সমাজকর্মের সহায়ক পদ্ধতি কয়টি?

Avatar
calender 13-11-2025

সমাজকর্মের কার্যপ্রক্রিয়াকে সফলভাবে পরিচালনা করতে বিভিন্ন সহায়ক পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়, যা পুরো কর্মদক্ষতাকে আরও সুসংগঠিত ও ফলপ্রসূ করে তোলে। সমাজকর্মের মূল লক্ষ্য হলো মানুষের সমস্যা নিরসন, সামাজিক পরিবর্তন এবং সামগ্রিক কল্যাণ নিশ্চিত করা—আর এই লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক পদ্ধতিগুলো গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। প্রশ্নে উল্লেখিত তথ্য অনুযায়ী, সমাজকর্মের সহায়ক পদ্ধতি তিনটি, এবং প্রতিটি পদ্ধতিই সমাজকর্মের ভিত্তিকে দৃঢ় করে। নিচে এগুলোর স্বরূপ, ভূমিকা ও প্রয়োজনীয়তা তালিকা আকারে তুলে ধরা হলো।

  • সামাজিক প্রশাসন সমাজকর্মের অন্যতম প্রধান সহায়ক পদ্ধতি, যা সমাজকর্মের পুরো কাঠামোকে সংগঠিত, সুষ্ঠুভাবে নিয়ন্ত্রিত এবং দীর্ঘমেয়াদি কার্যক্রমে স্থায়িত্ব এনে দেয়। এটি মূলত পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন, তত্ত্বাবধান, মূল্যায়ন ও সম্পদ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে একটি সমাজকল্যাণমূলক কার্যসূচিকে কার্যকর করে তোলে। সামাজিক প্রশাসনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো দায়িত্ব বণ্টন, বাজেট ব্যবস্থাপনা, মানবসম্পদ নিয়ন্ত্রণ এবং নীতি নির্ধারণের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদন করে। ফলে সমাজকর্মীদের কাজ হয় আরও লক্ষ্যভিত্তিক এবং নির্ভুল।

  • সামাজিক গবেষণা সমাজকর্মের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক পদ্ধতি, যা সমস্যা চিহ্নিতকরণ, প্রয়োজন নির্ধারণ, তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও সমাধান নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যে কোনো সমাজ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবতার উপর দাঁড়িয়ে নির্মিত হওয়া প্রয়োজন, আর সেই বাস্তবতার তথ্য সরবরাহ করে সামাজিক গবেষণা। এটি সমাজের বর্তমান পরিস্থিতি বুঝতে সাহায্য করে, যেমন—দারিদ্র্য, বেকারত্ব, অসাম্য, স্বাস্থ্যঝুঁকি, মাদকাসক্তি বা নির্দিষ্ট কোনো গোষ্ঠীর সংকট। গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য সমাজকর্মীদের কার্যপরিকল্পনা তৈরি করতে সহায়তা করে এবং কাজের ফলাফল পরিমাপেও ব্যবহার হয়। এ কারণে সামাজিক গবেষণা সমাজকর্মের বৈজ্ঞানিক ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত।

  • সামাজিক কার্যক্রম সমাজকর্মের তৃতীয় সহায়ক পদ্ধতি, যা সরাসরি মানুষের কল্যাণে কাজ করার বাস্তবধর্মী অংশকে নির্দেশ করে। এই কার্যক্রমের মধ্যে থাকতে পারে সচেতনতা সৃষ্টি, প্রশিক্ষণ, পরামর্শ প্রদান, দুর্যোগ সহায়তা, স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছানো, শিশু ও নারীর অধিকার সুরক্ষা, কমিউনিটি মিটিং আয়োজন কিংবা সামাজিক আন্দোলন পরিচালনা। সামাজিক কার্যক্রম মূলত তৃণমূল পর্যায়ে মানুষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করে। এটি সমাজকর্মকে গতিশীল করে এবং বাস্তব ফলাফল দৃশ্যমান করে তোলে। একই সঙ্গে এটি সমাজকর্মীদের ফিল্ড-লেভেল অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি করে, যা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় মূল্যবান ভূমিকা রাখে।

এই তিনটি সহায়ক পদ্ধতি একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করে, অর্থাৎ একটি পদ্ধতি ছাড়া অন্যটি পুরোপুরি কার্যকর হতে পারে না। সামাজিক প্রশাসন পুরো ব্যবস্থাকে সংগঠিত করে, সামাজিক গবেষণা সমস্যা ও সমাধান নির্ণয়ে বৈজ্ঞানিক পথ দেখায়, আর সামাজিক কার্যক্রম সেই সমাধানকে বাস্তবে রূপ দেয়। ফলে সমাজকর্মের লক্ষ্য পূরণে তিনটি পদ্ধতিই অপরিহার্য এবং পরস্পরের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করে।

© LXMCQ, Inc. - All Rights Reserved

Developed by WiztecBD