রাসুল কাকে বলে?
রাসুল (Rasul) শব্দটি আরবি ভাষার “رَسُولٌ” থেকে উদ্ভূত, যার অর্থ “বার্তাবাহক”, “প্রেরিত ব্যক্তি” বা “দূত।” ইসলামী পরিভাষায় রাসুল বলতে বোঝায় সেই মহান ব্যক্তিকে, যিনি আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে মানবজাতির কাছে ওহি (Divine Revelation) বা বার্তা প্রাপ্ত হন এবং মানুষের মাঝে সেই বার্তা পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব পালন করেন। রাসুলরা আল্লাহর নির্দেশ অনুসারে মানুষকে সৎপথে আহ্বান জানান, মিথ্যা ও অন্যায় থেকে বিরত থাকতে সতর্ক করেন এবং সমাজে ন্যায় ও মানবতার প্রতিষ্ঠা করেন।
রাসুলের বৈশিষ্ট্য ও ভূমিকা:
-
রাসুল আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত হন মানুষের পথপ্রদর্শক হিসেবে।
-
তিনি নতুন শরিয়ত বা বিধান নিয়ে আসেন, যা সমাজে ন্যায়বিচার ও নৈতিকতা প্রতিষ্ঠা করে।
-
প্রতিটি রাসুলকেই মানবজাতির জন্য আদর্শ হিসেবে পাঠানো হয়েছে।
-
তাঁরা ওহি প্রাপ্ত হন ফেরেশতা জিবরাইল (আ.)-এর মাধ্যমে।
-
রাসুলগণ মানুষকে তাওহিদ বা এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের শিক্ষা দেন এবং কুফরি, শিরক ও পাপ থেকে বিরত থাকতে আহ্বান জানান।
রাসুল ও নবীর পার্থক্য:
সব রাসুলই নবী, কিন্তু সব নবী রাসুল নন। নবী মূলত পূর্ববর্তী রাসুলের শরিয়তের অনুসারী হিসেবে কাজ করেন, আর রাসুল নতুন শরিয়ত বা বিধান নিয়ে আসেন। উদাহরণস্বরূপ, হজরত মূসা (আ.) একটি শরিয়ত নিয়ে আসেন, তাই তিনি রাসুল; অন্যদিকে হজরত হারুন (আ.) সেই শরিয়তের অনুসারী ছিলেন, তাই তিনি নবী।
কুরআনের দৃষ্টিতে:
আল্লাহ বলেন— “প্রত্যেক জাতির মধ্যেই আমি একজন রাসুল প্রেরণ করেছি, যেন তারা বলে— আল্লাহর ইবাদত করো এবং তাগুত থেকে দূরে থাকো।” (সূরা নাহল: ৩৬)
এছাড়াও বলা হয়েছে, “রাসুলগণ সুসংবাদ প্রদানকারী ও সতর্ককারী।” (সূরা নিসা: ১৬৫)
উল্লেখযোগ্য রাসুলগণ:
ইসলামী ইতিহাসে ৩১৩ জন রাসুলের কথা উল্লেখ আছে। তাঁদের মধ্যে ৫ জন মহান রাসুল বিশেষভাবে মর্যাদাপূর্ণ, যাদের বলা হয় “উলুল আজম রাসুল”—
১. হজরত নূহ (আ.)
২. হজরত ইবরাহিম (আ.)
৩. হজরত মূসা (আ.)
৪. হজরত ঈসা (আ.)
৫. হজরত মুহাম্মদ (সা.) – যিনি শেষ ও শ্রেষ্ঠ রাসুল।
সবশেষে বলা যায়, রাসুল হলেন মানবজাতির পথপ্রদর্শক, আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত সত্য ও ন্যায়ের দূত, যাঁরা মানুষের আত্মিক, নৈতিক ও সামাজিক মুক্তির বার্তা নিয়ে পৃথিবীতে আগমন করেন।