পর্যায় সারণির বৈশিষ্ট্য লিখ।

Avatar
calender 14-11-2025

পর্যায় সারণি বা Periodic Table মূলত রাসায়নিক মৌলগুলোর এমন একটি বৈজ্ঞানিক বিন্যাস, যা তাদের বৈশিষ্ট্য, পারমাণবিক সংখ্যা এবং ইলেকট্রন বিন্যাসের উপর ভিত্তি করে সাজানো হয়েছে। এই সারণি শুধু মৌলগুলোর অবস্থানই বলে না, বরং তাদের রাসায়নিক ধর্ম, বিক্রিয়াশীলতা, ধাতব বা অধাতব চরিত্র এবং পারস্পরিক মিল–অমিল সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেয়। তাই শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে গবেষক—সবাই মৌল সম্পর্কে বোঝার জন্য পর্যায় সারণিকে অপরিহার্য মনে করেন। নিচে পর্যায় সারণির প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো পরিষ্কার ও সহজ ভাষায় তালিকা আকারে তুলে ধরা হলো।

  • পর্যায় সারণিতে মোট ১৮টি গ্রুপ এবং ৭টি পর্যায় রয়েছে। গ্রুপ বলতে উল্লম্ব কলাম এবং পর্যায় বলতে অনুভূমিক সারি বোঝায়। একই গ্রুপের মৌলগুলোর রাসায়নিক ধর্ম সাধারণত মিল থাকে, আর একই পর্যায়ে বাম থেকে ডানে গেলে ধীরে ধীরে বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন দেখা যায়।

  • মৌলগুলোর বিন্যাস পারমাণবিক সংখ্যার উপর ভিত্তি করে সাজানো। আগে মৌলদের পারমাণবিক ভর দেখে সাজানো হতো, কিন্তু আধুনিক পর্যায় সারণিতে মৌলগুলোর প্রকৃত ধর্ম বোঝাতে পারমাণবিক সংখ্যাকে ভিত্তি হিসেবে নেওয়া হয়েছে, যা সারণিকে আরও যৌক্তিক করেছে।

  • একই গ্রুপের মৌলগুলোর ভ্যালেন্স ইলেকট্রন সংখ্যা এক থাকে। এ কারণে তাদের রাসায়নিক ধর্ম, বিক্রিয়াশীলতা এবং যৌগ তৈরির ধরন প্রায় একই ধরণের হয়। যেমন, ক্ষার ধাতুরা (গ্রুপ-১) সবাই এক ভ্যালেন্স ইলেকট্রনযুক্ত এবং অত্যন্ত সক্রিয়।

  • একই পর্যায়ে বাম থেকে ডানে গেলে ধাতব ধর্ম কমে এবং অধাতব ধর্ম বৃদ্ধি পায়। কারণ নিউক্লিয়াসের আকর্ষণ শক্তি বৃদ্ধি পাওয়ায় ইলেকট্রন হারানোর প্রবণতা কমে এবং গ্রহণের প্রবণতা বাড়ে।

  • পর্যায় সারণিতে ধাতু, অধাতু ও উপধাতুর স্পষ্ট বিভাজন দেখা যায়। বাম দিকে ধাতু, ডান দিকে অধাতু এবং মাঝামাঝি তির্যক রেখার পাশে উপধাতু অবস্থান করে। এই বিন্যাস মৌলগুলোর প্রকৃতি বুঝতে সুবিধা দেয়।

  • ল্যান্থানাইড ও অ্যাকটিনাইড সিরিজ আলাদা ভাবে নিচে স্থান দেওয়া হয়েছে। এগুলো অভ্যন্তরীণ ট্রানজিশন মৌল, যাদের গঠন ও ধর্ম কিছুটা ব্যতিক্রমী হওয়ায় প্রধান সারণির বাইরে দুই সারিতে রাখা হয়েছে।

  • একই গ্রুপে নিচের দিকে নামলে মৌলগুলোর পারমাণবিক ব্যাসার্ধ বৃদ্ধি পায়। কারণ ইলেকট্রন শেলের সংখ্যা বাড়তে থাকে। এর ফলে ধাতব চরিত্রও সাধারণত বৃদ্ধি পায়।

  • বাম দিকের মৌলগুলো সাধারণত ইলেকট্রন হারিয়ে ধনায়ন গঠন করে, আর ডান দিকের মৌলগুলো ইলেকট্রন গ্রহণ করে ঋণায়ন গঠন করে। এটি তাদের অবস্থান ও ইলেকট্রন সাজানোর সাথে সম্পর্কিত।

  • নিষ্ক্রিয় গ্যাসগুলো (গ্রুপ-১৮) সম্পূর্ণ পূর্ণ ইলেকট্রন শেল থাকার কারণে খুবই স্থিতিশীল। তাই তারা সাধারণত কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশ নেয় না।

  • পর্যায় সারণি মৌলগুলোর গলনাঙ্ক, স্ফুটনাঙ্ক, আয়নন শক্তি, বৈদ্যুতিক পরিবাহিতা ইত্যাদি ধর্ম বোঝার ক্ষেত্রে নির্দেশক হিসেবে কাজ করে। একাধিক মৌলের ধর্ম তুলনা করতেও এটি অত্যন্ত কার্যকর।

  • রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যের পূর্বানুমান করা যায়। সারণির অবস্থান দেখে কোনো মৌলের আচরণ, বিক্রিয়াশীলতা, যৌগ গঠন ক্ষমতা ইত্যাদি সহজেই ধারণা করা যায়, যা বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে বড় ভূমিকা রাখে।

এইভাবে পর্যায় সারণি শুধু মৌল সাজানোর একটি মাধ্যম নয়; বরং এটি রসায়নের সমস্ত ধারণাকে সুসংগঠিত ও সহজবোধ্য করে তোলে।

© LXMCQ, Inc. - All Rights Reserved

Developed by WiztecBD