পৌরনীতি ও নাগরিকতা বলতে কি বুঝায়।
পৌরনীতি ও নাগরিকতা এমন একটি ধারণা, যা সমাজে মানুষের অধিকার, কর্তব্য, নৈতিক দায়িত্ব ও রাষ্ট্রের প্রতি দায়বদ্ধতার একটি সুসমন্বিত কাঠামো গঠন করে। বিষয়টি মূলত শেখায়—একজন ব্যক্তি কীভাবে সুশৃঙ্খল, দায়িত্ববান ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধসম্পন্ন নাগরিক হিসেবে সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। একই সঙ্গে এটি বোঝায় রাষ্ট্র কীভাবে নাগরিকের অধিকার রক্ষা করবে এবং আইন-শৃঙ্খলা বজায় রেখে সকলের সমান সুযোগ নিশ্চিত করবে।
-
পৌরনীতি বলতে বোঝায় সমাজ ও রাষ্ট্রে বসবাসকারী মানুষের আচরণ, নৈতিকতা, দায়িত্ববোধ ও সামাজিক কর্তব্যের সমষ্টি। এটি মানুষকে ন্যায়-অন্যায় বিচারের ক্ষমতা দেয় এবং সামাজিক জীবনে সঠিক আচরণের দিকনির্দেশনা প্রদান করে।
-
নাগরিকতা বলতে বোঝায় রাষ্ট্রের সাথে মানুষের আইনি সম্পর্ক ও সদস্যত্ব। নাগরিকত্বের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি রাষ্ট্রীয় পরিচয় পায় এবং রাষ্ট্রের দেওয়া অধিকারভোগের পাশাপাশি নির্দিষ্ট কর্তব্য পালনের দায়িত্ব গ্রহণ করে।
-
পৌরনীতি ও নাগরিকতা একসাথে একজন মানুষের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনের পূর্ণ পরিচয় তৈরি করে। একজন ব্যক্তি যদি নাগরিকত্ব পায় কিন্তু রাষ্ট্রের নিয়ম-কানুন মানে না বা সামাজিক নৈতিকতা অনুসরণ না করে, তবে প্রকৃত নাগরিকত্ব অর্জন সম্ভব হয় না।
-
এ ধারণা মানুষকে দায়িত্বশীল করে তোলে। যেমন—আইন মানা, কর প্রদান, ভোট প্রদান, রাষ্ট্রীয় সম্পদের সুরক্ষা, পরিবেশ রক্ষা, প্রতিবেশীর প্রতি সদাচরণ ইত্যাদি নাগরিক দায়িত্বের অন্তর্গত।
-
পৌরনীতি মানুষকে নীতি–নৈতিকতা শেখায়, যেমন সততা, সহনশীলতা, সহযোগিতা, অন্যের মতামতকে সম্মান করা, ন্যায়বিচারের প্রতি সম্মান, সমতার মূল্যবোধ ইত্যাদি। এগুলো সমাজে শান্তি ও সৌহার্দ্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
-
নাগরিকতা ব্যক্তিকে রাষ্ট্রীয় অধিকারের নিশ্চয়তা দেয়। যেমন—স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের অধিকার, ভোটাধিকার, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার অধিকার, নিরাপত্তা, ন্যায়বিচারের অধিকার ইত্যাদি। এই অধিকারগুলো একজন নাগরিকের মর্যাদা রক্ষা করে।
-
একজন দায়িত্বশীল নাগরিক রাষ্ট্রের উন্নয়নের অংশীদার। নাগরিকরা যদি সচেতন, শিক্ষিত ও দায়িত্ববান হয়, তবে রাষ্ট্র দ্রুত উন্নতির পথে এগিয়ে যায়; অরাজকতা ও দুর্নীতি কমে এবং গণতন্ত্র সুসংহত হয়।
-
পৌরনীতি ও নাগরিকতা শিক্ষার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হলো উন্নত চরিত্র গঠন। স্কুল পর্যায় থেকেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে নৈতিক মূল্যবোধ, দায়িত্ববোধ, মানবিক আচরণ এবং সমাজের প্রতি কর্তব্যবোধ গড়ে তোলাই এই শিক্ষার মূল লক্ষ্য।
-
এই ধারণা সমাজে শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা আনে। কারণ যখন মানুষ তার অধিকার জানে এবং কর্তব্যও পালন করে, তখন সমাজে সংঘাত ও বিশৃঙ্খলা কমে। সবাই একে অপরের প্রতি সহযোগিতামূলক মনোভাব নিয়ে জীবনযাপন করে।
-
পৌরনীতি ও নাগরিকতা রাষ্ট্র ও জনগণের মধ্যে একটি ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করে। নাগরিক রাষ্ট্রের দায়িত্ব পালন করলে রাষ্ট্রও নাগরিকের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। ফলে গড়ে ওঠে একটি স্থিতিশীল, ন্যায়ভিত্তিক ও মানবিক রাষ্ট্রব্যবস্থা।
সংক্ষেপে বলা যায়, পৌরনীতি ও নাগরিকতা হলো রাষ্ট্র ও সমাজে মানুষের অধিকার, কর্তব্য, নৈতিক আচরণ এবং দায়িত্ববোধের সমন্বিত ধারণা, যা একজন মানুষকে পরিপূর্ণ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলে এবং রাষ্ট্রের উন্নয়নে সরাসরি অবদান রাখতে উৎসাহিত করে।