া হয়। সাধারণত ০–১৫ মাস বয়সী শিশুদের মধ্যে বেশিরভাগ টিকা সম্পন্ন করা হয়।
-
EPI-এর অধীনে দেওয়া প্রধান টিকাগুলোর মধ্যে রয়েছে:
-
বিসিজি (BCG) – যক্ষ্মা প্রতিরোধে
-
ওপিভি (OPV) ও আইপিভি (IPV) – পোলিও প্রতিরোধে
-
পেন্টাভ্যালেন্ট টিকা – ডিফথেরিয়া, টিটেনাস, হুপিং কাশি, হেপাটাইটিস-বি ও হিমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা-বি প্রতিরোধে
-
পিসিভি (PCV) – নিউমোনিয়া প্রতিরোধে
-
এমআর (Measles-Rubella) – হাম ও রুবেলা প্রতিরোধে
-
রোটা ভাইরাস টিকা – শিশুদের মারাত্মক ডায়রিয়া প্রতিরোধে
-
টিটা (TT) – গর্ভবতী মায়েদের টিটেনাস প্রতিরোধে
-
-
গর্ভবতী মায়েদের জন্য টিটেনাস টিকা বাধ্যতামূলক, যা প্রসবকালীন সংক্রমণ কমায় এবং নবজাতককে টিটেনাস থেকে রক্ষা করে। এই টিকাগুলো মা ও শিশুর জীবন রক্ষায় সরাসরি ভূমিকা রাখে।
-
EPI বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে, যেমন পোলিওদেশ নির্মূল, টিটেনাস নিয়ন্ত্রণ, হাম কেস উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে যাওয়া। এটি স্বাস্থ্যসেবায় দেশের সবচেয়ে সফল কর্মসূচিগুলোর একটি।
-
টিকাগুলো সম্পূর্ণ বিনামূল্যে প্রদান করা হয়, যাতে দেশের প্রত্যন্ত এলাকার শিশুরাও সমানভাবে সুরক্ষা পায়। নিয়মিত টিকাদান কেন্দ্রের পাশাপাশি বিশেষ ক্যাম্পেইনের মাধ্যমেও টিকাদান কার্যক্রম জোরদার করা হয়।
-
প্রোগ্রামটি শিশু মৃত্যুহার কমাতে বিশাল ভূমিকা রেখেছে, কারণ টিকা পাওয়া শিশুরা বিভিন্ন সংক্রমণজনিত প্রাণঘাতী রোগ থেকে নিরাপদ থাকে। WHO ও UNICEF নিয়মিতভাবে বাংলাদেশকে প্রশংসা করে টিকাদানের সফলতার জন্য।
-
EPI ব্যবস্থার মধ্যে টিকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কোল্ড চেইন ম্যানেজমেন্ট ব্যবহৃত হয়, যেখানে ভ্যাকসিন নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা হয়। এতে টিকার কার্যকারিতা বজায় থাকে।
-
সামাজিক সচেতনতা, স্বাস্থ্যকর্মীদের নিবেদন এবং সরকারি উদ্যোগের কারণে বাংলাদেশে টিকাদান কভারেজ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নে বড় অবদান রাখছে।
তোমার দেওয়া তথ্যকে ভিত্তি করে এই উত্তরটি সম্পূর্ণ মৌলিকভাবে, সহজ ভাষায় এবং SEO উপযোগী করে তৈরি করা হয়েছে।