সরকারের বিভাগ কয়টি?
বাংলাদেশের সরকারব্যবস্থা গণতান্ত্রিক কাঠামোর ওপর প্রতিষ্ঠিত, যেখানে ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষার জন্য সরকারকে তিনটি মৌলিক বিভাগে ভাগ করা হয়েছে। এই তিন বিভাগ সমন্বিতভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করে, নাগরিকের অধিকার রক্ষা করে এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে কার্যকর রাখে। প্রতিটি বিভাগের নিজস্ব ভূমিকা, ক্ষমতা ও দায়িত্ব রয়েছে, যা রাষ্ট্রকে স্থিতিশীল ও সুসংগঠিতভাবে এগিয়ে নিতে সাহায্য করে।
নিচে সরকারের তিনটি বিভাগের কাঠামো, ক্ষমতা ও ভূমিকা তালিকাভুক্তভাবে তুলে ধরা হল—
-
নির্বাহী বিভাগ মূলত রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব পালন করে। এটিকে শাসন বিভাগও বলা হয় কারণ রাষ্ট্রের দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনা, নীতি বাস্তবায়ন এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা এই বিভাগের অধীনেই সম্পন্ন হয়।
-
নির্বাহী বিভাগ তিনটি প্রধান অংশ নিয়ে গঠিত—রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রিপরিষদ। এদের সমন্বিত কার্যক্রমের মাধ্যমে রাষ্ট্রের প্রশাসন পরিচালিত হয়।
-
রাষ্ট্রপতি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে কাজ করেন। তিনি জাতীয় সংসদ সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হন এবং তাঁর কার্যকাল পাঁচ বছর। বাংলাদেশে কোনো ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হতে পারেন, চাই তা ধারাবাহিক হোক বা না হোক।
-
রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করা যায় না যতদিন তিনি দায়িত্বে থাকেন। তবে সংবিধান লঙ্ঘন বা গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগে জাতীয় সংসদ অভিশংসনের মাধ্যমে তাঁকে অপসারণ করতে পারে।
-
রাষ্ট্রপতি হওয়ার মৌলিক যোগ্যতার মধ্যে রয়েছে: বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে, বয়স ন্যূনতম ৩৫ বছর হতে হবে এবং জাতীয় সংসদের সদস্য হওয়ার যোগ্যতা থাকতে হবে।
-
যদি কোনো ব্যক্তি অভিশংসনের মাধ্যমে পদচ্যুত হন, তবে তিনি আর কখনও রাষ্ট্রপতি হতে পারবেন না। এটি সংবিধানে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে।
-
নির্বাহী বিভাগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা হলো রাষ্ট্রের নীতি তৈরি এবং বাস্তবায়ন করা। প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদ এর কেন্দ্রবিন্দু, যারা সরকার পরিচালনার প্রতিটি ক্ষেত্রে বাস্তব পদক্ষেপ নেন এবং রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
-
আইন বিভাগ (বিধান বিভাগ) দেশের আইন প্রণয়ন করে। জাতীয় সংসদ এ বিভাগের মূল প্রতিষ্ঠান, যেখানে সংসদ সদস্যরা আইন তৈরি, সংশোধন এবং বাতিল করার ক্ষমতা রাখেন।
-
আইন বিভাগ নির্বাহী বিভাগের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখে কারণ নীতি বাস্তবায়ন করতে হলে আইন থাকতে হয়। এভাবে দুই বিভাগের মধ্যে ভারসাম্য বজায় থাকে।
-
বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে দেশের বিচারব্যবস্থা পরিচালনা করে। আদালতসমূহ আইন ব্যাখ্যা করে, বিচার করে এবং নাগরিক অধিকার রক্ষা করে। বিচার বিভাগ অন্য দুই বিভাগের ওপর নজরদারি রাখে যাতে কোনো বেআইনি কাজ বা ক্ষমতার অপব্যবহার না ঘটে।
-
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংবিধান দ্বারা নিশ্চিত। এই স্বাধীনতা বিচারব্যবস্থার নিরপেক্ষতা বজায় রাখে এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে।
-
তিনটি বিভাগের পারস্পরিক সম্পর্ক দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোকে শক্তিশালী করে। এক বিভাগ আরেকটির ওপর নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য বজায় রাখে, যা সুস্থ রাষ্ট্রচালনার পূর্বশর্ত।
-
নির্বাহী, আইন ও বিচার — এই তিন বিভাগের সমন্বিত কার্যক্রমই রাষ্ট্রকে কার্যকর ও গতিশীল রাখে।
এই তিনটি বিভাগ একে অপরকে পরিপূরক হিসেবে কাজ করে, ফলে রাষ্ট্র পরিচালনায় সুশাসন, জবাবদিহিতা ও জনস্বার্থ সর্বাগ্রে নিশ্চিত হয়।