প্রমিত ভাষা কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি?
প্রমিত ভাষা (Standard Language) হলো ভাষার এমন একটি শুদ্ধ, পরিশীলিত ও মান্য রূপ, যা সমাজের সব স্তরের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য এবং সরকারি, সাহিত্যিক ও শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। এটি কোনো দেশের ভাষাগত ঐক্য, সংস্কৃতি ও যোগাযোগের মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। প্রমিত ভাষা আঞ্চলিক উপভাষা বা কথ্য রূপ থেকে কিছুটা ভিন্ন, কারণ এটি ব্যাকরণ, উচ্চারণ, বানান ও শব্দচয়নে নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসরণ করে।
-
সংজ্ঞা:
প্রমিত ভাষা হলো কোনো ভাষার সেই শুদ্ধ, মান্য ও গৃহীত রূপ, যা জাতীয়ভাবে যোগাযোগের জন্য গ্রহণযোগ্য। এটি এমন ভাষা যা আঞ্চলিক বা ব্যক্তিগত ভিন্নতা থেকে মুক্ত এবং সবার বোঝার উপযোগী। ভাষাবিদদের মতে, প্রমিত ভাষা সমাজের শিক্ষিত ও সংস্কৃতিমনা অংশের ব্যবহারে গঠিত একটি নিয়ন্ত্রিত ভাষা। -
প্রমিত ভাষার বৈশিষ্ট্য:
-
এটি নির্দিষ্ট ব্যাকরণ, বানান ও উচ্চারণের নিয়ম মেনে চলে।
-
আঞ্চলিক উপভাষার প্রভাব থেকে মুক্ত থাকে।
-
সরকারি, শিক্ষাগত ও সাহিত্যিক কাজের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায়।
-
এতে শব্দচয়ন স্পষ্ট, সহজবোধ্য ও যথাযথ হয়।
-
সমাজে পারস্পরিক যোগাযোগে এটি সেতুবন্ধনের কাজ করে।
-
-
প্রমিত ভাষার প্রকারভেদ:
বাংলা ভাষার দুটি প্রধান প্রমিত রূপ রয়েছে—
১. রাঢ়ী প্রমিত বাংলা (বাংলাদেশে প্রচলিত):
এটি ঢাকাকেন্দ্রিক ভাষা রীতি, যা বর্তমানে বাংলাদেশের শিক্ষা, প্রশাসন, সাহিত্য ও সংবাদ মাধ্যমে ব্যবহৃত হয়।
২. কলিকাত্তীয় প্রমিত বাংলা (ভারতের পশ্চিমবঙ্গে প্রচলিত):
এটি মূলত সাহিত্যিক রূপ, যা কলকাতা ও তার আশেপাশের অঞ্চলে ব্যবহার করা হয়। এ রূপে উচ্চারণে কিছুটা ভিন্নতা দেখা যায়। -
প্রমিত ভাষার গুরুত্ব:
প্রমিত ভাষা জাতীয় ঐক্য ও সাংস্কৃতিক সংহতি রক্ষা করে। এটি প্রশাসন, শিক্ষা ও গণমাধ্যমের জন্য একটি সাধারণ যোগাযোগের মাধ্যম তৈরি করে। ভাষার বিশুদ্ধতা রক্ষা, সাহিত্যচর্চা উন্নয়ন, এবং বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত শব্দগঠনে প্রমিত ভাষার ভূমিকা অপরিহার্য। -
উদাহরণ:
“তুমি এখন কোথায় যাচ্ছ?” — এটি প্রমিত ভাষা।
“তুই কই যাস?” — এটি আঞ্চলিক ভাষা।
সবশেষে বলা যায়, প্রমিত ভাষা হলো জাতির সংস্কৃতি ও ঐক্যের প্রতিফলন। এটি শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নয়, বরং ভাষার শুদ্ধতা, শৃঙ্খলা ও পরিচয়ের প্রতীক।