অন্তর্নিহিত শক্তি বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
অন্তর্নিহিত শক্তি বলতে একজন মানুষের ভেতরে থাকা সেই স্বশিক্ষণ ক্ষমতাকে বোঝায়, যা তাকে সত্য, ন্যায় ও মানবিকতার পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে। এই শক্তি অন্য কেউ মানুষের ভেতরে জোর করে প্রবেশ করাতে পারে না; বরং নিজের মন, চিন্তা ও বিবেককে সঠিকভাবে গড়ে তোলার মধ্য দিয়েই তা ধীরে ধীরে বিকশিত হয়। তাই প্রকৃত শিক্ষার লক্ষ্য শুধু বইয়ের তথ্য মুখস্থ করানো নয়, বরং মানুষকে ভেতর থেকে জাগ্রত করে এমন অবস্থানে উন্নীত করা, যেখানে সে নিজেই নিজের পথ শনাক্ত করতে পারে এবং নিজের মনের ওপর নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করতে পারে।
-
অন্তর্নিহিত শক্তি হলো নিজের মনকে নিজের মতো করে গড়ে তোলার সক্ষমতা। এটি এমন এক মানসিক শক্তি যা মানুষের চিন্তা, বিচারবোধ, নৈতিকতা ও মানবিকতাকে সঠিক পথে পরিচালিত করে।
-
প্রকৃত শিক্ষার উদ্দেশ্য মানুষকে ভেতর থেকে মানুষ করে তোলা। বাহ্যিক জ্ঞান একজন মানুষকে তথ্যসমৃদ্ধ করতে পারে, কিন্তু অন্তর্নিহিত শক্তি তাকে সৎ, ন্যায়পরায়ণ ও দায়িত্বশীল মানুষে পরিণত করে।
-
এই শক্তি অন্য কারও দ্বারা সরাসরি দেওয়া সম্ভব নয়। শিক্ষক, অভিভাবক বা সমাজ নির্দেশনা দিতে পারে, কিন্তু ভেতরের জাগরণ ও আত্মবিকাশ মানুষের নিজেরই অর্জন।
-
শিক্ষকের ভূমিকা মূলত পথপ্রদর্শন। তিনি শিক্ষার্থীর কৌতূহল বাড়িয়ে দেন, তার ভাবনার জগৎকে বৃহৎ করে তোলেন এবং জ্ঞানের প্রতি গভীর আগ্রহ সৃষ্টিতে সাহায্য করেন।
-
বুদ্ধিবৃত্তির জাগরণও অন্তর্নিহিত শক্তির বিকাশের একটি অংশ। যখন মানুষ প্রশ্ন করতে শেখে, যুক্তি দিয়ে বিচার করতে শেখে এবং নিজের ভুল বুঝতে পারে—তখনই তার অন্তর্নিহিত শক্তি বৃদ্ধি পায়।
-
মনের ঐশ্বর্য খুঁজে পাওয়া আত্মশক্তিরই প্রকাশ। জ্ঞান-পিপাসা, কৌতূহল, আত্মানুসন্ধান—এসবই একজন মানুষকে ভেতর থেকে সমৃদ্ধ করে, যা শিক্ষার আসল লক্ষ্য।
-
সত্য, ন্যায় ও মানবকল্যাণে অবিচল থাকা অন্তর্নিহিত শক্তির পরিপক্ব রূপ। যে ব্যক্তি নিজের ভেতরের শক্তিকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে, সে সমাজের কল্যাণে কাজ করতে সক্ষম হয় এবং তার সিদ্ধান্তও হয়ে ওঠে দূরদর্শী ও মানবিক।
-
এই শক্তি অর্জনে আত্মশিক্ষাই সবচেয়ে কার্যকর মাধ্যম। বই, শিক্ষক, পরিবেশ কেবল উৎসাহ দিতে পারে; কিন্তু শেখার অভ্যাস তৈরি করা, নিজেকে সংশোধন করা এবং নৈতিক অবস্থান বজায় রাখা—এসবই ব্যক্তিগত প্রচেষ্টার ফল।
-
মানুষের চরিত্র গঠন মূলত তার অন্তর্নিহিত শক্তির ওপর নির্ভরশীল। যার মন দৃঢ় ও পরিশীলিত, সে কঠিন পরিস্থিতিতেও নৈতিকতার বিচ্যুতি ঘটায় না।
-
অন্তর্নিহিত শক্তি মানুষকে আত্মমর্যাদাবোধ ও আত্মনিয়ন্ত্রণ শেখায়। এই দুই গুণ একজনকে সমাজে মর্যাদাপূর্ণ স্থান দেয় এবং ব্যক্তিজীবনে স্থিতিশীলতা আনে।
সব মিলিয়ে বলা যায়, অন্তর্নিহিত শক্তি হলো নিজের মনকে সঠিক পথে পরিচালনা করার সেই ক্ষমতা, যা মানুষকে বাহ্যিক প্রভাবের ঊর্ধ্বে তুলে এনে একজন প্রকৃত, সম্পূর্ণ ও মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষে পরিণত করে।