জাতীয়তা কি?
জাতীয়তা (Nationality) এমন একটি পরিচয় যা একজন মানুষকে একটি নির্দিষ্ট রাষ্ট্র বা জাতির সঙ্গে আইনি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিকভাবে যুক্ত করে। এটি বোঝায়, একজন ব্যক্তি কোন দেশের নাগরিক, কোন রাষ্ট্রের প্রতি তার আনুগত্য এবং কোন রাষ্ট্র তার অধিকার ও নিরাপত্তা রক্ষা করবে। জাতীয়তা একজন ব্যক্তির রাষ্ট্রীয় পরিচয়ের প্রতীক, যা তাকে আন্তর্জাতিক পরিসরেও আলাদা করে চিহ্নিত করে।
জাতীয়তা কেবল আইনগত অবস্থান নয়; এটি সংস্কৃতি, ভাষা, ইতিহাস ও নাগরিক সম্পর্কের প্রতিফলনও। একজন ব্যক্তি যে রাষ্ট্রের নাগরিক, সেই রাষ্ট্রের সংবিধান, আইন ও সামাজিক রীতিনীতির অধীনে তার অধিকার ও কর্তব্য নির্ধারিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, একজন বাংলাদেশি নাগরিকের জাতীয়তা হলো “বাংলাদেশি (Bangladeshi)”, যার অর্থ সে বাংলাদেশের আইনি ও সামাজিক অধিকারভুক্ত সদস্য।
জাতীয়তার প্রকারভেদ:
-
জন্মসূত্রে জাতীয়তা (By Birth / Jus Soli):
যে ব্যক্তি কোনো দেশে জন্মগ্রহণ করে, সে দেশের নাগরিকত্ব অর্জন করে। যেমন — যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা বা অস্ট্রেলিয়ায় জন্ম নিলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেই দেশের নাগরিকত্ব মেলে। -
রক্তসূত্রে জাতীয়তা (By Descent / Jus Sanguinis):
পিতা-মাতা যদি কোনো দেশের নাগরিক হন, তবে তাঁদের সন্তানও স্বাভাবিকভাবে সেই দেশের নাগরিক। যেমন — বাংলাদেশের নাগরিকের সন্তান বাংলাদেশের নাগরিক হবে। -
প্রাকৃতিকীকরণে জাতীয়তা (By Naturalization):
কোনো বিদেশি ব্যক্তি নির্দিষ্ট আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অন্য দেশের নাগরিকত্ব অর্জন করতে পারে। -
বিবাহসূত্রে জাতীয়তা (By Marriage):
কোনো দেশের নাগরিককে বিয়ে করলে অনেক ক্ষেত্রে বিদেশি জীবনসঙ্গী নাগরিকত্ব পায়। -
বিশেষ অনুদান বা নাগরিকত্ব (By Special Grant):
কিছু ক্ষেত্রে রাষ্ট্র কোনো বিশেষ অবদানের কারণে বিদেশি নাগরিককে নাগরিকত্ব প্রদান করে।
জাতীয়তার গুরুত্ব:
জাতীয়তা একটি ব্যক্তির জন্য আইনি সুরক্ষা ও রাষ্ট্রীয় অধিকার নিশ্চিত করে। এটি ছাড়া কোনো ব্যক্তি কোনো রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি পায় না এবং “রাষ্ট্রহীন ব্যক্তি” (Stateless Person) হিসেবে গণ্য হয়। জাতীয়তা থাকলে একজন ব্যক্তি—
-
ভোট দিতে পারে,
-
সরকারি চাকরি করতে পারে,
-
রাষ্ট্রীয় সেবা ও সুবিধা পায়,
-
বিদেশে অবস্থান করলে নিজ দেশের দূতাবাস থেকে সহায়তা পেতে পারে।
এছাড়া জাতীয়তা একটি রাষ্ট্রের পরিচয় ও ঐক্যের প্রতীক। এটি নাগরিকদের মধ্যে দেশপ্রেম, ঐক্যবোধ ও দায়িত্বশীলতা তৈরি করে।
সবশেষে বলা যায়, জাতীয়তা কেবল একটি পরিচয় নয়, বরং রাষ্ট্র, নাগরিক ও সমাজের পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তি। এটি মানুষের আইনি মর্যাদা, সাংস্কৃতিক শিকড় এবং নাগরিক দায়িত্বের বহিঃপ্রকাশ, যা একটি জাতিকে শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ করে তোলে।