আমার জীবনের লক্ষ্য প্রবন্ধ রচনা লিখো।
আমার জীবনের লক্ষ্য
মানুষের জীবন তখনই অর্থপূর্ণ হয়, যখন সে নিজের জন্য একটি স্পষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারে। শৈশবে লক্ষ্য হতে পারে নানা রকম—কেউ অভিনেতা হতে চায়, কেউ খেলোয়াড়, কেউ আবার সামান্য দেখায় এমন কোনো পেশাকেও বড় স্বপ্ন মনে করে। আমিও ছোটবেলায় পাড়ার আইসক্রিমওয়ালাকে দেখে ভাবতাম, যদি সারাদিন আইসক্রিম বিক্রি করতে পারতাম আর মন ভরে আইসক্রিম খেতে পারতাম! আবার বাবার বদলির চাকরির জন্য বিভিন্ন জেলা ঘোড়ার অভিজ্ঞতা আমাকে প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্নও দেখিয়েছে। তবে জীবনের প্রকৃত লক্ষ্য নির্ধারণে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছেন আমার দাদা। তাঁর শিক্ষা আমাকে বুঝিয়েছে, জীবনের লক্ষ্য শুধু নিজের জন্য নয়—সমাজ ও দেশের জন্য কিছু করা।
জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ
-
দাদার প্রভাব: দাদা আমাকে শিখিয়েছেন নিজের সুখের বাইরে গিয়ে বৃহত্তর সমাজকে ভাবতে। তাঁর মতে, একটি দেশ তখনই এগোয় যখন তার মানুষজন নিজের জ্ঞান ও সামর্থ্য ব্যবহার করে অন্যের উপকারে আসে।
-
কৃষিবিদ হওয়ার অনুপ্রেরণা: নানা পেশার স্বপ্ন থাকলেও দাদার জীবনদর্শন আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে দেশের কৃষি উন্নয়নে কাজ করতে। তাই আমি ভবিষ্যতে একজন কৃষিবিদ ও কৃষি সংগঠক হতে চাই।
-
কারণ: আমাদের দেশ মূলত কৃষিনির্ভর। অথচ উন্নত কৃষিপদ্ধতি, আধুনিক প্রযুক্তি, উন্নত বীজ বা বৈজ্ঞানিক চাষ সম্পর্কে আমাদের সাধারণ কৃষকের জ্ঞান কম। ফলে উৎপাদন কমে, কৃষক ঠকে এবং মধ্যস্বত্বভোগীরা লাভবান হয়।
লক্ষ্য বেছে নেওয়ার পেছনের অভিজ্ঞতা
-
দাদাবাড়ির খামার: ফরিদপুরের মধুখালীতে দাদার গড়া বহুমুখী কৃষি খামার আমাকে চোখ খুলে দিয়েছে। সেখানে শিখেছি—ইচ্ছা, জ্ঞান ও পরিশ্রম থাকলে একজন মানুষ তার জীবন এবং সমাজ দুটোই বদলে ফেলতে পারে।
-
কৃষকের বাস্তবতা: অনেক কৃষক উন্নত কৃষি প্রযুক্তি জানেন না। তারা দারিদ্র্যের সুযোগে ব্যবসায়ীদের দ্বারা প্রতারিত হয়। এই সমস্যাগুলো আমাকে গভীরভাবে ভাবিয়েছে।
-
শিক্ষিত তরুণদের ব্যর্থতা: দাদা সবসময় বলেন, শহরের বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অনেক তরুণ নিজ গ্রামের উন্নয়নে তাদের শিক্ষা ব্যবহার করে না। এই সত্য আমাকে নিজের ভূমিকা নিয়ে ভাবতে বাধ্য করেছে।
লক্ষ্য পূরণের পরিকল্পনা
-
বহুমুখী খামার প্রকল্প: ভবিষ্যতে গ্রামে গিয়ে একটি যৌথ বহুমুখী খামার স্থাপন করব—যেখানে আধুনিক পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদন, মাছ চাষ, হাঁস-মুরগি পালন ও গবাদি পশু লালন–পালন করা হবে।
-
কৃষকদের প্রশিক্ষণ: গ্রামের কৃষকদের আধুনিক কৃষিবিদ্যা শেখানো হবে। তাদের বাস্তবমুখী প্রশিক্ষণ, উন্নত বীজ, উপকরণ ও যান্ত্রিক পদ্ধতির ব্যবহার দেখানো হবে।
-
কৃষি সংগঠন গড়ে তোলা: মধ্যস্বত্বভোগীর মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়ে কৃষকরা যেন নিজেরাই উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ করতে পারে—সেই লক্ষ্যে শক্তিশালী কৃষি সংগঠন গড়ার চেষ্টা করব।
-
নারী ও তরুণদের সম্পৃক্ততা: গ্রামের নারীদের কৃষিপ্রশিক্ষণ, এবং তরুণদের শিক্ষার পাশাপাশি কৃষিকর্মে দক্ষ করে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। এতে তারা স্বনির্ভর হবে এবং গ্রামের অর্থনীতি শক্তিশালী হবে।
উপসংহার
আমার লক্ষ্য শুধু নিজের উন্নতি নয়—আমার গ্রামের, আমার দেশের উন্নয়ন। কৃষি উন্নয়ন ছাড়া বাংলাদেশের সার্বিক অগ্রগতি সম্ভব নয়। তাই আমি ভবিষ্যতে একজন কৃষিবিদ ও কৃষি সংগঠক হয়ে কৃষির আধুনিকায়ন, উৎপাদন বৃদ্ধি এবং কৃষকের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করতে চাই। আমার স্বপ্ন—গ্রামের কৃষক যখন নিজের জ্ঞান ও শ্রমে সমৃদ্ধ হবে, তখনই সত্যিকারের উন্নত বাংলাদেশ গড়ে উঠবে।