জিন কি?

Avatar
calender 14-11-2025

জিন (Gene) হলো বংশগতির (Heredity) মৌলিক একক, যা জীবের শারীরিক বৈশিষ্ট্য, গঠন ও কার্যাবলি নির্ধারণ করে। সহজভাবে বলা যায়, জিন হলো ডিএনএ (DNA)-এর এমন একটি অংশ, যা কোনো নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য বা প্রোটিন তৈরির নির্দেশনা বহন করে। প্রতিটি জীবের দেহকোষে অসংখ্য জিন থাকে, যা তার রং, উচ্চতা, রক্তের গ্রুপ, চোখের রঙ এবং এমনকি আচরণগত বৈশিষ্ট্যও নির্ধারণ করে।

জিনের গঠন:
জিন গঠিত হয় ডিএনএ (Deoxyribonucleic Acid) নামক রাসায়নিক পদার্থ দ্বারা। ডিএনএ হলো দীর্ঘ এক অণু, যার গঠন দ্বি-হেলিক্স (Double Helix) আকারের। এতে চারটি নাইট্রোজেনযুক্ত ক্ষারক থাকে — অ্যাডেনিন (A), থাইমিন (T), গুৱানিন (G), এবং সাইটোসিন (C)। এই ক্ষারকগুলোর বিন্যাস বা ক্রমই জিনের নির্দিষ্ট কাজ নির্ধারণ করে। ডিএনএ-র নির্দিষ্ট অংশে যখন এই ক্ষারকগুলোর একটি অনন্য বিন্যাস তৈরি হয়, তখন সেটিই একটি জিন গঠন করে।

জিনের কার্যাবলি:

  • প্রোটিন তৈরির নির্দেশ প্রদান: জিনের প্রধান কাজ হলো প্রোটিন তৈরির নির্দেশনা দেওয়া। প্রোটিন জীবদেহে এনজাইম, হরমোন ও গঠনমূলক উপাদান হিসেবে কাজ করে।

  • বংশগত বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ: পিতা-মাতার জিন সন্তানদের মধ্যে স্থানান্তরিত হয়, ফলে সন্তানদের মধ্যে পিতামাতার বৈশিষ্ট্য প্রতিফলিত হয়।

  • কোষের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ: জিন কোষের বৃদ্ধি, বিভাজন ও মৃত্যু পর্যন্ত প্রভাবিত করে।

  • পরিবর্তন বা মিউটেশন: জিনের রাসায়নিক গঠনে কোনো পরিবর্তন ঘটলে তাকে মিউটেশন (Mutation) বলে, যা কখনো নতুন বৈশিষ্ট্য সৃষ্টি করতে পারে বা রোগের কারণ হতে পারে।

জিনের অবস্থান:
জিন অবস্থান করে ক্রোমোজোমে (Chromosome)। প্রতিটি ক্রোমোজোমে হাজার হাজার জিন থাকে। মানুষের দেহে মোট ৪৬টি ক্রোমোজোম বা ২৩ জোড়া ক্রোমোজোম থাকে, যেখানে প্রায় ২০,০০০–২৫,০০০টি জিন উপস্থিত। প্রতিটি জিন নির্দিষ্ট স্থানে বা লোকাস (Locus)-এ অবস্থান করে।

জিনের প্রকারভেদ:

  • ডমিন্যান্ট জিন (Dominant Gene): যেসব জিন তাদের বৈশিষ্ট্য প্রকাশে প্রভাবশালী। যেমন — চোখের কালো রঙের জন্য দায়ী জিন।

  • রিসেসিভ জিন (Recessive Gene): দুর্বল বা প্রভাবহীন জিন, যা শুধুমাত্র একই ধরনের জিনের সঙ্গে মিললে বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে। যেমন — নীল চোখের জিন।

জিনবিজ্ঞানের (Genetics) গুরুত্ব:
জিনবিজ্ঞান আমাদের জীবনের মৌলিক কাঠামো বোঝার ক্ষেত্রে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে জিন-সম্পর্কিত গবেষণার মাধ্যমে জিন থেরাপি, ক্লোনিং, জিন ইঞ্জিনিয়ারিং ইত্যাদি প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটেছে। এর মাধ্যমে জিনগত রোগ শনাক্ত, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা করা সম্ভব হচ্ছে।

উদাহরণ:
মানুষের রক্তের গ্রুপ, চোখের রঙ, উচ্চতা — সবই জিন দ্বারা নির্ধারিত। এমনকি কিছু রোগ যেমন হিমোফিলিয়া, সিকেল সেল অ্যানিমিয়া, থ্যালাসেমিয়া ইত্যাদি জিনগত কারণে হয়।

সবশেষে বলা যায়, জিন হলো জীবনের নকশা বা ব্লুপ্রিন্ট, যা প্রতিটি জীবের বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করে এবং প্রজন্মের পর প্রজন্মে সেই বৈশিষ্ট্য স্থানান্তরিত করে।

© LXMCQ, Inc. - All Rights Reserved

Developed by WiztecBD