ধ্বনি ও বর্ণ কাকে বলে?

Avatar
calender 14-11-2025

ধ্বনি ও বর্ণ ভাষার মৌলিক উপাদান, যা শব্দ গঠন এবং উচ্চারণের ভিত্তি তৈরি করে। ভাষা শেখা বা ব্যাকরণ বোঝার ক্ষেত্রে এই দুইটি ধারণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ধ্বনি মূলত উচ্চারণের সঙ্গে সম্পর্কিত, আর বর্ণ হলো লিখিত রূপ—এই পার্থক্য বুঝতে পারলেই ভাষার কাঠামো আরও পরিষ্কারভাবে ধরা যায়। নিচে সহজ ভাষায় ধ্বনি ও বর্ণের সংজ্ঞা এবং প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো তালিকা আকারে তুলে ধরা হলো।

তথ্যসমূহ

  • ধ্বনি হলো শব্দ উচ্চারণে ব্যবহৃত ক্ষুদ্রতম মৌলিক ধ্বনিতাত্ত্বিক একক। আমরা যখন কথা বলি, মুখ, জিহ্বা, ঠোঁট ও স্বরযন্ত্রের সাহায্যে যে ক্ষুদ্র শব্দগুলো তৈরি করি, সেগুলোকেই ধ্বনি বলা হয়।

  • ধ্বনি শোনা যায়, কিন্তু দেখা যায় না। অর্থাৎ ধ্বনির অস্তিত্ব সম্পূর্ণভাবে শ্রবণনির্ভর। এটি লিখে প্রকাশ করা যায় না; কেবল উচ্চারণের মাধ্যমে বোঝা যায়।

  • বাংলা ভাষায় মোট ধ্বনির সংখ্যা ৫২টি। এর মধ্যে স্বরধ্বনি ও ব্যঞ্জনধ্বনি উভয়ই রয়েছে।
    – স্বরধ্বনি: ১১টি
    – ব্যঞ্জনধ্বনি: ৪১টি

  • ধ্বনি বাতাসের কম্পন থেকে তৈরি হয়। স্বরযন্ত্রে বাতাসের চাপ ও ঘর্ষণ সৃষ্টি হলে ধ্বনির জন্ম হয়, এবং এই ধ্বনিগুলো মিলেই শব্দ গঠিত হয়।

  • বর্ণ হলো ধ্বনির লিখিত রূপ। যখন কোনো ধ্বনিকে চিহ্ন বা অক্ষরের মাধ্যমে লেখা হয়, তখন সেই রূপকেই বর্ণ বলা হয়।

  • বর্ণ দেখা যায় ও লেখা যায়। উদাহরণ: ক, খ, গ, আ, ই—এগুলো সবই বর্ণ, যেগুলো চোখে দেখা এবং কাগজে লিখে প্রকাশ করা যায়।

  • বাংলা ভাষায় মোট বর্ণের সংখ্যা ৫০টি।
    – স্বরবর্ণ: ১১টি
    – ব্যঞ্জনবর্ণ: ৩৯টি

  • প্রতিটি বর্ণের সঙ্গে একটি নির্দিষ্ট ধ্বনি সম্পর্কিত। তবে সবসময় এক বর্ণে এক ধ্বনি প্রকাশ পায় না। কিছু ক্ষেত্রে একই বর্ণ ভিন্ন ধ্বনি প্রকাশ করতে পারে—প্রসঙ্গ ও শব্দভেদে উচ্চারণের তারতম্য ঘটে।

  • ধ্বনি শ্রবণভিত্তিক, বর্ণ দৃশ্যভিত্তিক। এই মৌলিক পার্থক্য ধ্বনি ও বর্ণকে আলাদা পরিচয় দেয়।

  • ধ্বনি ভাষার উচ্চারণের ভিত্তি, আর বর্ণ ভাষার লিখনব্যবস্থার ভিত্তি। অর্থাৎ ধ্বনি ছাড়া কথা বলা অসম্ভব, আর বর্ণ ছাড়া লেখা অসম্পূর্ণ।

  • একটি শব্দ ধ্বনির সমষ্টিতে গঠিত হয়, কিন্তু লিখিত রূপ বর্ণের সমষ্টি। যেমন “বাংলা” শব্দটি উচ্চারণে ভিন্ন ভিন্ন ধ্বনি মিলিয়ে তৈরি হয়, আর লিখতে গিয়ে বর্ণগুলো ব্যবহার করা হয়।

  • ধ্বনি মানসচক্ষে প্রকাশ পায় না, কিন্তু বর্ণ চোখে দেখা যায় বলে স্পষ্ট বোধ্য। তাই ভাষাবিজ্ঞানীরা ধ্বনিকে মৌখিক এবং বর্ণকে লিখিত কাঠামোর অংশ হিসেবে বিবেচনা করেন।

  • বর্ণের অস্তিত্ব কাগজ, বই বা ডিজিটাল স্ক্রিনে টেক্সট আকারে থাকে, কিন্তু ধ্বনি কেবলমাত্র মানুষের উচ্চারণের মাধ্যমে থাকে।

সারসংক্ষেপে বলা যায়, ধ্বনি হলো ভাষার শ্রাব্য একক এবং বর্ণ হলো সেই ধ্বনির দৃশ্যমান লিখিত প্রতিরূপ। দুটিই ভাষার ভিত্তি, তবে একটি কথা বলার জন্য অপরিহার্য, আর অন্যটি লেখার জন্য।

© LXMCQ, Inc. - All Rights Reserved

Developed by WiztecBD