সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা কাকে বলে?

Avatar
calender 15-11-2025

সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা এমন একটি কাঠামো যেখানে অর্থনৈতিক সম্পদকে ব্যক্তির পরিবর্তে সমাজের সামগ্রিক কল্যাণে ব্যবহার করা হয়। এখানে উৎপাদন, বণ্টন ও ভোগ—সবকিছুর কেন্দ্রেই থাকে জনগণের সমষ্টিগত স্বার্থ।

ব্যক্তিগত লাভের বদলে সামাজিক ন্যায়, সমতা ও সুষম উন্নয়নকে মূল লক্ষ্য ধরা হয়। যে কারণে এই ব্যবস্থা ব্যক্তিগত মালিকানা ও বাজারের অনিয়ন্ত্রিত শক্তির ওপর নির্ভর না করে রাষ্ট্রের পরিকল্পনা, নীতি ও নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে।

  • সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার মূল বৈশিষ্ট্য হলো রাষ্ট্রীয় মালিকানা। ব্যক্তিগত মালিকানার পরিবর্তে কারখানা, জমি, শিল্প, খনিজ সম্পদ এবং অন্যান্য উৎপাদন উপকরণ রাষ্ট্র বা সমাজের যৌথ মালিকানায় থাকে। এর ফলে কোনো ব্যক্তি সম্পদ একচ্ছত্রভাবে দখলে রাখতে পারে না।

  • এই ব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা (Central Planning) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অর্থনীতির কোন খাতে কত উৎপাদন হবে, কোন শিল্পে কত শ্রমিক লাগবে, কোন পণ্য কত দামে বিক্রি হবে—সবকিছুই রাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ পরিকল্পনা করে। এতে বাজারের চাহিদা-যোগানের প্রভাব সীমিত থাকে এবং লক্ষ্য থাকে সুষম উন্নয়ন।

  • লাভ নয়, বরং সামাজিক কল্যাণই এই ব্যবস্থার উদ্দেশ্য। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে বেশি মুনাফা অর্জন সমাজতন্ত্রের লক্ষ্য নয়; বরং শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, কর্মসংস্থান ও মানবিক প্রয়োজন মেটানোই প্রধান উদ্দেশ্য। ফলে রাষ্ট্র উৎপাদন করে জনগণের চাহিদা পূরণের জন্য, ব্যবসায়িক মুনাফার জন্য নয়।

  • আয়-বৈষম্য কমানো সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার আরেকটি মূল লক্ষ্য। ব্যক্তিগত সম্পদ জমা হওয়ার সুযোগ সীমিত থাকায় সমাজে অসমতার পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কমে। প্রত্যেকে তার শ্রম অনুযায়ী আয় পায় এবং সমাজে অর্থনৈতিক অসমতা নিয়ন্ত্রণে থাকে।

  • এই ব্যবস্থায় বাজারের ভূমিকা সীমিত। বাজার মূল্য নির্ধারণ বা বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে মূল কর্তৃত্ব নেই। রাষ্ট্রই নির্ধারণ করে কোন খাতে উন্নয়ন দরকার, কোথায় কী পরিমাণ সম্পদ বরাদ্দ হবে এবং উৎপাদনের লক্ষ্য কী হবে।

  • বেকারত্বের সম্ভাবনা সাধারণত কম থাকে। রাষ্ট্র সব নাগরিককে কর্মসংস্থান দেওয়ার চেষ্টা করে। কেন্দ্রীয় পরিকল্পনার মাধ্যমে শ্রমবণ্টন নির্ধারিত হওয়ায় কর্মসংস্থানের অস্থিরতা তুলনামূলক কম দেখা যায়।

  • অধিকাংশ সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে মৌলিক সেবাসমূহ বিনামূল্যে বা কম খরচে প্রদান করা হয়। যেমন: শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, বাসস্থান, পরিবহন ইত্যাদি খাতে রাষ্ট্রের ব্যাপক অংশগ্রহণ থাকে, যা নাগরিকদের জীবনমান উন্নত করে।

  • চীন, রাশিয়া, ভিয়েতনাম, কিউবা প্রভৃতি দেশ সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার অনুসারী ছিল বা এখনও এর গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বজায় রেখেছে। যদিও সময়ের পরিবর্তনে অনেক দেশ বাজার-অর্থনীতির কিছু উপাদান যুক্ত করেছে, তবুও উৎপাদনের মূল সম্পদে রাষ্ট্রের ভূমিকা এখনও শক্তিশালী।

সার্বিকভাবে সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা হলো এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে উৎপাদনের উপকরণ সমাজের যৌথ মালিকানায় থাকে এবং রাষ্ট্র পরিকল্পনার মাধ্যমে অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করে। এর উদ্দেশ্য হলো সামাজিক ন্যায়, সমতা এবং সকল নাগরিকের কল্যাণ নিশ্চিত করা।

© LXMCQ, Inc. - All Rights Reserved

Developed by WiztecBD