দ্রব্য কি?

Avatar
calender 15-11-2025

দ্রব্য অর্থনীতির একটি অত্যন্ত মৌলিক ধারণা, যা মানুষের প্রয়োজন পূরণে সরাসরি ভূমিকা রাখে। যেকোনো বস্তুগত বা অবস্তুগত জিনিস, যা মানুষের অভাব বা চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম, অর্থনীতিতে তাকে দ্রব্য বলা হয়। অর্থাৎ, মানুষের উপকারে আসে এমন সব কিছুই দ্রব্যের আওতাভুক্ত। এই ধারণাটি অর্থনৈতিক বিশ্লেষণে গুরুত্বপূর্ণ কারণ উৎপাদন, ভোগ, মূল্য, বাজার—সবই দ্রব্যকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে।

  • মানুষের প্রয়োজন পূরণের ক্ষমতাই দ্রব্যের মূল বৈশিষ্ট্য। যে জিনিস মানুষের জীবনে উপকার আনে বা কোনও অভাব মেটায়, সেটিকে অর্থনীতিতে দ্রব্য হিসেবে ধরা হয়। যেমন পানি, খাদ্য, পোশাক—এগুলো বস্তুগত দ্রব্য। আবার শিক্ষা, মেডিকেল সার্ভিস, পরিবহন—এগুলো অবস্তুগত দ্রব্য।

  • দ্রব্য দুই ধরনের—বস্তুগত ও অবস্তুগত।
    বস্তুগত দ্রব্য হলো যেগুলো স্পর্শ করা যায়, দেখা যায় এবং ব্যবহার করা যায়। যেমন বই, ফোন, আসবাব, গাড়ি।
    অবস্তুগত দ্রব্য হলো যেগুলোকে দেখা বা ছোঁয়া না গেলেও এগুলো মানুষের প্রয়োজন মেটায়। যেমন চিকিৎসা সেবা, শিক্ষা, পরামর্শ, সফটওয়্যার সার্ভিস ইত্যাদি।

  • দ্রব্যের মধ্যে উপযোগিতা (Utility) থাকা জরুরি। কোনো জিনিস মানুষের কাছে প্রয়োজনহীন হলে তা দ্রব্য হিসেবে গণ্য হয় না। উপযোগিতা হলো সেই ক্ষমতা যা ভোক্তার চাহিদা পূরণ করে। উদাহরণস্বরূপ, পুরোনো কাগজ কারও কাছে মূল্যহীন, কিন্তু কাগজ পুনর্ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে তা মূল্যবান দ্রব্য।

  • দ্রব্যকে অর্থনীতিতে সীমিত বা দুর্লভ (Scarce) হিসেবে বিবেচনা করা হয়। প্রচুর পরিমাণে পাওয়া গেলেও যদি সেগুলো সংগ্রহ, উৎপাদন বা ব্যবহার করতে শ্রম ও সম্পদের প্রয়োজন হয়, তবে সেগুলোকে দ্রব্য ধরা হয়। উদাহরণস্বরূপ, নদীর পানি স্বাভাবিকভাবে পাওয়া গেলেও বিশুদ্ধ পানির জন্য প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রয়োজন, তাই এটি দ্রব্য।

  • দ্রব্যের মাধ্যমে অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। উৎপাদক দ্রব্য উৎপাদন করে, ভোক্তা তা ব্যবহার করে, আর বাজারে এর বিনিময়ে মূল্য নির্ধারিত হয়। অর্থনীতির এই ধারাবাহিকতাই অর্থনৈতিক কাঠামোকে সচল রাখে।

  • দ্রব্যকে ভোগ্য দ্রব্য ও উৎপাদন দ্রব্য হিসেবেও ভাগ করা হয়।
    ভোগ্য দ্রব্য হলো যেগুলো সরাসরি মানুষ ব্যবহার করে। যেমন খাবার, জামা, বাসস্থান।
    উৎপাদন দ্রব্য হলো যেগুলো অন্য দ্রব্য উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। যেমন মেশিন, কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি।

  • দ্রব্যের চাহিদা ও সরবরাহ অর্থনৈতিক বিশ্লেষণের মূল ভিত্তি। মানুষের প্রয়োজন যত বাড়ে, দ্রব্যের চাহিদাও তত বাড়ে। আর উৎপাদকরা বাজারে সেই চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করে। ফলে বাজারে দ্রব্যের মূল্য নির্ধারণ, মজুত, বণ্টন—সবই এই চাহিদা-সরবরাহ ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করে।

  • দ্রব্যের মূল্যায়ন অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি জাতীয় আয়, উৎপাদন, ভোগব্যয়, বিনিয়োগ ইত্যাদি হিসাব করতে সহায়তা করে। প্রতিটি দ্রব্যের অর্থনৈতিক মূল্য মানুষের উপযোগিতা ও বাজারচাহিদার ওপর নির্ভর করে ঠিক হয়।

সুতরাং, মানুষের অভাব বা প্রয়োজন পূরণে সক্ষম যে কোনো দৃশ্যমান বা অদৃশ্য উপযোগী জিনিসই অর্থনীতিতে দ্রব্য হিসাবে বিবেচিত হয়। এটি অর্থনীতির মৌলিক ধারণা এবং সব ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এর ওপর নির্ভরশীল।

© LXMCQ, Inc. - All Rights Reserved

Developed by WiztecBD