পরাশ্রয়ী বর্ণ কয়টি?
বাংলা ভাষার উচ্চারণ ও ব্যাকরণে পরাশ্রয়ী বর্ণগুলোর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো নিজেরা স্বতন্ত্র বর্ণের মতো উচ্চারিত না হলেও অন্য বর্ণের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ধ্বনি পরিবর্তন করে এবং শব্দকে অর্থবহ করে তোলে। তাই পরাশ্রয়ী বর্ণ কতটি ও কী—এ বিষয়টি জানা বাংলা বানান–ব্যাকরণ বুঝতে সাহায্য করে। বাংলা বর্ণমালায় মোট তিনটি পরাশ্রয়ী বর্ণ রয়েছে: ং, ঃ এবং ঁ। নিচে এগুলোর ব্যবহার, বৈশিষ্ট্য ও উদাহরণ নিয়ে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হলো।
-
পরাশ্রয়ী বর্ণ তিনটি হওয়ার কারণ হলো এগুলো স্বাধীনভাবে কোনো শব্দ শুরু করতে পারে না, বরং অন্য বর্ণের আশ্রয় নিয়ে উচ্চারণ তৈরি করে। তাই এদের ‘পরাশ্রয়ী’ বলা হয়।
-
ং (অনুস্বার) সাধারণত শব্দের মাঝখানে বা শেষে ব্যবহৃত হয় এবং একটি নাসিক্য ধ্বনি তৈরি করে। অনেক ক্ষেত্রে এটি ঙ, ণ, ন, ম ইত্যাদি ব্যঞ্জনবর্ণের সংক্ষিপ্ত রূপের মতো কাজ করে। যেমন: বাংলা, চন্দ্র, গঙ্গা। অনুস্বার শব্দের স্বরধ্বনিকে নাসিক্য রূপ দেয়, যা বাংলা উচ্চারণকে স্বাভাবিক ও সঠিক রাখতে সাহায্য করে।
-
ঃ (বিসর্গ) বিশেষভাবে সংস্কৃতজাত শব্দে দেখা যায়। এটি একধরনের ফুসফুসীয় নিঃশ্বাসের মতো হালকা ধ্বনি নির্দেশ করে। বিসর্গের পরে আসা ব্যঞ্জনবর্ণের ওপর নির্ভর করে এর উচ্চারণ সামান্য পরিবর্তিত হয়। যেমন: দুঃখ, দুঃসাহস, প্রঃণাম। বাংলা শব্দে এর ব্যবহার তুলনামূলক কম হলেও ভাষার ঐতিহ্যগত রূপ ধরে রাখতে বিসর্গ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
-
ঁ (চন্দ্রবিন্দু) স্বরধ্বনিকে নাসিক্য রূপ দেওয়ার জন্য ব্যবহার হয় এবং এটি সাধারণত স্বরের উপর বসে। চন্দ্রবিন্দু ব্যবহারে শব্দের উচ্চারণে স্পষ্ট নাসিক্যতা তৈরি হয়। যেমন: ঁচড়া, হাঁস, চাঁদ, নাঁকো। বাংলা কথ্য ভাষায় এই নাসিক্য উচ্চারণ অত্যন্ত স্বাভাবিক, তাই চন্দ্রবিন্দুর উপস্থিতি বাস্তব ভাষাকে লিপিতে ধরে রাখতে সহায়ক।
-
পরাশ্রয়ী বর্ণগুলোর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এরা স্বতন্ত্র ধ্বনি না হয়ে অন্য বর্ণের সঙ্গে মিলিত হয়ে ধ্বনি তৈরি করে। তাই এগুলো ব্যঞ্জনবর্ণ বা স্বরবর্ণ নয়; বরং উচ্চারণ-সহায়ক চিহ্ন।
-
বাংলা বানান শুদ্ধভাবে লিখতে এবং শব্দের প্রকৃত উচ্চারণ বজায় রাখতে পরাশ্রয়ী বর্ণের ব্যবহার জানা জরুরি। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের জন্য অনুস্বার, বিসর্গ ও চন্দ্রবিন্দুর সঠিক ব্যবহার শুদ্ধ লেখার ভিত্তি গঠন করে।
-
সমসাময়িক বাংলা বানানে কিছু শব্দে বিকল্প রূপ থাকলেও ভাষাতাত্ত্বিক নিয়ম অনুযায়ী পরাশ্রয়ী বর্ণের সংখ্যা তিনটিই। বর্তমান ব্যাকরণ বই, অভিধান ও ভাষাবিজ্ঞান গবেষণা—সব ক্ষেত্রেই এ তথ্য সর্বজনস্বীকৃত।
সবশেষে বলা যায়, বাংলা বর্ণমালায় পরাশ্রয়ী বর্ণ তিনটি: ং, ঃ এবং ঁ—এগুলো শব্দকে শুদ্ধ, স্বাভাবিক ও অর্থবহভাবে উচ্চারণে সহায়তা করে। এদের ব্যবহার শিখলে বাংলা ভাষার ধ্বনি-বিন্যাস ও লেখার নিয়ম আরও পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়।