অংশীদারি চুক্তিপত্র কি?

Avatar
calender 14-11-2025

অংশীদারি ব্যবসা সাধারণত দুই বা ততোধিক ব্যক্তির যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত হয়, যেখানে সবাই লাভ–ক্ষতি নির্দিষ্ট অনুপাতে ভাগ করে নেয়। এই যৌথ ব্যবসা পরিচালনার শর্ত, নিয়ম, দায়িত্ব, অধিকার ও সিদ্ধান্তের কাঠামোকে পরিষ্কারভাবে নির্ধারণ করতে যে দলিল তৈরি করা হয়, সেটিই হলো অংশীদারি চুক্তিপত্র। এটি ব্যবসার ভিত্তিকে সুসংগঠিত করে এবং ভবিষ্যতে সম্ভাব্য বিরোধ বা ভুল বোঝাবুঝি দূর করতে আইনি ও কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

নিচে অংশীদারি চুক্তিপত্র সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো তালিকা আকারে তুলে ধরা হলো—

  • সংজ্ঞা: অংশীদারদের মধ্যকার চুক্তির বিষয়বস্তু, শর্ত ও নিয়মাবলি যে লিখিত দলিলে লিপিবদ্ধ থাকে, তাকে অংশীদারি চুক্তিপত্র বলা হয়। এটি মূলত ব্যবসার কাঠামো, কাজের পদ্ধতি এবং অংশীদারদের অধিকার সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করে।

  • অংশীদারি ব্যবসার মূল ভিত্তি: চুক্তিই পুরো অংশীদারি ব্যবসার পরিচালনাগত ভিত্তি। চুক্তিতে যা নির্ধারিত হবে, ভবিষ্যতে ব্যবসা সেই নিয়মেই পরিচালিত হবে। তাই এটি ব্যবসার জন্য নির্দেশনামূলক নথি হিসেবে কাজ করে।

  • চুক্তির ধরন: অংশীদারি চুক্তি তিনভাবে হতে পারে—

    • মৌখিক চুক্তি: কথার মাধ্যমে করা হয়, তবে এটি প্রমাণের ক্ষেত্রে দুর্বল।

    • লিখিত চুক্তি: কাগজে লেখা থাকে এবং প্রমাণযোগ্য।

    • লিখিত ও নিবন্ধিত চুক্তি: এটি সবচেয়ে নিরাপদ ও আইনি স্বীকৃত রূপ, কারণ নিবন্ধনের মাধ্যমে দলিলটি সরকারি নথি হিসেবে গণ্য হয়।

  • লিখিত চুক্তির গুরুত্ব: লিখিত চুক্তিপত্রকে প্রামাণ্য দলিল ধরা হয়। কোনো বিরোধ বা ভুল বোঝাবুঝি হলে এই নথিই আইনি প্রমাণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তাই অংশীদারি ব্যবসার ক্ষেত্রে মৌখিক চুক্তির তুলনায় লিখিত চুক্তির ব্যবহার অধিক নিরাপদ।

  • চুক্তিপত্রের বর্ণনা: অংশীদারি চুক্তিপত্র সাধারণত খুবই বিস্তারিত হয়। এতে ব্যবসার প্রকৃতি, মূলধন সরবরাহ, লাভ-ক্ষতির বণ্টন, প্রতিটি অংশীদারের দায়িত্ব, ব্যবস্থাপনার পদ্ধতি, হিসাবরক্ষণ ব্যবস্থা, নতুন অংশীদার যুক্ত করা, অংশীদারের মৃত্যু বা অবসর গ্রহণ ইত্যাদি সমস্ত বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা উল্লেখ করা হয়।

  • সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা: ব্যবসা পরিচালনাকালে যে কোনো ধরণের সমস্যা বা মতবিরোধ সৃষ্টি হতে পারে। অংশীদারি চুক্তিপত্রে এই সমস্যা সমাধানের ধাপ, সিদ্ধান্ত গ্রহণের পদ্ধতি ও বিরোধ নিষ্পত্তির উপায় উল্লেখ থাকে, যাতে ব্যবসার ধারাবাহিকতা বিঘ্নিত না হয়।

  • অংশীদারদের সুরক্ষা: চুক্তিপত্র অংশীদারদের অধিকার আইনি কাঠামোর মধ্যে সুরক্ষিত রাখে। এতে সবাই নির্ধারিত দায়িত্ব পালন করতে বাধ্য থাকে, ফলে অপব্যবহার বা অন্যায় সুবিধা গ্রহণের সুযোগ থাকে না।

  • ব্যবসার স্বচ্ছতা: অংশীদারি ব্যবসায় ভুল বোঝাবুঝি বা অস্পষ্টতা সহজেই সমস্যা তৈরি করতে পারে। চুক্তিপত্র সবকিছুকে লিখিত আকারে তুলে ধরে বলে এটি ব্যবসার স্বচ্ছতা বজায় রাখতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এইভাবে অংশীদারি চুক্তিপত্র একটি ব্যবসাকে সুসংগঠিত, নির্ভরযোগ্য ও আইনি ভিত্তি প্রদান করে। এটি কেবল অংশীদারদের সুরক্ষা নয়, পাশাপাশি একটি সফল অংশীদারি ব্যবসা পরিচালনার জন্য জরুরি নির্দেশনামূলক দলিল হিসেবেও কাজ করে।

© LXMCQ, Inc. - All Rights Reserved

Developed by WiztecBD