ক্যারিওকাইনেসিস কাকে বলে?

Avatar
calender 14-11-2025

কোষ বিভাজন জীবনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার অন্যতম প্রধান প্রক্রিয়া, যেখানে একটি কোষ বিভক্ত হয়ে দুটি নতুন কোষ তৈরি করে। এই বিভাজন-প্রক্রিয়ায় নিউক্লিয়াস বা কেন্দ্রকের যে নিখুঁত ও ধাপে ধাপে পরিবর্তন ঘটে, তাকে বলা হয় ক্যারিওকাইনেসিস। এটি কোষের বংশবিস্তার, বৃদ্ধি, মেরামত ও প্রজননের জন্য অপরিহার্য একটি ধাপ। নিচে ক্যারিওকাইনেসিস সম্পর্কে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সহজ ভাষায় তালিকাভুক্ত করা হলো।

  • ক্যারিওকাইনেসিস হলো কেন্দ্রকের বিভাজন, যেখানে সাইটোপ্লাজম বা কোষদ্রব্য বিভাজন হয় না। কোষদ্রব্য বিভাজনের অংশটিকে বলা হয় সাইটোকাইনেসিস

  • এই প্রক্রিয়াটি মূলত মাইটোসিসমিয়োসিস— উভয় ধরনের বিভাজনেই দেখা যায়। তবে মাইটোসিসে এটি অধিক সুস্পষ্টভাবে ঘটে এবং চারটি স্বতন্ত্র ধাপে সম্পন্ন হয়।

  • মাইটোসিসে ক্যারিওকাইনেসিসের ধাপ চারটি:
    প্রোফেজ, মেটাফেজ, অ্যানাফেজ, টেলোফেজ
    প্রতিটি ধাপেই নিউক্লিয়াসের উপাদানগুলো নির্দিষ্ট ক্রমে পরিবর্তিত হয়।

  • প্রোফেজ ধাপে নিউক্লিয়ারের ক্রোমাটিন ঘন হয়ে ক্রোমোজোমে রূপান্তরিত হয়। নিউক্লিয়ার মেমব্রেন ভাঙতে শুরু করে এবং কোষের দুই প্রান্তে সেন্ট্রিওল চলে যায়।

  • মেটাফেজ ধাপে ক্রোমোজোমগুলো কোষের কেন্দ্রে ইকুয়েটোরিয়াল প্লেনে সারিবদ্ধভাবে অবস্থান করে। এখানে স্পিন্ডল ফাইবার ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ারের সাথে যুক্ত থাকে।

  • অ্যানাফেজ ধাপে প্রতিটি দ্বিগুণ ক্রোমোজোম দুইভাগে বিভক্ত হয়ে বিপরীত মেরুর দিকে টেনে নেওয়া হয়। এটি ক্যারিওকাইনেসিসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সময়, কারণ এখানেই জিনগত উপাদান সমান দু’ভাগে ভাগ হয়।

  • টেলোফেজ ধাপে কোষের দুই প্রান্তে থাকা ক্রোমাটিডগুলো আবার ক্রোমাটিনে রূপান্তরিত হয় এবং নতুন নিউক্লিয়ার মেমব্রেন গঠিত হয়। এতে দুটি পৃথক নিউক্লিয়াস তৈরি হয় এবং ক্যারিওকাইনেসিস সম্পূর্ণ হয়।

  • ক্যারিওকাইনেসিসের মূল উদ্দেশ্য হলো জিনগত উপাদান বা DNA-কে সমানভাবে দুটি নতুন কোষে পাঠানো। এর ফলে নতুন কোষগুলো আগের কোষের মতোই সঠিক জেনেটিক বৈশিষ্ট্য ধারণ করে।

  • মিয়োসিসের ক্ষেত্রেও ক্যারিওকাইনেসিস ঘটে, তবে সেখানে দুটি পর্যায়ে বিভাজন সম্পন্ন হয়— মিয়োসিস Iমিয়োসিস II। প্রথম ধাপে সমগোত্রীয় ক্রোমোজোম জোড়ায় বিভক্ত হয় এবং দ্বিতীয় ধাপে ক্রোমাটিড বিভাজন ঘটে।

  • ক্যারিওকাইনেসিসের মাধ্যমে কোষ সঠিক সংখ্যক ক্রোমোজোম ধরে রাখে, যা জীবের স্থায়িত্ব ও বৈশিষ্ট্য রক্ষায় অপরিহার্য।

  • উদ্ভিদে ও প্রাণীতে ক্যারিওকাইনেসিসের ধরণ প্রায় একই হলেও স্পিন্ডল অ্যাপারেটাস গঠনের ধরনে পার্থক্য রয়েছে।

  • ক্যারিওকাইনেসিসের যে কোনো ত্রুটি অনিয়ন্ত্রিত কোষবৃদ্ধি, ক্যান্সার, জেনেটিক অসামঞ্জস্য বা কোষমৃত্যুর কারণ হতে পারে। তাই জীববিজ্ঞানে এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।

  • সার্বিকভাবে বলা যায়, নিউক্লিয়াসকে দুইটি অভিন্ন অংশে ভাগ করার অত্যন্ত সুশৃঙ্খল প্রক্রিয়াই ক্যারিওকাইনেসিস। কোষের জীবনচক্রের সবচেয়ে নিখুঁত ও সুনির্দিষ্ট ঘটনা এটি, যা ছাড়া কোষ বিভাজন অসম্পূর্ণ থেকে যায়।

এই হলো ক্যারিওকাইনেসিস সম্পর্কে সম্পূর্ণ, সহজ ভাষায় উপস্থাপিত তথ্যসমৃদ্ধ ব্যাখ্যা।

© LXMCQ, Inc. - All Rights Reserved

Developed by WiztecBD