ফার্ম কাকে বলে?
অর্থনীতিতে ফার্ম এমন একটি ধারণা যা উৎপাদনব্যবস্থার মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে। যেকোনো অর্থনীতিতে পণ্য বা সেবা উৎপাদনের জন্য যে প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেয়, উৎপাদন পরিচালনা করে, শ্রম ও পুঁজির ব্যবহার নির্ধারণ করে—তাদেরই ফার্ম বলা হয়। সহজভাবে বলতে গেলে, একই ধরনের দ্রব্য বা সেবা নিয়মিতভাবে উৎপাদন ও বাজারে সরবরাহকারী যেকোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানই ফার্মের অন্তর্ভুক্ত। কাগজ কল, জুতার কারখানা বা একটি আইটি সার্ভিস কোম্পানি—সবই ফার্মের উদাহরণ হতে পারে, যদি তাদের উৎপাদন প্রকৃতি সমজাতীয় হয় এবং তারা বাজারে একটি পৃথক একক হিসেবে কাজ করে।
নিচে ফার্মের ধারণা সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো পরিষ্কারভাবে তুলে ধরা হলো—
-
ফার্ম হলো একটি স্বতন্ত্র উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, যেখানে নির্দিষ্ট ধরণের পণ্য বা সেবা উৎপাদিত হয়। অর্থনীতিতে এটি উৎপাদন প্রক্রিয়ার সবচেয়ে মৌলিক একক।
-
সমজাতীয় দ্রব্য বা সেবা উৎপাদন ফার্মের প্রধান বৈশিষ্ট্য, অর্থাৎ কোনো ফার্ম এক ধরনের বা ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত কয়েক ধরনের পণ্য উৎপাদন করে। যেমন একটি কাগজ কল কেবল কাগজজাত পণ্যই তৈরি করে।
-
ফার্মের একটি নির্দিষ্ট উৎপাদন লক্ষ্য থাকে—উৎপাদনের পরিমাণ নির্ধারণ, ব্যয় হিসাব করা, লাভ বাড়ানো এবং বাজারে টিকে থাকা। প্রতিটি ফার্মই লাভ সর্বাধিক করার জন্য কৌশল নির্ধারণ করে।
-
ফার্ম বাজারের সাথে সরাসরি যুক্ত, কারণ তারা উৎপাদিত পণ্য সরবরাহ করে এবং ভোক্তাদের প্রয়োজন মেটায়। বাজারের চাহিদা অনুযায়ী ফার্ম উৎপাদন বাড়ায় বা কমায়।
-
ফার্ম উৎপাদনের উপকরণগুলো সংগঠিত করে, যেমন—শ্রম, জমি, পুঁজি ও সংগঠন। ফার্ম ঠিক করে কত শ্রম লাগবে, কত পুঁজি বিনিয়োগ হবে এবং কোন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে।
-
ফার্মের মালিকানা বিভিন্ন হতে পারে, যেমন—একক মালিকানা, অংশীদারি ব্যবসা, যৌথ মূলধনি কোম্পানি বা সমবায়। মালিকানার ধরন পরিবর্তিত হলেও ফার্মের মূল কাজ উৎপাদনই থাকে।
-
ফার্ম প্রতিযোগিতার পরিবেশে কাজ করে, অর্থাৎ একই ধরনের পণ্য উৎপাদনকারী অন্য প্রতিষ্ঠানের সাথে বাজারে প্রতিযোগিতা করতে হয়। এটি ফার্মকে পণ্যের মান উন্নয়ন ও উৎপাদন দক্ষতা বাড়াতে উৎসাহিত করে।
-
বিভিন্ন বাজার কাঠামোতে ফার্মের আচরণ ভিন্ন হতে পারে, যেমন—সম্পূর্ণ প্রতিযোগিতা, একচেটিয়া বাজার, অলিগোপলি বা একাধিপত্যমূলক প্রতিযোগিতা। প্রতিটি কাঠামোতে ফার্মের লাভ, মূল্য নির্ধারণ ও উৎপাদন কৌশল আলাদা হয়।
-
ফার্ম অর্থনীতিতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে, কারণ এখানে শ্রমিক, ব্যবস্থাপক থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মী কাজ করেন। একটি ছোট ফার্ম থেকে বড় বহুজাতিক কোম্পানিও ফার্মের অন্তর্ভুক্ত।
-
প্রযুক্তির ব্যবহার ফার্মকে আরও কার্যকর করে, যেমন—আধুনিক যন্ত্রপাতি, অটোমেশন বা সফটওয়্যার ব্যবহারের ফলে উৎপাদন ব্যয় কমে এবং উৎপাদনশীলতা বাড়ে।
-
ফার্ম উদাহরণ: একটি কাগজ কল, একটি জুতার কারখানা, একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি, একটি ডেইরি ফার্ম বা একটি ওয়েব ডিজাইন কোম্পানি—সবই ফার্ম হতে পারে, যদি তারা সমজাতীয় পণ্য বা সেবা নিয়মিত উৎপাদন করে।
এইভাবে অর্থনীতিতে ফার্মকে বোঝা হলে উৎপাদন ব্যবস্থা, বাজার কাঠামো এবং ব্যবসার কার্যপদ্ধতি সহজে ব্যাখ্যা করা সম্ভব হয়।