জেরপথ্যালমিয়া রোগ বলতে কি বুঝায়?

Avatar
calender 14-11-2025

জেরপথ্যালমিয়া একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অপুষ্টিজনিত রোগ, যা মূলত ভিটামিন A–এর দীর্ঘমেয়াদি ঘাটতির ফলে চোখে সৃষ্টি হয়। রোগটি ধীরে ধীরে কর্ণিয়া ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং শেষ পর্যন্ত দৃষ্টিশক্তি সম্পূর্ণ হারিয়ে ফেলতে পারে। সাধারণত শিশুদের ক্ষেত্রে এই রোগ বেশি দেখা যায়, তবে অপুষ্টিতে ভোগা যেকোনো মানুষেই এ সমস্যা দেখা দিতে পারে। চোখের সুরক্ষাকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দেয় বলে এটি জনস্বাস্থ্যের দিক থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।

নীচে জেরপথ্যালমিয়া রোগ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো তালিকা আকারে তুলে ধরা হলো—

  • ভিটামিন A–এর ঘাটতিই এই রোগের প্রধান কারণ। শরীরে পর্যাপ্ত ভিটামিন A না থাকলে চোখের কোষ ও টিস্যুগুলো স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারে না। এর ফলে ধীরে ধীরে চোখের উপরিভাগ শুষ্ক হয়ে যায় এবং কর্ণিয়াতে ক্ষত সৃষ্টি হতে শুরু করে।

  • জেরোসিস বা চোখের শুষ্কতা এই রোগের প্রথম লক্ষণ। শুরুতে রোগীরা চোখে শুষ্কতা, খসখসে অনুভূতি এবং আলোতে তাকালে অস্বস্তি অনুভব করে। এই শুষ্কতা অগ্রসর হলে কনজাঙ্কটিভা ও কর্ণিয়া দুটোই ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে।

  • কর্ণিয়ায় আলসার বা ক্ষত জেরপথ্যালমিয়ার সবচেয়ে গুরুতর রূপ। ভিটামিন A–এর ঘাটতি দীর্ঘস্থায়ী হলে কর্ণিয়ার কোষ ক্ষয়ে গিয়ে ছোট থেকে বড় আকারের আলসার তৈরি হয়। এই আলসার দ্রুত গভীর হলে কর্ণিয়া ধ্বংস হয়ে যায়, যা দৃষ্টিশক্তি সম্পূর্ণ নষ্ট করে দিতে পারে।

  • চোখ পুরোপুড়ি অন্ধ হয়ে যাওয়া জেরপথ্যালমিয়ার চূড়ান্ত পরিণতি। কর্ণিয়া নষ্ট হয়ে গেলে তা আর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে না। সময়মতো চিকিৎসা না হলে রোগী স্থায়ীভাবে অন্ধ হয়ে পড়ে।

  • রাতে দেখতে না পারা বা নাইট ব্লাইন্ডনেস এ রোগের প্রাথমিক সতর্কসংকেত। ভিটামিন A ঘাটতিজনিত প্রথম দিকের সমস্যার মধ্যে নাইট ব্লাইন্ডনেস অন্যতম। এটি উপেক্ষা করলে পরবর্তী ধাপেই রোগটি জেরপথ্যালমিয়ায় পরিণত হতে পারে।

  • অপুষ্টি, দারিদ্র্য, সংক্রমণ ও বারবার ডায়রিয়া রোগটি বাড়িয়ে দেয়। বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে এই সব কারণ ভিটামিন A–এর ঘাটতি আরও বৃদ্ধি করে এবং জেরপথ্যালমিয়ার ঝুঁকি বহুগুণ বাড়ায়।

  • নিরাময় সম্ভব হলেও দ্রুত চিকিৎসা অত্যন্ত জরুরি। ভিটামিন A ক্যাপসুল বা ইনজেকশন, কর্ণিয়া সুরক্ষা, সংক্রমণ প্রতিরোধ এবং পর্যাপ্ত পুষ্টি গ্রহণের মাধ্যমে রোগটি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। দেরি হলে কর্ণিয়া এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয় যে তা আর পুনরুদ্ধার সম্ভব হয় না।

  • প্রতিরোধই এই রোগের সর্বোত্তম সমাধান। শিশুদের নিয়মিত ভিটামিন A ক্যাপসুল খাওয়ানো, দুধ, ডিম, মাছ, কলিজা, গাজর, কুমড়া, শাকসবজি ও হলুদ রঙের ফল বেশি খাওয়ানো গেলে ভিটামিন A ঘাটতি সহজেই প্রতিরোধ করা যায়।

  • জনস্বাস্থ্য কার্যক্রমে ভিটামিন A সাপ্লিমেন্টেশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশসহ অনেক দেশে শিশুদের জন্য নিয়মিত ভিটামিন A ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা হয়, যা জেরপথ্যালমিয়া প্রতিরোধে ব্যাপকভাবে সহায়ক।

সব মিলিয়ে, জেরপথ্যালমিয়া এমন একটি রোগ যা সম্পূর্ণরূপে প্রতিরোধযোগ্য, কিন্তু অবহেলা করলে অন্ধত্বের দিকে নিয়ে যায়। তাই ভিটামিন A–সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং প্রাথমিক লক্ষণ দেখলেই দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।

© LXMCQ, Inc. - All Rights Reserved

Developed by WiztecBD