এসিড ও ক্ষারকের ব্যবহার কী?
অ্যাসিড (Acid) ও ক্ষারক (Base) হলো রসায়নের দুটি মৌলিক পদার্থ, যেগুলোর ব্যবহার মানুষের জীবন, শিল্প, কৃষি, চিকিৎসা ও গবেষণা—সব ক্ষেত্রেই অপরিসীম। এদের রাসায়নিক গুণ ও প্রতিক্রিয়া আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে সহজতর করে তুলেছে। যদিও অ্যাসিড ও ক্ষার একে অপরের বিপরীত প্রকৃতির, তবুও উভয়ই বিভিন্ন কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিচে এদের ব্যবহার বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো—
-
শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহার:
অ্যাসিড ও ক্ষার শিল্প উৎপাদনের মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। সালফিউরিক অ্যাসিড (H₂SO₄) বিশ্বের সর্বাধিক ব্যবহৃত শিল্প অ্যাসিড, যা সার, ব্যাটারি, রং, ও বিস্ফোরক তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। নাইট্রিক অ্যাসিড (HNO₃) ব্যবহৃত হয় নাইট্রোজেন সার ও ডাইনামাইট তৈরিতে। হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড (HCl) ধাতু পরিষ্কার ও প্রক্রিয়াজাতকরণে ব্যবহৃত হয়।
অন্যদিকে ক্ষারক যেমন সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড (NaOH) এবং ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড (Ca(OH)₂) ব্যবহৃত হয় সাবান, ডিটারজেন্ট, কাগজ, কাচ ও টেক্সটাইল শিল্পে। এছাড়াও, অ্যামোনিয়াম হাইড্রোক্সাইড (NH₄OH) ব্যবহৃত হয় রঞ্জক দ্রবণ ও পরিষ্কারক দ্রব্যে। -
কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহার:
কৃষিক্ষেত্রে মাটির অম্লত্ব বা ক্ষারত্ব নির্ধারণে pH সূচক ব্যবহৃত হয়, যা নির্ভর করে অ্যাসিড ও ক্ষারের উপস্থিতির ওপর। মাটিতে অতিরিক্ত অ্যাসিডিকতা দেখা দিলে ক্যালসিয়াম অক্সাইড বা ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড (চুন) ছিটিয়ে তা নিরপেক্ষ করা হয়। অন্যদিকে অ্যাসিডিক সার যেমন অ্যামোনিয়াম সালফেট বা ফসফরিক অ্যাসিড উদ্ভিদের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। -
গৃহস্থালিতে ব্যবহার:
অ্যাসিড ও ক্ষার আমাদের ঘরোয়া জীবনের অপরিহার্য অংশ। লেবুর রসের সাইট্রিক অ্যাসিড (Citric Acid) ও ভিনেগারের অ্যাসেটিক অ্যাসিড (Acetic Acid) খাবারে স্বাদ বাড়াতে ও জীবাণুনাশক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বেকিং সোডা (NaHCO₃), যা একটি দুর্বল ক্ষার, রান্নায় ফুলকোভাব আনতে ও গন্ধ দূর করতে ব্যবহৃত হয়। টয়লেট ও টাইলস পরিষ্কারে হালকা অ্যাসিডিক পদার্থ ব্যবহৃত হয়, কারণ এগুলো দাগ ও ক্ষারীয় ময়লা দূর করে। -
চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যক্ষেত্রে ব্যবহার:
অ্যাসিড ও ক্ষার চিকিৎসা বিজ্ঞানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। উদাহরণস্বরূপ, অ্যাসকরবিক অ্যাসিড (Vitamin C) রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। অন্যদিকে, ক্ষারক পদার্থ যেমন ম্যাগনেসিয়াম হাইড্রোক্সাইড (Mg(OH)₂) অ্যান্টাসিড হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যা অতিরিক্ত পাকস্থলীয় অ্যাসিড নিরপেক্ষ করে অম্লভাব কমায়। কিছু ওষুধে ফসফরিক অ্যাসিড সংযোজক উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। -
গবেষণা ও ল্যাবরেটরিতে:
রসায়ন ল্যাবে অ্যাসিড ও ক্ষার টাইট্রেশন পরীক্ষায় ব্যবহৃত হয়, যার মাধ্যমে দ্রবণের ঘনত্ব নির্ণয় করা যায়। এটি রসায়ন গবেষণা, ওষুধ প্রস্তুতি ও মাননিয়ন্ত্রণে অপরিহার্য একটি পদ্ধতি। -
অন্যান্য ব্যবহার:
ব্যাটারি, খাদ্য সংরক্ষণ, প্লাস্টিক ও সার তৈরিতেও অ্যাসিডের ব্যবহার রয়েছে। ক্ষারক পদার্থ আবার জলের বিশুদ্ধকরণ ও বর্জ্য পরিশোধনেও ব্যবহৃত হয়।
সব মিলিয়ে বলা যায়, অ্যাসিড ও ক্ষার শুধু রাসায়নিক পদার্থ নয়, বরং আধুনিক সভ্যতার প্রযুক্তিগত ও বৈজ্ঞানিক উন্নয়নের অন্যতম ভিত্তি। এদের সঠিক ব্যবহার মানবজীবনকে আরও উন্নত, নিরাপদ ও সমৃদ্ধ করেছে।