ধংস বানান শুদ্ধ করে লেখ।
বাংলা ভাষায় শুদ্ধ বানান ব্যবহার করা শুধু লেখার সৌন্দর্য বাড়ায় না, একই সঙ্গে ভাষার সঠিক অর্থ ও প্রয়োগও নিশ্চিত করে। “ধংস” শব্দটি অনেকের কাছে পরিচিত হলেও এটি শুদ্ধ রূপ নয়। শুদ্ধ বানান “ধ্বংস”, যা অর্থের দিক থেকেও প্রতিষ্ঠিত ও বহুল ব্যবহৃত। নিচে শব্দটির উৎস, উচ্চারণ, ব্যবহার ও ভুল–শুদ্ধের কারণগুলো স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হলো যাতে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হয়।
-
“ধ্বংস” শব্দটি সংস্কৃত থেকে আগত, যার মূল ধাতু হলো “ধ্বংস্”, অর্থাৎ সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যাওয়া, ভেঙে পড়া বা বিনাশ হওয়া। বাংলা ভাষায় এর শুদ্ধ উচ্চারণে স্পষ্টভাবে “ধ্ব” ধ্বনির উপস্থিতি রয়েছে।
-
“ধ্ব” একটি যৌগিক ব্যঞ্জনধ্বনি, যা “ধ + ” মিলিয়ে তৈরি। তাই স্বাভাবিকভাবে “ধংস” লিখলে মধ্যবর্তী “” বা “ব” উচ্চারণ বাদ পড়ে যায় এবং শব্দটি অর্থগতভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে।
-
ব্যঞ্জন-যোগের কারণে শব্দটি “ধ্বংস” রূপেই শুদ্ধ, যেমন বাংলা বানানে “বিধ্বস্ত”, “ধ্বনি”, “অধ্বংস্য”, “ধ্বংসস্তুপ” ইত্যাদি শব্দগুলোতেও একই যৌগিক ধ্বনি ব্যবহৃত হয়।
-
“ধংস” লিখলে বাংলা উচ্চারণ ব্যাকরণে ব্যাঘাত ঘটে, কারণ এই বানানটি অনুযায়ী শব্দটি পড়া উচিত “ধ-ং-স”, যেখানে “ভ” বা “” ধ্বনি অনুপস্থিত। ফলে অর্থগত সঙ্গতি নষ্ট হয় এবং এটি অশুদ্ধ বানান হিসেবে গণ্য হয়।
-
বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান ও অন্যান্য মানক অভিধানসমূহে শুধুমাত্র “ধ্বংস” বানানটি স্বীকৃত। মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের যেকোনো পরীক্ষায় “ধ্বংস” ছাড়া অন্য কোনো বানান গ্রহণযোগ্য নয়।
-
অর্থের দিক থেকেও “ধ্বংস” শব্দটি প্রতিষ্ঠিত, যার বিভিন্ন ব্যবহার রয়েছে: দেশ ধ্বংস, সম্পদ ধ্বংস, পরিবেশ ধ্বংস, ভবন ধ্বংস, যুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞ ইত্যাদি। সবক্ষেত্রেই “ধ্ব” ধ্বনিযুক্ত রূপটাই অর্থ প্রকাশে যথার্থ।
-
শব্দগঠনের নীতিতে “ধ্বংস” একটি বিসর্গান্ত শব্দ, যা উচ্চারণে “ধ্বঙ্স” রূপ ধারণ করে। বিসর্গের পরবর্তী ব্যঞ্জনের প্রভাবে উচ্চারণে “ঙ্স” ধ্বনি যুক্ত হয়—এ কারণেই “ধ্বংস” শব্দের ধ্বনি-রূপ আরও ভারসাম্যপূর্ণ।
-
বাংলা বানানের সামঞ্জস্য রক্ষা করতে যৌগিক ধ্বনির ব্যবহার অপরিহার্য, বিশেষ করে সংস্কৃতঘটিত শব্দে। “ধ্ব” ধ্বনিটি বাংলা শব্দগঠনে প্রচলিত একটি মূলধ্বনি, যা ভুল বাদ দিলে শব্দের শুদ্ধতা হারায়।
-
অনেকেই দ্রুত লেখার সময় “ধংস” লিখে ফেলেন, কিন্তু এটি বানানের সাধারণ ভুলের একটি উদাহরণ মাত্র। সঠিক চর্চা ও পাঠ্যপুস্তক অনুসরণ করলে সহজেই শুদ্ধ রূপ মনে রাখা যায়।
-
“ধ্বংস” শব্দের সঙ্গে সম্পর্কিত আরও কিছু শব্দ মনে রাখলে বানানটি দীর্ঘমেয়াদে সহজ হয়, যেমন: ধ্বংসাবশেষ, ধ্বংসাত্মক, ধ্বংসকারী, ধ্বংসপ্রাপ্ত, অর্ধ্বংশ ইত্যাদি—যেগুলোর প্রতিটিতে “ধ্ব”-র ব্যবহার স্পষ্ট।
-
শব্দের শুদ্ধ রূপ ব্যবহার করলে বাক্যের অর্থ স্পষ্ট হয় এবং লেখার স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পায়, যেমন: “বন্যায় গ্রামের অনেক ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে”—এখানে শুদ্ধ বানান অর্থকে যথার্থভাবে প্রকাশ করে।
-
ভাষা শেখার ক্ষেত্রে শুদ্ধ বানান একটি মৌলিক স্তম্ভ, তাই লেখালিখির যেকোনো ক্ষেত্রে ভুল বানান এড়িয়ে চলা এবং মানক রূপ ব্যবহার করাই সর্বোত্তম।
এভাবে বোঝা যায়, “ধংস” নয়; শুদ্ধ বানান “ধ্বংস”—যা বাংলা ভাষার ব্যাকরণ, উচ্চারণ, শব্দনীতি এবং অভিধানসমূহে সর্বজনস্বীকৃত।