পৌরনীতি সংজ্ঞা দাও?
পৌরনীতি এমন একটি শাস্ত্র, যা একজন মানুষের নাগরিক হিসেবে কীভাবে সমাজে ভূমিকা রাখবে, কীভাবে রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখবে এবং কীভাবে অধিকার ও কর্তব্য পালন করে একটি সুশৃঙ্খল সমাজ গড়ে তুলবে—এসব বিষয় সহজ ও সুগঠিতভাবে ব্যাখ্যা করে। এই শাস্ত্র মানুষের সামাজিক, রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় চর্চাকে আরও সচেতন, সংগঠিত ও যুক্তিগ্রাহ্য করে তোলে। পৌরনীতি শুধু বর্তমানের কাজ নয়; এটি নাগরিকতার ইতিহাস, বিবর্তন, ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ এবং দায়িত্ববোধ সম্পর্কেও স্পষ্ট ধারণা দেয়। তাই একজন সচেতন নাগরিক গড়ে তুলতে পৌরনীতি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় জ্ঞানভিত্তিক শাস্ত্র।
-
পৌরনীতি মূলত নাগরিকের অধিকার সম্পর্কে ব্যাখ্যা দেয়, যাতে মানুষের জন্মসূত্রে ও রাষ্ট্র কর্তৃক প্রদত্ত অধিকারগুলো স্পষ্টভাবে চিহ্নিত হয়। এর মধ্যে জীবনধারণের অধিকার, মত প্রকাশের অধিকার, ন্যায়বিচারের অধিকার ও ভোটাধিকার বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
-
নাগরিক কর্তব্য ব্যাখ্যা করাও পৌরনীতির একটি প্রধান অংশ, যেখানে আইন মানা, কর প্রদান, দেশের সুরক্ষায় সহযোগিতা, অন্যের অধিকারকে সম্মান করা এবং সামাজিক শান্তি বজায় রাখা—এসব দায়িত্বের গুরুত্ব বোঝানো হয়।
-
পৌরনীতি স্থানীয় সরকারব্যবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেয়, যেমন ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন—এদের গঠনপদ্ধতি, দায়িত্ব, ক্ষমতা ও নাগরিকসেবার সম্পর্ক। স্থানীয় পর্যায়ে নাগরিক কীভাবে অংশ নেয় এবং স্থানীয় উন্নয়ন কীভাবে হয় তাও এই শাস্ত্র বোঝায়।
-
জাতীয় প্রতিষ্ঠান ও কাঠামো সম্পর্কেও পৌরনীতি স্পষ্ট ধারণা দেয়, যেমন সংসদ, নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, বিভিন্ন সংবিধিবদ্ধ সংস্থা ইত্যাদি। নাগরিক এসব প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা বুঝে রাষ্ট্রের কার্যক্রম সম্পর্কে সচেতন হতে পারে।
-
আন্তর্জাতিক পরিসরে নাগরিকতা ও বৈশ্বিক সহযোগিতার বিষয়ও পৌরনীতির অন্তর্ভুক্ত, যেখানে জাতিসংঘ, SAARC, OIC, UNESCO, UNICEF এর মতো আন্তর্জাতিক সংস্থার কাঠামো, উদ্দেশ্য এবং সেগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আলোচনা করা হয়।
-
পৌরনীতি সমাজবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও নৈতিকতার সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত, কারণ এটি মানুষকে একই সঙ্গে নৈতিক, দায়িত্বশীল ও গণতান্ত্রিক মানসিকতা গড়ে তুলতে সহায়তা করে। একজন নাগরিক যে শুধুমাত্র অধিকার ভোগ করবে না, বরং নৈতিক ও সামাজিক কর্তব্যও পালন করবে—এই ধারণা পৌরনীতি স্পষ্ট করে।
-
নাগরিকতার অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ ব্যাখ্যাও এই শাস্ত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যেখানে মানবসভ্যতার রাজনৈতিক বিবর্তন, রাষ্ট্রব্যবস্থার উন্নয়ন এবং ভবিষ্যৎ নাগরিক চ্যালেঞ্জ যেমন ডিজিটাল গোপনতা, বৈশ্বিক অভিবাসন, পরিবেশ সংকট ইত্যাদি বিষয়ে ধারণা দেওয়া হয়।
-
সুশাসন প্রতিষ্ঠায় পৌরনীতি অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখে, কারণ এটি নাগরিককে সচেতন করে, রাষ্ট্রকে জবাবদিহির কাঠামোর মধ্যে রাখে এবং সমাজকে মেধাবী ও দায়িত্বশীল পথে পরিচালিত করে।
অতএব, নাগরিকের অধিকার ও কর্তব্যসহ সামাজিক, রাজনৈতিক, স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এবং নাগরিকতার ইতিহাস ও ভবিষ্যৎ নিয়ে যে শাস্ত্র আলোচনা করে, তাকে পৌরনীতি বলা হয়।