গিফেন দ্রব্য কি?
গিফেন দ্রব্য এমন এক ধরনের অর্থনৈতিক ধারণা, যেখানে মানুষের স্বাভাবিক আচরণ ঠিক উল্টোভাবে কাজ করে। সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী কোনো দ্রব্যের দাম বাড়লে তার চাহিদা কমে যায়, আর দাম কমলে চাহিদা বাড়ে। কিন্তু গিফেন দ্রব্যের ক্ষেত্রে ঘটে তার সম্পূর্ণ বিপরীত—দাম বাড়লে মানুষ বেশি কিনে এবং দাম কমলে কম কিনে। এই আচরণ মূলত দরিদ্র মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় খাবারের ক্ষেত্রে দেখা যায়, যেগুলো ছাড়া জীবনধারণ কঠিন। তাই এই ধারণা বোঝার জন্য মানুষের বাস্তব জীবনযাপন, আয়, প্রয়োজন এবং বাজারের প্রতিক্রিয়া—সবকিছু একসাথে বিবেচনা করতে হয়।
-
গিফেন দ্রব্য হলো এমন দ্রব্য যার দাম বাড়লে চাহিদা বাড়ে এবং দাম কমলে চাহিদা কমে যায়। অর্থনীতিতে এটি একটি বিরল কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ব্যতিক্রম, যা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ক্ষেত্রে দেখা যায়।
-
গিফেন দ্রব্য সাধারণত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রধান খাদ্যদ্রব্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। যেমন চাল, ডাল, লবণ, তেল বা যেসব খাবার পরিবারকে বাঁচিয়ে রাখার ন্যূনতম চাহিদা পূরণ করে।
-
দামের বৃদ্ধি চাহিদা বাড়ায় কারণ এটি ভবিষ্যৎ ভয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত। মানুষ মনে করে, দাম আরও বাড়তে পারে বা বাজারে সংকট তৈরি হতে পারে। তাই তারা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি কিনে রাখার চেষ্টা করে।
-
দামের হ্রাসে চাহিদা কমে যায় কারণ মানুষের হাতে অতিরিক্ত অর্থ থাকে। তখন তারা কম মানের গিফেন দ্রব্যের বদলে কিছুটা উন্নতমানের বা পছন্দের খাবার কেনার দিকে ঝুঁকে পড়ে, ফলে গিফেন দ্রব্যের চাহিদা কমে।
-
গিফেন দ্রব্য ‘আনুগত্য প্রভাব’ বা ‘income effect’-এর সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত। আয় সীমিত থাকার কারণে এসব দ্রব্যের দাম বাড়লে মানুষ অন্য দ্রব্য বাদ দিয়ে এই সস্তা মূলধারার পণ্য বেশি কিনে নিতে বাধ্য হয়।
-
গিফেন দ্রব্য বিলাসী দ্রব্য নয়। এগুলো এমন পণ্য নয় যা আনন্দ বা বিলাসের জন্য কেনা হয়; বরং এগুলো জীবনধারণে মৌলিক ভূমিকা পালন করে।
-
এ প্রভাব সবচেয়ে বেশি দেখা যায় নিম্নআয়ের পরিবারে। ধনী পরিবারের ক্ষেত্রে সাধারণত গিফেন আচরণ দেখা যায় না, কারণ তারা দাম বাড়লেও বিকল্প কিনতে সক্ষম।
-
গিফেন দ্রব্যের ক্ষেত্রে ক্রেতার মনস্তত্ত্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাজারব্যবস্থা, ভবিষ্যৎ সংকটের ভয়, আয়হ্রাসের চাপ—সবকিছু মিলে এই অস্বাভাবিক চাহিদা তৈরি হয়।
-
গিফেন দ্রব্যকে সাধারণত নিম্নমানের দ্রব্য (inferior goods) বলা হলেও সব নিম্নমানের দ্রব্য গিফেন নয়। গিফেন হওয়ার জন্য চাহিদার উল্টো আচরণ অবশ্যই ঘটতে হবে, যা খুব নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে দেখা যায়।
-
বাংলাদেশসহ অনেক উন্নয়নশীল দেশে গিফেন আচরণের উদাহরণ পাওয়া যায়। বিশেষ করে চাল, আলু, ডাল বা প্রধান খাদ্যশস্যের দামের ওঠানামায় অনেক সময় এই ঘটনাটি পরিলক্ষিত হয়।
-
গিফেন দ্রব্যের ধারণা বাজার বিশ্লেষণে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তা নীতি নির্ধারকদের সতর্ক করে। দাম নিয়ন্ত্রণ, ভর্তুকি প্রদান বা বাজার স্থিতিশীল করার ক্ষেত্রে এই ব্যতিক্রমী আচরণ বিবেচনায় রাখা জরুরি।
সারসংক্ষেপে বলা যায়, গিফেন দ্রব্য অর্থনীতির একটি বিশেষ শ্রেণি, যা মানুষের বাস্তব জীবনের সংগ্রাম, দারিদ্র্য এবং বাজার সংকটের প্রতিফলন। সামান্য দাম পরিবর্তনেও মানুষের ক্রয় আচরণ কীভাবে উল্টো দিকে চলে যায়, তা গিফেন দ্রব্যের মাধ্যমেই সবচেয়ে স্পষ্টভাবে বোঝা যায়।