অর্থের সময়মূল্য এমন একটি ধারণা যা বোঝায় যে আজকের এক টাকা ভবিষ্যতের এক টাকার সমান নয়। সময় যত এগোতে থাকে, অর্থের ক্রয়ক্ষমতা, বিনিয়োগের সুযোগ ও ঝুঁকির কারণে এর প্রকৃত মূল্য পরিবর্তিত হয়। তাই অর্থ ব্যবস্থাপনা, বিনিয়োগ পরিকল্পনা, সঞ্চয় বা ঋণ—সব ক্ষেত্রেই সময়মূল্য বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
• সময়ের সাথে অর্থের মূল্য পরিবর্তনের মূল কারণ হলো ক্রয়ক্ষমতা। সময়ের সাথে মুদ্রাস্ফীতির কারণে অর্থের ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়। আজকে ১০০ টাকায় যা পাওয়া যায়, পাঁচ বছর পরে একই জিনিস কিনতে হয়তো আরও বেশি টাকা লাগতে পারে।
• বিনিয়োগের সুযোগও সময়মূল্যের জন্য দায়ী। আজকের টাকা এখনই বিনিয়োগ করলে সুদ বা লাভ অর্জন করা যায়। কিন্তু ভবিষ্যতের টাকা এখন বিনিয়োগ করা যায় না। ফলে বর্তমান অর্থের মূল্য তুলনামূলকভাবে বেশি ধরা হয়।
• ঝুঁকি বা অনিশ্চয়তার প্রভাব সময়মূল্যকে প্রভাবিত করে। ভবিষ্যৎ সবসময় অনিশ্চিত। অর্থ পাওয়ার সম্ভাবনা কমে গেলে তার ভবিষ্যৎ মূল্যও কম ধরে নেওয়া হয়। ফলে বর্তমান অর্থকে বেশি মূল্যবান মনে করা হয়।
• সুযোগ ব্যয়ের ধারণাও অর্থের সময়মূল্যে যুক্ত। কোনো টাকা আজ ব্যবহার না করে ভবিষ্যতের জন্য রেখে দিলে সেই সময়ের মধ্যে সম্ভাব্য লাভ হারাতে হয়। তাই আজকের অর্থের মূল্য স্বাভাবিকভাবেই বেশি।
• বর্তমান মূল্য (PV) ও ভবিষ্যৎ মূল্য (FV) ধারণা সময়মূল্য বোঝার ভিত্তি। ভবিষ্যতে একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের অর্থের বর্তমান মূল্য কত হতে পারে বা বর্তমান অর্থ ভবিষ্যতে কত হতে পারে—এই গণনাগুলো সময়মূল্যের উপর ভিত্তি করে করা হয়।
• সুদের হার সময়মূল্যের প্রধান নির্ধারক। সুদের হার যত বেশি, বর্তমান অর্থের মূল্য তত বেশি ধরা হয়, কারণ তা ভবিষ্যতে বেশি হারে বৃদ্ধি পেতে পারে।
• মুদ্রাস্ফীতি সময়মূল্য নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখে। বাজারে পণ্যের দাম ক্রমাগত বাড়লে অর্থের মূল্য কমে যায়। তাই ভবিষ্যতের অর্থ সবসময় কম কার্যকর হিসেবে বিবেচিত হয়।
• বিনিয়োগ পরিকল্পনা বা ফাইন্যান্সিয়াল ডিসিশন নেওয়ার সময় সময়মূল্য অত্যন্ত জরুরি। ঋণ গ্রহণ, কিস্তি নির্ধারণ, ভবিষ্যৎ সঞ্চয়, মেয়াদি আমানত বা বিনিয়োগ—সব ক্ষেত্রেই সময়মূল্য বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
• এটি ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত গ্রহণের একটি মূলনীতি। কোনো প্রকল্পে বিনিয়োগ লাভজনক কি না তা নির্ধারণ করতে বর্তমান মূল্য ও ভবিষ্যৎ নগদ প্রবাহ বিশ্লেষণ করা হয়, যা সময়মূল্যের উপর নির্ভর করে।
• ব্যক্তিগত অর্থ ব্যবস্থাপনাও সময়মূল্যের ধারণা ছাড়া অসম্পূর্ণ। সঞ্চয়, পেনশন পরিকল্পনা, শিশুদের ভবিষ্যৎ ব্যয়—সব হিসাবেই ভবিষ্যতের অর্থ আজ কত মূল্যবান হবে বা আজকের অর্থ ভবিষ্যতে কত বাড়বে তা বিবেচনা করতে হয়।
সব মিলিয়ে বলা যায়, সময় পরিবর্তনের সাথে অর্থের মূল্য পরিবর্তিত হওয়াকেই অর্থের সময়মূল্য বলা হয়, এবং অর্থ ব্যবস্থাপনার প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে এ ধারণাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।