বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্য বর্ণনা করো।

Avatar
calender 14-11-2025

বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্য নিয়ে আলোচনা করতে হলে প্রথমেই বলতে হয়—এই দেশের ভৌগোলিক বৈচিত্র্য, জলবায়ু, নদীনির্ভর ভূমি আর মৌসুমী প্রভাব মিলেই একটি অনন্য পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। ফলে ছোট আয়তনের দেশ হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশে উদ্ভিদ, প্রাণী ও অণুজীবের বিস্ময়কর সমাহার দেখা যায়। জীববৈচিত্র্য শুধু পরিবেশের ভারসাম্যই রক্ষা করে না, মানুষের খাদ্য, ঔষধ, কৃষি ও সামগ্রিক জীবনযাত্রাকেও সমর্থন করে। নিচে বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্যের প্রধান উপাদানগুলো তালিকাভুক্ত করা হলো।

  • বাংলাদেশে উদ্ভিদ প্রজাতির সংখ্যা প্রায় ছয় হাজারের বেশি, যার মধ্যে ভেষজ, বনজ ও ফলদ উদ্ভিদের সমৃদ্ধ উপস্থিতি রয়েছে। বিশেষত পাহাড়ি অঞ্চল, জলাভূমি ও সুন্দরবনে নানা ধরনের স্থানীয় (indigenous) উদ্ভিদ প্রজাতি পাওয়া যায়।

  • সুন্দরবন বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন, যা প্রায় ৩৪০ প্রজাতির গাছপালা, ৩৫টির বেশি সাপ, ৩০০–এর বেশি পাখি এবং অসংখ্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর আবাসস্থল। এখানে গর্জন, গেওয়া, সুন্দরী, কেওড়া প্রজাতির গাছ জীববৈচিত্র্যের ভিত্তি গঠন করে।

  • বাংলাদেশে স্তন্যপায়ী প্রাণীর সংখ্যা ১৩০–এর বেশি, যার মধ্যে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রা হরিণ, বন্য শূকর, উল্লুক, শুশুক, বনবিড়ালসহ নানা প্রজাতি রয়েছে। নদী ও জলাশয়ে পাওয়া যায় বিখ্যাত ‘ইরাবতী শুশুক’, যা দেশের নদীনির্ভর পরিবেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক।

  • পাখির জীববৈচিত্র্য অত্যন্ত সমৃদ্ধ, প্রায় ৭০০–এর বেশি প্রজাতির পাখি বাংলাদেশে দেখা যায়। এর মধ্যে স্থানীয় পাখি ছাড়াও শীতকালে হাজার হাজার পরিযায়ী পাখি আমাদের হাওড় ও বিলাঞ্চলকে ভরে তোলে। বক, বালিহাঁস, পানকৌড়ি, মাছরাঙা ও শকুন উল্লেখযোগ্য পাখি প্রজাতি।

  • সাপ এবং উভচর প্রজাতিতে বাংলাদেশ বৈচিত্র্যময়, যেখানে প্রায় ১০০–এর বেশি সরীসৃপ ও ২২টির মতো ব্যাঙ প্রজাতি পাওয়া যায়। বিশেষ করে চট্টগ্রাম পাহাড়ি অঞ্চল এসব প্রজাতির হটস্পট হিসেবে পরিচিত।

  • নদী, হাওড় এবং উপকূলীয় জলাভূমি মাছ ও জলজ প্রাণীর প্রধান উৎস। দেশটিতে প্রায় ২৬০টির মতো স্বাদুপানির মাছ এবং প্রায় ৪৫০টির মতো সামুদ্রিক মাছ পাওয়া যায়। ইলিশ, রুই, কাতলা, মাগুর, টেংরা, লইট্টা, চিংড়ি—এসব প্রজাতি শুধু জীববৈচিত্র্যের অংশই নয়, অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তিও।

  • পার্বত্য চট্টগ্রাম জীববৈচিত্র্যের অন্যতম ধনী এলাকা, যেখানে বিভিন্ন ঔষধি গাছ, অর্কিড, বন্য প্রাণী এবং অসংখ্য পোকামাকড় পাওয়া যায়। এখানে জলবায়ু ও পরিবেশের বৈচিত্র্য একে আলাদা করে তুলেছে।

  • মধু, রেশম, ফলজ উদ্ভিদ ও ফুলের প্রজাতিতে দেশ বিশেষভাবে সমৃদ্ধ। লিচু, আম, কাঁঠাল, পেঁপে, পেয়ারা, কলা—এসব ফল শুধু খাদ্য নিরাপত্তায় নয়, জীববৈচিত্র্যে বিশেষ অবদান রাখে।

  • জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্যের জন্য বড় হুমকি, বিশেষ করে উপকূলীয় লবণাক্ততা বৃদ্ধি, বন উজাড়, নদী ভাঙন, অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার ইত্যাদি কারণে অনেক প্রজাতি বিপন্ন হয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্য দেশের পরিবেশ, খাদ্যব্যবস্থা, কৃষি উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ ও বনসম্পদকে টিকে থাকতে সহায়তা করে। তাই জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ শুধু পরিবেশ রক্ষাই নয়—এটি দেশের অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিরাপত্তার সঙ্গেও যুক্ত।

© LXMCQ, Inc. - All Rights Reserved

Developed by WiztecBD