সালাতের আহকাম কয়টি?
সালাত মুসলমানের জীবনে এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, আর এই ইবাদতটি সঠিকভাবে আদায় করতে হলে কিছু নির্দিষ্ট ফরজ কাজ নির্ভুলভাবে পালন করা আবশ্যক। সালাত শুরু করার আগে যে শর্তগুলো মানতে হয় এবং সালাতের ভিতরে যে ফরজগুলো আছে—দুটোকেই আলাদা করে বলা হয় আহকাম ও আরকান। এই দুই অংশ মিলিয়ে সালাতের ফরজ মোট ১৪টি। এর যেকোনো একটি বাদ পড়লে সালাত শুদ্ধ হয় না। নিচে সহজ ভাষায় প্রতিটি বিষয় সাজানো হলো।
-
সালাতের আহকাম মোট ৭টি, যা সালাতের আগে পালনীয় ফরজ। এর মূল উদ্দেশ্য হলো সালাত আদায়ের উপযুক্ত পরিবেশ ও অবস্থা নিশ্চিত করা।
-
শরীর পাক রাখা—ওযু, গোসল বা প্রয়োজনমতো তায়াম্মুমের মাধ্যমে নিজের শরীরকে পবিত্র করা আবশ্যক।
-
কাপড় পাক থাকা—যে পোশাক পরে সালাত আদায় করা হয়, তাতে নাপাকি থাকা যাবে না।
-
জায়গা পাক থাকা—সালাত যে স্থানে পড়া হয় তা নাপাকি মুক্ত হতে হবে, কারণ নাপাক জায়গা ইবাদতের উপযোগী নয়।
-
সতর ঢাকা—পুরুষের জন্য নাভি থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত এবং নারীদের জন্য মুখমণ্ডল, হাতের কবজি ও পায়ের পাতা ছাড়া পুরো শরীর আবৃত রাখা ফরজ।
-
কিবলামুখী হওয়া—সালাতের সময় কাবার দিকে মুখ করে দাঁড়ানো একটি অপরিহার্য শর্ত।
-
ওয়াক্ত হওয়া—প্রতিটি নামাজের নির্দিষ্ট সময় আছে, তাই সময় হলে তবেই সালাত আদায় করতে হবে।
-
নিয়ত করা—মনে মনে কোন ওয়াক্তের নামাজ পড়া হচ্ছে তা স্থিরভাবে ইচ্ছা করা ফরজ শর্তের অন্তর্ভুক্ত।
উপরের শর্তগুলো পূরণ না হলে সালাত শুরু করাই বৈধ হয় না। এখন সালাতের ভিতরের ফরজগুলো, অর্থাৎ আরকান, যেগুলোর মাধ্যমে সালাতের প্রকৃত কাঠামো গঠিত হয়।
-
আরকান মোট ৭টি, যা সালাতের প্রতিটি ধাপকে সুস্পষ্টভাবে নির্ধারণ করে।
-
তাকবিরে তাহরিমা—“আল্লাহু আকবর” বলে সালাত শুরু করা, এটি সালাতের প্রবেশদ্বার হিসেবে কাজ করে।
-
কেয়াম—দাঁড়িয়ে সালাত পড়া ফরজ; তবে সক্ষম না হলে বসে বা শুয়ে আদায় করা যায়।
-
কেরাত করা—কুরআন থেকে কিছু অংশ তেলাওয়াত করা, যা সালাতের মূল ইবাদতের একটি প্রধান অংশ।
-
রুকু করা—কুরআন পাঠের পর ঝুঁকে আল্লাহর সামনে বিনয় প্রকাশ করা।
-
সিজদাহ করা—মাটিতে কপাল রেখে আল্লাহর নিকট সবচেয়ে নত অবস্থায় যাওয়া।
-
শেষ বৈঠক—তাশাহুদ, দরুদ, দোয়া পড়ে সালাম দেওয়ার পূর্বের বসা।
-
সালাম ফিরিয়ে সালাত শেষ করা—ডান ও বামে সালাম দিয়ে সালাত সম্পন্ন করা।
সালাতের এই ১৪টি ফরজ কাজ অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে পালন করা জরুরি। কারণ এগুলোর কোনো একটি ইচ্ছাকৃত বা ভুলবশত বাদ পড়লে পুরো সালাত বাতিল হয়ে যায় এবং তা পুনরায় আদায় করতে হয়। তাই শিক্ষার্থীরা ও সাধারণ মুসলমানদের উচিত এ বিষয়গুলো ভালোভাবে মনে রাখা এবং নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে সঠিকভাবে সালাত আদায় করার অভ্যাস তৈরি করা।