অবিন্যস্ত উপাত্ত কাকে বলে?

Avatar
calender 14-11-2025

অবিন্যস্ত উপাত্ত মূলত এমন তথ্যকে বোঝায়, যেগুলো সংগ্রহ করা হলেও কোনো ধরণের শ্রেণিবিন্যাস, ক্রম বা নির্দিষ্ট গঠন অনুসারে সাজানো থাকে না। বাস্তব গবেষণা, জরিপ বা তথ্য বিশ্লেষণের শুরুর ধাপ সাধারণত এমনই হয়—তথ্যগুলো ছড়ানো-ছিটানো অবস্থায় থাকে এবং সেগুলোকে ব্যবহারযোগ্য করতে পরবর্তীতে বিন্যস্ত বা শ্রেণিবদ্ধ করতে হয়। অবিন্যস্ত উপাত্ত ঠিক এই প্রাথমিক অবস্থাকেই নির্দেশ করে, যেখানে তথ্য থাকে শুধু সংগ্রহ করা, কিন্তু বিশ্লেষণের জন্য প্রয়োজনীয় কাঠামো এখনো দেওয়া হয়নি।

  • অবিন্যস্ত উপাত্ত তখনই সৃষ্টি হয় যখন উপাত্ত কোনো শ্রেণি, গ্রুপ বা ক্রম অনুসারে সাজানো থাকে না। অর্থাৎ এগুলো শুধু সংগ্রহ করা তথ্যের একটি তালিকা, কিন্তু কোনোটিই একে অপরের সঙ্গে তুলনামূলকভাবে সাজানো নয়। উদাহরণ হিসেবে পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের প্রাপ্ত নম্বর সংগ্রহ করা হলো—৫০, ৭২, ৩৮, ৯০, ৬১—এগুলো কোনোভাবে সাজানো নয়, তাই এগুলো অবিন্যস্ত উপাত্ত।

  • এই ধরনের উপাত্তের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো অগোছালো থাকা। উপাত্তের ভিতরে সংখ্যা, শব্দ, প্রতীক—সবই থাকতে পারে, কিন্তু কোনো নির্দিষ্ট ধারাবাহিকতা থাকে না। এতে বিশ্লেষণের কাজ সরাসরি শুরু করা যায় না, কারণ তথ্যের সম্পর্ক বা বৈশিষ্ট্য বোঝা কঠিন হয়।

  • অবিন্যস্ত উপাত্ত সাধারণত গবেষণা বা জরিপের শুরুতে পাওয়া যায়। যেমন: বাজারদরের তথ্য, শিক্ষার্থীর বয়স, মানুষের দৈনিক আয়, যাত্রীদের ভ্রমণ সময়—এগুলো প্রথমে যেভাবে সংগ্রহ করা হয়, সেভাবেই থাকে। এগুলো এখনও কোন স্তরে, কোন ভাগে বা কোন সীমার মধ্যে পড়ে তা নির্ধারিত নয়।

  • শ্রেণিবদ্ধ উপাত্তের বিপরীত ধাপ হল অবিন্যস্ত উপাত্ত। শ্রেণিবদ্ধ উপাত্তে তথ্যকে বিভিন্ন শ্রেণি, পরিসীমা বা গ্রুপে ভাগ করা হয়, যেমন ১০–২০, ২১–৩০ ইত্যাদি। কিন্তু অবিন্যস্ত উপাত্তে এই বিভাজন অনুপস্থিত থাকে। তাই পরিসংখ্যানের প্রথম ধাপ হলো অবিন্যস্ত উপাত্তকে বিশ্লেষণযোগ্য শ্রেণিতে রূপান্তর করা।

  • অবিন্যস্ত উপাত্ত বিশ্লেষণের জন্য প্রথমে বিন্যস্ত করতে হয়। বিন্যস্তকরণের মাধ্যমে তথ্যকে ক্রমানুসারে সাজানো হয়—ছোট থেকে বড় বা বড় থেকে ছোট। এরপর শ্রেণি তৈরি করা হয়, ফ্রিকোয়েন্সি নির্ণয় করা হয় এবং প্রয়োজন হলে চিত্র ও গ্রাফ তৈরি করা যায়। কিন্তু অবিন্যস্ত অবস্থায় এসব কাজ সম্ভব নয়।

  • অবিন্যস্ত উপাত্ত মূলত কাঁচা তথ্য (Raw Data) হিসেবে পরিচিত। পরিসংখ্যানবিদরা এই ধাপকে তথ্য বিশ্লেষণের সূচনা হিসেবে বিবেচনা করেন, কারণ এখান থেকেই তথ্য সাজানো, তুলনা করা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া শুরু হয়।

  • ডেটার ধরণ যাই হোক—সংখ্যাগত, গুণগত বা মিশ্র—সবই অবিন্যস্ত অবস্থায় থাকতে পারে। উদাহরণ: একটি গ্রামের পরিবারের সদস্যসংখ্যা—৪, ৫, ৩, ৬, ৫, ২—এগুলো এখনো কোনোভাবে শ্রেণি বা ভাগে বিভক্ত নয়, তাই অবিন্যস্ত।

  • পরিসংখ্যানীয় বিশ্লেষণের সকল প্রক্রিয়ার ভিত্তিই হলো অবিন্যস্ত উপাত্তকে সাজানো। কারণ একটি তথ্যসেট যত বেশি গোছানো হবে, তার উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেওয়া তত সহজ হবে। তাই অবিন্যস্ত উপাত্তকে বিন্যস্ত করা একটি মৌলিক ধাপ।

শেষ কথা হলো, উপাত্ত যখন কোনো শ্রেণিবিন্যাস বা গঠন অনুসরণ না করে অগোছালো অবস্থায় থাকে, তখনই তাকে অবিন্যস্ত উপাত্ত বলা হয়।

© LXMCQ, Inc. - All Rights Reserved

Developed by WiztecBD