আন্তঃআণবিক শক্তি কাকে বলে?
আন্তঃআণবিক শক্তি পদার্থের গঠন ও আচরণ বোঝার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ধারণা। পদার্থ কঠিন, তরল বা গ্যাস—যে অবস্থাতেই থাকুক না কেন, তার মধ্যে থাকা অণুগুলো একে অপরকে আকর্ষণ বা বিকর্ষণ করার ফলে নির্দিষ্টভাবে স্থিত থাকে। অণুগুলোর এই আকর্ষণজনিত বন্ধনই পদার্থের রূপ, ঘনত্ব, স্ফুটনাঙ্ক বা গলনাঙ্ক নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখে। সহজভাবে বলতে গেলে, অণুদের একত্রে ধরে রাখার যে শক্তি কাজ করে, সেটিই আন্তঃআণবিক শক্তি। নিচে বিষয়টি আরও পরিষ্কারভাবে তালিকা আকারে তুলে ধরা হলো।
-
আন্তঃআণবিক শক্তি হলো অণুসমূহের মধ্যকার আকর্ষণশক্তি, যা পদার্থের অভ্যন্তরে অণুগুলোকে একত্রে ধরে রাখে এবং তাদের বিচ্ছিন্ন হতে বাধা দেয়।
-
এই শক্তি পদার্থের ভৌত অবস্থা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অণুদের আকর্ষণ বেশি হলে পদার্থ কঠিন অবস্থায় থাকে, মাঝারি হলে তরল এবং খুব কম হলে গ্যাসীয় অবস্থায় পাওয়া যায়।
-
আন্তঃআণবিক শক্তির মূল লক্ষ্য হলো সমগ্র পদার্থের স্থিতিশীলতা বজায় রাখা। যদি অণুগুলোর মধ্যে আকর্ষণশক্তি না থাকত, তবে কোনো পদার্থই একীভূত হয়ে থাকতে পারত না।
-
এ শক্তি বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যেমন ডাইপোল-ডাইপোল আকর্ষণ, লন্ডন ডিসপারশন ফোর্স, হাইড্রোজেন বন্ডিং ইত্যাদি। প্রতিটি শক্তি নির্দিষ্ট ধরনের অণুর মধ্যে ভিন্নভাবে কাজ করে।
-
ডাইপোল-ডাইপোল আকর্ষণ ঘটে মেরুবিশিষ্ট অণুর মধ্যে, যেখানে অণুর এক অংশে আংশিক ধনাত্মক এবং অন্য অংশে আংশিক ঋণাত্মক চার্জ থাকে। এই চার্জের পার্থক্যের কারণে অণুগুলো পরস্পরকে আকর্ষণ করে।
-
লন্ডন ডিসপারশন ফোর্স হলো সবচেয়ে দুর্বল আন্তঃআণবিক শক্তি, যা সব ধরনের অণুর মধ্যেই সামান্যভাবে উপস্থিত থাকে। এটি ইলেকট্রনের সাময়িক অবস্থান পরিবর্তনের ফলে সৃষ্টি হয়।
-
হাইড্রোজেন বন্ডিং তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী আন্তঃআণবিক আকর্ষণ, যা ঘটে বিশেষভাবে হাইড্রোজেন পরমাণু যখন অক্সিজেন, নাইট্রোজেন বা ফ্লোরিনের মতো উচ্চ তড়িৎঋণাত্মক পরমাণুর সঙ্গে যুক্ত থাকে।
-
আন্তঃআণবিক শক্তি পদার্থের স্ফুটনাঙ্ক ও গলনাঙ্ক নির্ধারণ করে। যার আকর্ষণশক্তি যত বেশি, তাকে তরল বা কঠিন থেকে গ্যাসে রূপান্তর করতে তত বেশি তাপ প্রয়োজন হয়।
-
পানির উচ্চ স্ফুটনাঙ্কও এর শক্তিশালী হাইড্রোজেন বন্ডিংয়ের কারণে ঘটে। পানির অণুগুলো একে অপরকে দৃঢ়ভাবে আকর্ষণ করে, ফলে এগুলোকে আলাদা করতে বেশি তাপ লাগে।
-
এ শক্তি তরলের পৃষ্ঠটান, সান্দ্রতা এবং বাষ্পচাপের মতো বৈশিষ্ট্যকেও প্রভাবিত করে। যেমন, পানির পৃষ্ঠটান বেশি হওয়ার কারণ হলো এর মধ্যে শক্তিশালী আন্তঃআণবিক আকর্ষণ।
-
আন্তঃআণবিক শক্তি গ্যাসের সংকোচনেও ভূমিকা রাখে। গ্যাসে অণুদের আকর্ষণ কম হলেও নির্দিষ্ট চাপ প্রয়োগ করলে এই শক্তি অণুগুলোকে কাছাকাছি আনতে সাহায্য করে।
-
দৈনন্দিন জীবনের অনেক ঘটনাই এই শক্তির উপর নির্ভরশীল, যেমন সুগন্ধি ছড়ানো, পানি ফোঁটা হয়ে থাকা, বরফ জমা, মোম গলানো ইত্যাদি।
সব মিলিয়ে বলা যায়, অণুসমূহের পারস্পরিক আকর্ষণের মাধ্যমে পদার্থকে একত্রে ধরে রাখার যে শক্তি, তাকে আন্তঃআণবিক শক্তি বলা হয়। পদার্থের গঠন, বৈশিষ্ট্য ও আচরণ বোঝার ক্ষেত্রে এই শক্তির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।